২১ জুলাই ২০২৩, শুক্রবার, ৬:১৭

ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুর মৃত্যু

মায়ের কান্নায় ভারী হয়ে উঠল ঢাকা মেডিক্যালের বাতাস

আট বছরের ছেলে আহনাফকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে কাঁপতে কাঁপতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসে মা রুপা আক্তার। জরুরি বিভাগের ভিড় ঠেলে চিকিৎসকদের ডাকতে থাকেন তিনি। ততক্ষণে অন্য রোগীদের স্বজন ও আশপাশের মানুষ তাদের চারপাশে ভিড় জমায়। বুকের মধ্যে থেকে ছেলের মাথা বের করে ডাকতে থাকেন ‘ ও বাজান কথা বলো, একটু আগেও তো কথা বলছো বাবা, কথা বলো, চোখ খোলো বাজান’। কিন্তু মায়ের ডাকে সাড়া না দেয়ায় চিৎকার দিয়ে কাঁদতে শুরু করেন রুপা। তার কান্নায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। ছেলেকে বুকে জড়িয়ে বার বার চিৎকার করে দিতে থাকেন ওই মা। বলতে থাকেন ‘ আমার ছেলে কথা কয় না কেন, ও বাবা ওঠো কথা বলো’। কিন্তু তার ডাকে কোনো সাড়া দিচ্ছিল না শিশুটি। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আগেই মৃত্যুর কোলে পড়েছিল আহনাফ।

স্বজনরা জানান, চার দিন আগে জ্বরে আক্রান্ত হয় আহনাফ। চিকিৎসক ডেঙ্গু পরীক্ষা দিলে পজেটিভ আসে। এরপর তাকে ভর্তি করা হয় লালবাগের চান্দিনা শিশু হাসপাতালে। অবস্থার অবনতি হলে গতকাল ওই হাসপাতাল থেকে আহনাফকে রিলিজ দেয়া হয়। সেখান থেকে তার মা ও স্বজনরা বিকেল ৪টার দিকে আহনাফকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন। কিন্তু আনার পর থেকে আহনাফ আর কথা বলছিল না। তাকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে মা রুপা আক্তার বার বার কথা বলানোর চেষ্টা করছিলেন। জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক এসে পরীক্ষা করে দেখেন আহনাফ আর বেঁচে নেই। আগেই মারা গেছে’। এ কথা শুনার পর মায়ের আহাজিরতে ওই এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। শিশুটির মা জ্ঞান হারিয়ে ফেলায় স্বজনরা তার মাথায় পানি দিয়ে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছিলেন। হুশ হয়ে চিকিৎসকদের জড়িয়ে ধরে বলছিলেন ‘ও ভাই ছেলে কথা কয় না কেন, চার দিন আগে জ্বর হইছে। তাই বলে কথা বলবে না কেন। ও বাজান তুমি কথা বলো, তোমাকে কুরআনে হাফেজ বানাব মাদ্রাসায় ভর্তি করেছি। তুমি হাফেজ হবা না. ওঠো’। তাকের সান্ত্বনা দেবার ভাষা পাচ্ছিলেন না চিকিৎসকরাও।

লালবাগ থানার খাজা দেওয়ান ফার্স্ট লেনে বাবা-মায়ের সাথে থাকতো শিশু আহনাফ। ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুটিকে মেডিক্যালের জরুরি বিভাগে নিয়ে এলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। কোনো অভিযোগ না থাকায় তার লাশ পরিবারে সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/763830