২১ জুলাই ২০২৩, শুক্রবার, ৬:১৩

২০ দিনে ডেঙ্গুতে ১০৮ জনের মৃত্যু হাসপাতালে ভর্তি প্রায় ২০ হাজার

২৪ ঘণ্টায় ৯ জনের প্রাণহানি

লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি। ঢলের মতো মিনিটে মিনিটে রোগী আসছে হাসপাতালে। এতে হিমশিম অবস্থা হাসপাতালগুলোর। গত ২৪ ঘণ্টায় ৯ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। জুলাই মাসের ২০ দিনে ১০৮ জনের মৃত্যু এবং হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা পৌঁছেছে ১৯ হাজার ৫৬৯ জনে। চলতি বছরে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫৫ জনে। এর মধ্যে নারী ৮৯ জন এবং পুরুষ ৬৬ জন মারা গেছেন। মোট মৃত্যুর মধ্যে ঢাকার বাইরে মারা গেছেন ৩৪ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৭৫৫ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

গতকাল সারা দেশের পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের নিয়মিত ডেঙ্গু বিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ১ হাজার ৭৫৫ জনের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৮৪৫ জন এবং ঢাকার বাইরে ৯১০ জন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নতুন ১ হাজার ৭৫৫ জনসহ বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সর্বমোট ভর্তি থাকা ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৯৩৭ জনে। ঢাকার ৫৩টি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৩ হাজার ৫২২ জন এবং ঢাকার বাইরে ২ হাজার ৪১৫ জন। চলতি বছরের এ পর্যন্ত ২৭ হাজার ৫৪৭ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ভর্তি রোগীর মধ্যে পুরুষ আক্রান্ত ১৭ হাজার ৪৪৩ জন এবং নারী ১০ হাজার ১০৪ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২১ হাজার ৪৫৫ জন।
অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৬৬ জন এবং মারা গেছেন ৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে আক্রান্ত ১৬৬ জন এবং মারা গেছেন ৩ জন, মার্চে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১১১ জন এবং এপ্রিলে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৪৩ জন এবং মারা গেছেন ২ জন। মে মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৩৬ জন এবং মারা গেছেন ২ জন। জুন মাসে ৫ হাজার ৯৫৬ জন এবং মারা গেছেন ৩৪ জন। জুলাই মাসে শনাক্ত ১৯ হাজার ৫৬৯ জন এবং মারা গেছেন ১০৮ জন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা আরও বেশি হবে। কারণ অনেক ডেঙ্গু রোগী বাসায় থেকে চিকিৎসা নেন, তাদের হিসাব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে নেই।

এদিকে , ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা দেরিতে হাসপাতালে আসায় মৃত্যুঝুঁকি বাড়ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ডা. আবুল বাশার খুরশীদ আলম। ঢাকার এফডিসিতে ডেঙ্গু প্রতিরোধে নাগরিক সচেতনতা নিয়ে এক ছায়া সংসদে তিনি এ কথা জানান। ডেঙ্গুর বর্তমান পরিস্থিতিতে জরুরি অবস্থা জারি অথবা মহামারি ঘোষণা করার মতো কোনো অবস্থা ঘটেনি বলেও এ সময় উল্লেখ করে তিনি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশনের ভূমিকা নিয়ে পারস্পরিক দোষারোপ না করে সারা বছর ধরেই প্রতিরোধ কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। তিনি বলেন, গত বছর ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল প্রায় ১৬ হাজার, অথচ এ বছর ইতোমধ্যে প্রায় ১৮ হাজার ছাড়িয়েছে। ডেঙ্গুতে অসহায় পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তির মৃত্যুতে জরিমানা আদায়কৃত অর্থ ও সিটি করপোরেশনের বিশেষ তহবিল থেকে সহায়তা দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে।

ঢাকা মেডিকেল ও সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে জায়গা না থাকার কথা বলে ডেঙ্গু রোগী ফিরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে বলেও জানান তিনি। ডা. খুরশীদ আলম বলেন, বেসরকারি সব হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষার এনএস-১ টেস্ট ফি ৩ শত, আইজিজি টেস্ট ফি ৩ শত, আইজিএম টেস্ট ফি ৩ শত ও সিবিসি টেস্ট ফি ৪ শত টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যান্য টেস্ট ফি, বেড ভাড়াসহ বিবিধ খরচ নির্ধারণে নীতিমালা তৈরি হচ্ছে।

মহাপরিচালক বলেন, বেসরকারি হাসপাতালের মালিকরা এর জন্য একমাস সময় চেয়েছেন। তবে শুধু আইন দিয়ে নয়, মানবিক মূল্যবোধের মাধ্যমে বিবেকবান মানুষ হিসেবে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা উচিত।

https://dailysangram.info/post/530454