৬ আগস্ট ২০২৩, রবিবার, ১১:৫৭

জুলাইয়ে সড়কে ঝরলো ৫৭৬ প্রাণ

জুলাইয়ে সারাদেশে ৫০৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৭৬ জন নিহত এবং ১ হাজার ৫৫ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। এ সময়ে ১৮০টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৯৫ জন, আর আহত হয়েছেন ১২২ জন। যা মোট দুর্ঘটনার ৩৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ, নিহতের ৩৮ দশমিক ৬১ শতাংশ ও আহতের ২৪ দশমিক ১৫ শতাংশ। গতকাল শনিবার সংগঠনটির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরীর সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সড়ক, রেল ও নৌ পথের দুর্ঘটনার সংবাদ পর্যবেক্ষণ করে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। যাত্রী কল্যাণ সমিতি বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, গত জুলাইয়ে রেলপথে ৪৭টি দুর্ঘটনায় ৪৮ জন নিহত ও ৫ জন আহত হয়েছে। নৌ-পথে ১৬টি দুর্ঘটনায় ২১ জন নিহত, আহত ১৫ এবং ৩৮ জন নিখোঁজ রয়েছে। সড়ক, রেল ও নৌ-পথে সর্বমোট ৫৬৮টি দুর্ঘটনায় ৬৪৪ জন নিহত এবং ১ হাজার ৭৫ জন আহত হয়েছেন। এ মাসে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে ঢাকা বিভাগে ১৫৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৭৩ জন নিহত ও ২৭১ জন আহত হয়েছেন। সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে বরিশাল বিভাগে, ২৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৮ জন নিহত ও ১৩৮ জন আহত হয়েছেন। সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে ১০ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ১৫৪ জন চালক, ৮৯ জন পথচারী, ৪২ জন পরিবহন শ্রমিক, ৩৬ জন শিক্ষার্থী, ৮ জন শিক্ষক, ১১৭ জন নারী, ৬৪ জন শিশু, ১ জন সাংবাদিক এবং ১০ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় মিলেছে। এদের মধ্যে নিহত হয়েছেন ১ জন সেনাবাহিনীর সদস্য, ৩ পুলিশ সদস্য, ১ নৌ বাহিনীর সদস্য, ১ বিজিবি সদস্য, ১ ফায়ার সার্ভিস কর্মী, ১১৯ জন বিভিন্ন পরিবহনের চালক, ৭৭ জন পথচারী, ৮২ জন নারী, ৪২ জন শিশু, ২৯ জন শিক্ষার্থী, ১৭ জন পরিবহন শ্রমিক, ৭ জন শিক্ষক ও ৭ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী।

দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণ করে যাত্রী কল্যাণ সমিতি জানায়, মোট দুর্ঘটনার ৩৮ দশমিক ৬১ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ৩০ দশমিক ৬৯ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ২৪ দশমিক ১৫ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়েছে। এছাড়া সারাদেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, শূন্য দশমিক ৩৯ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ও শূন্য দশমিক ৭৯ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংগঠিত হয়েছে।

ছয় মাসে ১৩৭ রেল দুর্ঘটনায় নিহত ১৩১: এদিকে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ১৩৭টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ১৩১ জন নিহত ও ১১০ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ফেব্রুয়ারিতে সর্বাধিক ৪৪টি দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত হয়েছেন যথাক্রমে ৩৭ জন ও আটজন। গতকাল শনিবার শিপিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন রিপোর্টার্স ফোরামের (এসসিআরএফ) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমন পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জানুয়ারিতে সবচেয়ে কম ১২টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ১৫ জন নিহত ও সাতজন আহত হয়েছেন। এসসিআরএফ জানায়, রেলপথ দুর্ঘটনার ওপর নিয়মিত পর্যবেক্ষণ চালিয়ে এবং ১২টি বাংলা জাতীয় দৈনিক, ৫টি ইংরেজি জাতীয় দৈনিক, ৯টি অনলাইন নিউজপোর্টাল ও সংবাদ সংস্থা ও ৬টি আঞ্চলিক দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এ পরিসংখ্যান তৈরি করা হয়েছে। ঢাকার গণমাধ্যমকর্মীদের সংগঠনটির পর্যবেক্ষণে রেলপথ দুর্ঘটনার জন্য ৯টি প্রধান কারণ চিহ্নিত করা করেছে। এসসিআরএফর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মার্চে ১৮টি দুর্ঘটনায় ১৫ জন নিহত এবং পাঁচজন আহত হয়েছেন। এপ্রিলে ১৭টি দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতের সংখ্যা যথাক্রমে ২০ ও ৬৯। মে মাসে দুর্ঘটনা ঘটেছে ২৪টি। এতে ২৫ জন নিহত ও আটজন আহত হয়েছে। জুনে ২২টি রেলপথ দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতের সংখ্যা যথাক্রমে ১৯ ও ১৩।

দুর্ঘটনার ৯ কারণ: রেল পরিবহন ব্যবস্থা ও দুর্ঘটনার ওপর পর্যবেক্ষণ চালিয়ে এবং বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে দুর্ঘটনার ৯টি কারণ চিহ্নিত করেছে এসসিআরএফ। সেগুলো হচ্ছে- কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা, সিগনালিং ব্যবস্থায় ত্রুটি, ঝুঁকিপূর্ণ রেলক্রসিং, ইঞ্জিনের সক্ষমতার অতিরিক্ত বগি সংযোজন, রেললাইনে পাথরের স্বল্পতা, ঝুঁকিপূর্ণ রেলসেতু, আধুনিক প্রযুক্তির অভাব, জনবল সংকট এবং নড়বড়ে ট্র্যাক তথা রেললাইনে নিম্নমানের স্লিপার ও ফিশপ্লেটসহ বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার। পর্যবেক্ষণে বলা হয়, সরকার রেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে। উন্নয়ন বাজেটেও অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। রেলপথ বাড়লেও দীর্ঘদিনের পুরনো লাইনগুলো ঠিকমতো সংস্কার না করায় দ্রুতগতির ট্রেন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এর ফলে কাক্সিক্ষত সুফল মিলছে না।

https://dailysangram.info/post/531897