২৬ জুলাই ২০২৩, বুধবার, ১২:২১

মশার ভয়ে হাত-পা গুটিয়ে আছেন কর্মকর্তারা

মেইন গেট খোলাই ছিল। ভেতরে ঢুকতেই এগিয়ে এলেন নিরাপত্তা প্রহরী। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি দেখিয়ে দিলেন দোতলার সিঁড়ি। কিন্তু দোতলার বেশিরভাগ কক্ষই খালি। চেয়ার-টেবিলও নেই। মেঝেতে পুরু ধুলোর আস্তর। রীতিমতো পরিত্যক্ত কয়েকটি কক্ষে ছড়িয়ে আছে ইঁদুর ও তেলাপোকার বিষ্ঠা। পুরো অফিস চত্বরে সুনসান নীরবতা।

দেশজুড়ে যখন মশার রাজত্ব। তখন সোমবার ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তরে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেল। দুপুর তখন ১২টা। অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামছুল ইসলামের চেয়ার ফাঁকা। আশপাশের অন্য কর্মকর্তাদের কক্ষগুলোও খালি। তবে একটি কক্ষে প্রশাসনিক কর্মকর্তা জামাল উদ্দিনকে পাওয়া গেল। তিনি আনমনে কম্পিউটারে কিছু একটা লিখছেন। তার কাছে প্রথম প্রশ্ন-‘আপনাদের অফিসে মশা নেই? জামালের সহজ উত্তর। অবশ্যই আছে। ডেঙ্গুর এই মৌসুমে তো আমরা রীতিমতো ভয়ে আছি।’ তাহলে মশক নিবারণী দপ্তরের এমন করুণ দশা কেন? এবার অনেকটাই নীরব জামাল উদ্দিন। বললেন, যদি কিছু জানতে চান আমার ওপরের স্যারদের কাছে যান। মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলার এখতিয়ার আমার নেই।

সরকারি ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান। কর্মরত জনবলের সংখ্যা ২৪১ জন। তবে নিজস্ব কার্যক্রম না থাকায় জনবলের একটি বড় অংশ দুই সিটি করপোরেশনে সংযুক্ত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৯৩ জন এবং উত্তরে আছেন ১০৬ জন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, আগে ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তরে কর্মচাঞ্চল্য ছিল। এখানে অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের মশক নিধন ওষুধ মজুত রাখা হতো। চাহিদা অনুযায়ী সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন আঞ্চলিক অফিসে ওষুধ ইস্যু করে মশক নিবারণী দপ্তর। কিন্তু ঢাকা সিটি করপোরেশন দুভাগ হয়ে গেলে মশক নিবারণী দপ্তরের কার্যক্রম গুটিয়ে যায়। দুটি সিটি করপোরেশন এখন নিজেদের তত্ত্বাবধানে ওষুধ গুদামজাত করে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, মশক নিবারণী দপ্তর ঘিরে নানা সময় সরকারের তরফে নানা পরিকল্পনার কথা শোনা যায়। কিন্তু বাস্তবে তার কিছুই হয়নি। সর্বশেষ এখানে একটি পরীক্ষাগার স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেটিও বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মশক নিবারণী দপ্তরকে পূর্ণাঙ্গ অধিদপ্তরে রূপান্তরের দাবি দীর্ঘদিনের। অফিসের নিজস্ব ভবন থেকে শুরু করে পর্যাপ্ত জনবল সবই আছে। কিন্তু যথাযথ পরিকল্পনার অভাবে এখনো এই দপ্তরকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। অথচ যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া হলে মশক নিবারণী দপ্তরের কার্যক্রম সারা দেশেই ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব। এখানে সহজেই মশার বংশ বিস্তার নিয়ে গবেষণাগার, পরীক্ষাগার এবং মশা নিয়ন্ত্রণে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজিত হতে পারে।

জানা যায়, সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী এ দপ্তরের প্রধান হিসাবে একজন চিকিৎসক পদায়নের কথা থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদায়ন করা হচ্ছে। কিন্তু তেমন কোনো কাজ না থাকায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বেশিরভাগ সময় মন্ত্রণালয়েই কাটিয়ে দেন। আবার এখানে পোস্টিং হলে অনেকেই হীনম্মন্যতায় ভোগেন। নিজেকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) মনে করেন কেউ কেউ। বর্তমানে মশক নিবারণী দপ্তরের নিজস্ব আধুনিক ভবন থাকলেও আগে এখানে টিনশেডের আধপাকা স্থাপনা ছিল। কয়েক বছর আগে এখানে ৬ তলা ভিত্তির ওপর দোতলা ভবন নির্মিত হয়। নিচতলায় গুদাম এবং দোতলায় কর্মকর্তাদের বসার জন্য অফিস কক্ষ আছে।

দপ্তরের ভারপ্রাাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামছুল ইসলাম মঙ্গলবার টেলিফোনে যুগান্তরকে বলেন, এই মুহূর্তে মশক নিবারণী দপ্তরের নিজস্ব কোনো কার্যক্রম নেই। তবে দপ্তরের আওতাধীন জনবল ঢাকা উত্তর এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে যুক্ত থেকে মশক নিধনে কাজ করছে। অবশ্য সরকার মশক নিবারণী দপ্তরকে সক্রিয় করার উদ্যোগ নিয়েছে। শিগগিরই মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী এর কার্যক্রম শুরু হবে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/700051