১৮ জুলাই ২০২৩, মঙ্গলবার, ১২:১০

বাড়ছে পদ্মা-যমুনার পানি

তিস্তাসহ উত্তরাঞ্চলের নদ-নদীর পানি কিছুটা কমলেও বাড়ছে যমুনা ও পদ্মার পানি। বৃষ্টি ও ভারতের ঢলে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি হু হু করে বাড়ছে। ইতোমধ্যে সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ এলাকায় যমুনার পানি বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। পানি বিদদসীমার কাছে থাকায় জেলার অভ্যন্তরীণ করতোয়া, ফুলজোড়, ইছামতি, বড়ালসহ অন্যান্য নদী ও খাল-বিলের পানি বাড়ায় নিম্নাঞ্চলর প্লাবিত হচ্ছে। অন্যদিকে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় পদ্মা নদীর পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাচ্ছে। গতকাল পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির উচ্চতা পরিমাপ করা হয় ১০ দশমিক ৩ মিটার। ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে পদ্মায় পানি বেড়েছে ২৬ সেন্টিমিটার। পানি বেড়ে যাওয়ায় পদ্মার চর এবং দু’কূলে জমি ও ফসল তলিয়ে যাচ্ছে। এতে করে কৃষকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি কমে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। গত চার পাঁচদিন ধরে বন্যার পানি অবস্থান করায় পানিবন্দি মানুষ শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কটে ভুগছে। দেখা দিয়েছে গো-খাদ্য ও তীব্র জ্বালানী সঙ্কট।

সিরাজগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, যমুনা নদীর পানি হু হু করে বাড়ছে। ইতোমধ্যে সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ এলাকায় যমুনার পানি বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনার পানি হু হু করে বাড়তে থাকায় নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। পানির স্রোতে নদী-তীরবর্তী অঞ্চল কাজীপুর, সদর, বেলকুচি, শাহজাদপুর, এনায়েতপুর ও চৌহালীতে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনে ঘর-বাড়ি, ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হতে দেখা গেছে। ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পক্ষ থেকে বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে।

গতকাল সকালে সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্টে যমুনা নদীর পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৭২ মিটার। গত ২৪ ঘণ্টায় ১১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে, কাজিপুরের মেঘাই ঘাট পয়েন্টে পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১৪ দশমিক ৩১ মিটার। ২৪ ঘণ্টায় ১২ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৪৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর পানি বেড়ে প্লাবিত হচ্ছে জেলার ৫ উপজেলার যমুনা অভ্যন্তরের চরাঞ্চলের গ্রামগুলো। ফসলের মাঠ তলিয়ে বসতবাড়িতেও পানি উঠছে। ফলে সদরের কাওয়াকোলা, কাজিপুরের স্পার বাঁধ, চৌহালী উপজেলার বাঘুটিয়া ও শাহজাদপুরের খুকনী এবং জালালপুর ইউনিয়নে দেখা দিয়েছে তীব্র নদীভাঙন।

কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা জানান, নদ-নদীর পানি কমে গেলেও কমেনি মানুষের ভোগান্তি। ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, দুধকুমার, ধরলা সহ সবক›টি নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে এখনো নি¤œাঞ্চলে পানি অবস্থান করায় মাঠের ফসল নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে কৃষক। জেলা মৎস কর্মকর্তা কালিপদ রায় জানান, চলতি বন্যায় এখন পর্যন্ত ৬৫০টি পুকুরের ১৩০ মেট্রিক টন মাছ ভেসে গেছে।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক কৃষিবিদ বিপ্লব কুমার মোহন্ত জানান, বন্যার কারণে মাঠে অবস্থিত ফসলের মধ্যে ১ হাজার ৪৮৭ হেক্টর ফসল নিমজ্জিত হয়েছে। এরমধ্যে শাক-সবজি ২৬২ হেক্টর, আউশ ধান ২৪৪ হেক্টর, বীজতলা ৩৮০ হেক্টর, কলা ২০ হেক্টর এবং পাট ৫৮১ হেক্টর। এরমধ্যে শাকসবজি পুরোটাই বিনষ্ট হয়ে গেছে। পানি নেমে গেলে বাকি ফসলের ততটা ক্ষতি হবে না।

জেলা শিক্ষা অফিসার শামসুল আলম জানান, বন্যার কারণে ১১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ২৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্লাবিত হওয়ায় সেখানে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। এদিকে জেলা ত্রাণ ও পূনর্বাসন অফিস তার সরবরাহকৃত তথ্যে জানিয়েছে, চলতি বন্যায় ৪৫টি ইউনিয়নের ১৮৫টি গ্রাম সম্পূর্ণ বা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে বন্যা কবলিত হয়েছে ৬১ হাজার ৪৫জন মানুষ। জেলার ৩৬১টি আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে ২১টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১৮০টি পরিবারের ৩শ’জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। এখন পর্যন্ত ২২ হাজার পরিবারকে ত্রাণ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।

পাবনা জেলা সংবাদদাতা জানান, জেলার ঈশ্বরদী উপজেলায় পদ্মা নদীর পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাচ্ছে। গতকাল পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির উচ্চতা পরিমাপ করা হয় ১০ দশমিক ৩ মিটার। ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে পদ্মায় পানি বেড়েছে ২৬ সেন্টিমিটার। এছাড়া প্রতিদিন পানি বাড়ছে গড়ে ৫-২৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত। পানি বেড়ে যাওয়ায় পদ্মার চর এবং দু’কূলে জমি ও ফসল তলিয়ে যাচ্ছে। এতে করে কৃষকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক।

গত ১৫ জুন থেকে পদ্মার পানি বাড়ছে। ১৭ জুলাই পর্যন্ত একমাসে পদ্মায় পানি বেড়েছে ৫ দশমিক ৯০ মিটার। এদিকে পদ্মায় পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এলাকার অসংখ্য কৃষকের আবাদি ফসল তলিয়ে গেছে। উপজেলার সাঁড়া ইউনিয়নের পদ্মা নদীর মাঝে জেগে ওঠা মোল্লার চর, বিলবামনি, সাহেবনগর চরসহ আশপাশের চর ও ফসলি জমি ডুবতে শুরু করেছে। চরের আখ ও তিলের জমিতে পানি উঠে গেছে। মাজদিয়া এলাকার কৃষক আমজাদ হোসেন বলেন, মধ্যবর্তী পদ্মার বিলবামনি চরে আমার তিন বিঘা আখের জমিতে পানি উঠে গেছে। এখন পর্যন্ত জমি পুরোপুরি তলিয়ে যায়নি। আখ তলিয়ে গেলে ক্ষতি হবে।

পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী ইলিয়াস হোসেন বলেন, ভারতে প্রচুর বৃষ্টিপাত, পাহাড়ি ঢল ও বন্যার কারণে পদ্মার পানি দ্রুত বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মায় পানি বেড়েছে ২৬ সেন্টিমিটার। এভাবে বাড়তে থাকলে পদ্মার পানি কয়েকদিনের মধ্যে বিপদসীমার কাছাকাছি চলে যাবে।

https://dailyinqilab.com/national/article/588275