২৫ জুলাই ২০২৩, মঙ্গলবার, ১:২১

ঢাকায় ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে ডেঙ্গু

রাজধানী ঢাকায় ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি। মিনিটে মিনিটে রোগী আসছে হাসপাতালে। হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালগুলো। রাজধানীর বাইরেও সারাদেশে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। এডিস মশা বাহিত রেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ৯ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।

এ সময় এ রোগে আক্রান্ত হয়ে সর্বোচ্চ ২২৯৩ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। প্রতিদিন যেন আক্রান্ত রোগীর নতুন নতুন রেকর্ড গড়ছে। এ হিসেবে শুধু সরকারি পর্যায়ে। এর বাইরে হাজার হাজার ডেঙ্গু রোগী বেসরকারি ক্লিনিক, পাড়া মহল্লার হাসপাতাল ও বাসাবাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। চলতি জুলাই মাসের ২৪ দিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের খাতায় হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা পৌঁছেছে ২৭ হাজার ২৯২ জনে। চলতি বছরে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮৫ জনে। এর মধ্যে নারী ১০৫ জন এবং পুরুষ ৮০ জন মারা গেছেন। মোট মৃত্যুর মধ্যে ঢাকার বাইরে মারা গেছেন ৩৭ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড সংখ্যক ২ হাজার ২৯৩ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

গতকাল সোমবার সারা দেশের পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের নিয়মিত ডেঙ্গু বিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ২ হাজার ২৯৩ জনের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ১ হাজার ২৩৮ জন এবং ঢাকার বাইরে ১ হাজার ৫৫ জন। অর্থাৎ আগে রাজধানী ঢাকায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়লেও এখন সারাদেশে এই সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নতুন ২ হাজার ২৯৩ জনসহ বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সর্বমোট ভর্তি থাকা ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৪৬৩ জনে। ঢাকার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৪ হাজার ৩৯৫ জন এবং ঢাকার বাইরে ৩ হাজার ৬৮ জন। চলতি বছরের এ পর্যন্ত ৩৫ হাজার ২৭০ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ভর্তি রোগীর মধ্যে পুরুষ আক্রান্ত ২২ হাজার ৪১২ জন এবং নারী ১২ হাজার ৮৫৮ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২৭ হাজার ৬২২ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৬৬ জন এবং এ সময়ে মারা গেছেন ৬ জন। ফেব্রুয়ারি মাসে আক্রান্ত ১৬৬ জন এবং মারা গেছেন ৩ জন। মার্চ মাসে হাতপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১১১ জন এবং এপ্রিলে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৪৩ জন এবং মারা গেছেন ২ জন। মে মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এক হাজার ৩৬ জন এবং মারা গেছেন ২ জন। জুন মাসে ৫ হাজার ৯৫৬ জন আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন এবং মারা গেছেন ৩৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী। জুলাই মাসে ডেঙ্গু শনাক্ত ২৭ হাজার ২৯২ জন; এ সময়ে মারা গেছেন ১৩৮ জন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা আরো বেশি হবে। কারণ অনেক ডেঙ্গু রোগী বাসায় থেকে চিকিৎসা নেন, তাদের হিসাব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে নেই। রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ি, শনির আখড়া, শ্যামপুর, কদমতলীয়, ধনিয়া, জুরাইনসহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে শত শত ডেঙ্গু রোগী স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে ভীড় করছেন। অনেক ক্লিনিকে ডেঙ্গু রোগী ও তাদের স্বজনদের ভীড়ে পা ফেলানোর যায়গা নেই। এসব রোগীর হিসেবে সরকারি খাতা তথা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেবে নেই।

https://dailyinqilab.com/national/article/589826