২৪ জুলাই ২০২৩, সোমবার, ১২:৪৭

বরেন্দ্র অঞ্চলে প্রচন্ড খরায় জমি ফেটে চৌচির

বরেন্দ্র অঞ্চলে খরায় রোপা-আমনের জমি ফেটে চৌচির হয়ে পড়েছে
বাগমারা (রাজশাহী) সংবাদদাতা: বরেন্দ্র অঞ্চল নামে খ্যাত রাজশাহীর বাগমারায় বৃষ্টির ভরা মৌসুমে বৃষ্টির কোন দেখা মিলছে না। প্রচন্ড খরায় রোপণকৃত রোপা-আমন জমি ফেটে চৌচির হয়ে পড়েছে। বৃষ্টির অভাবে অনেক জমি চাষ দিতে পারেনি কৃষকরা। অতিরিক্ত খরার কারণে রোপা-আমন চাষ নিয়ে কৃষকরা বিপাকে পড়েছেন। মৌসুমের বৃষ্টির উপর অনেকটা রোপা-আমন ধান চাষ নির্ভরশীল। কিন্তু এবারে বৃষ্টির অভাবে কৃষকরা রোপা-আমন চাষ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। বৃষ্টির অভাবে সেচ দিয়ে চাষ আবাদ করতে হচ্ছে। পানি সংকটে রোপণকৃত জমি ফেটে চৌচির হয়ে ধান মরে যাচ্ছে। এছাড়া সেচ কাজের ভাড়া, সার, কীটনাশক ও শ্রমিকের মূল্য বৃদ্ধি অন্যদিকে সেচযন্ত্রের ভাড়া দিতে কৃষকরা বেসামাল হয়ে পড়েছে। লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে আবারো রোপা-আমন চাষে নেমেছে। ধানের মূল্য হ্রাসে উৎপাদন খরচ জুটছে না। ফলে কৃষকরা ধানের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে মূলধন হারিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। অনেকেই মহাজন ও ব্যাংক ঋণের টাকায় ফসল করে ন্যায্য মূল্য না পেয়ে ভিটে মাটি বিক্রি করে নিঃস্ব হতে বসেছেন। কৃষককের দাবি কৃষি উৎপাদনের প্রধান উপকরণ সার, ডিজেল ও কীটনাশকের দাম বাড়ছে প্রতিনিয়তই কিন্তু কৃষকদের কৃষি পণ্যের দাম বাড়ছে না। এতে কৃষি ফসল উৎপাদন করে বেশি লোকসান গুনছেন। দু’ দফা সার দাম বেড়েছে। সরকার গ্রাম পর্যায়ের কৃষকদের কথা না ভেবে কৃষি উপকরণের দাম বাড়িয়ে চলেছে। গ্রামের কৃষকদের অবলম্বন কৃষি। অন্য কোন উপায় না থাকায় বাধ্য হয়ে আদি পেশা কৃষি উৎপাদনে মওসুমে রোপা-আমন চাষ অব্যাহত রেখেছেন।

জানা যায়, এ এলাকার লোক কৃষির উপর নির্ভরশীল। প্রতি বছরের ন্যায় কৃষকরা এবারেও বুক ভর আশা নিয়ে কৃষি কাজে নামে। উপজেলার বালানগর গ্রামের কৃষক আলতাফ হোসেন জানান, চার যুগ ধরে তিনি কৃষি কাজ করে আসছেন। কিন্তু এ বছরের ন্যায় এত ধানের লোকসানের মুখ কখনও তিনি দেখেননি। তিনি জানান, পেঁয়াজ, ধান, পাট, সবজির দাম কমছে। অন্য দিকে বাড়ছে সার, কীটনাশক ডিজেলসহ কৃষি উপকরণের দাম। এ অবস্থায় মওসুমে আবারো রোপা-আমন চাষ করতে হবে।

মহাজনেরর ঋণের টাকা পরিশোধ করতে পারিনি এ অবস্থায় ধান চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে অনেক কৃষকই। পাওয়ারটিলারের ডিজেল খরচ, শ্রমিক খরচ দিয়ে ১ বিঘা জমিতে ১৭/১৮ হাজার টাকা খরচ হয়। যে ধান ১৪০০/- টাকা থেকে ১৫০০/- টাকায় বিক্রি হবার কথা তা না হয়ে মাত্র ১০০০/- টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। ধান উৎপাদনে উপকরণের দাম বৃদ্ধিতে ক্যাশ টাকা ফুরিয়ে ঋণের জালে আটকা পড়ে দিশেহারা হচ্ছেন গ্রামের কৃষকরা। একইভাবে নন্দনপুর গ্রামের কৃষক আজগর জানান, গত বছর ধানের ভালো ফলন ও দাম পেয়ে বেশি লাভের আসায় এবারে বেশি আমন-রোপা ধান চাষে করতে গিয়ে ব্যাপক ক্ষতিতে পড়েছেন। ৩ বিঘা ধান চাষে ৩০ হাজার টাকা তার লোকসান গুনতে হবে বলে তিনি শঙ্কা প্রকাশ করেন। এবারে ধানের চাষে গত বারের তুলনায় বেশি খরচ হবে জেনে তিনি শুধুমাত্র খাবার পরিমাণ ধান চাষ করবেন বলে জানান।

https://dailysangram.info/post/530773