১৮ জুলাই ২০২৩, মঙ্গলবার, ১২:০০

ডেঙ্গুতে রেকর্ড ৮ জনের মৃত্যু আক্রান্ত দেড় হাজারের বেশি

দেশজুড়ে এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর সংক্রমণ পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় মশাবাহিত রোগটিতে সারাদেশে রেকর্ড ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে মশাবাহী রোগটিতে এ বছর এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৪ জনে। একই সময়ে নতুন করে ১ হাজার ৫৮৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার ৪৬৭ জনে।

গতকাল সোমবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ডেঙ্গুবিষয়ক সর্বশেষ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে নতুন করে আরও এক হাজার ৫৮৯ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। নতুন ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে ৭৪১ জন ঢাকায় চিকিৎসাধীন। বাকি ৬৮৩ জন রাজধানীর বাইরে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এই সময়ে নতুন করে আরও ৮ জন মারা গেছেন। ফলে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৪ জনে।

বর্তমানে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সর্বমোট ৫ হাজার ৪৪১ জন ভর্তি আছেন। তাদের মধ্যে ঢাকার ৫৩টি ডেঙ্গু ডেডিকেটেড হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন তিন হাজার ৩৪৭ জন। এছাড়া ঢাকার বাইরে ২ হাজার৯৪ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, চলতি বছরের প্রথম দিন ১ জানুয়ারি থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মোট ২২ হাজার ৪৬৭ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ১৬ হাজার ৯১২ জন। আর চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ১১৪ জন। প্রতিবছর বর্ষাকালে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। ২০১৯ সালে দেশব্যাপী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন। ওই সময়ে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীসহ প্রায় ৩০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

এদিকে, সারা দেশে প্রতিদিন মোট কত সংখ্যক ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত ও মৃত্যু হয়েছে, সেই তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পেলেও মোট কত পরীক্ষার বিপরীতে এই শনাক্ত তা জানে না। অধিদপ্তরের এমআইএস বিভাগের লাইন ডিরেক্টর ডা. অধ্যাপক শাহাদাৎ হোসেন বলেন, টেস্টের তথ্যগুলো আমাদের কাছে আসে না। কোভিডের সময় এই হিসেব রাখা সম্ভব ছিল, কারণ তখন ডিজিটাল সিস্টেম ছিল। প্রতিটি সরকারি হাসপাতালেই ডাটা এন্ট্রি অপারেটর প্রোভাইড করেছিলাম। যে কারণে সেই সময়ে আমাদের সিস্টেমের মাধ্যমে পুরো তথ্যগুলো পেয়ে যেতাম। এই টোটাল প্রক্রিয়াটার জন্য অনেক জনবলের প্রয়োজন। বর্তমানে আমরা চেষ্টা করছি ভর্তি রোগীগুলোর তথ্য সরবরাহ করতে। আমরা জানি বাসায় অনেক রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন, সেগুলো কিন্তু এত বেশি উদ্বেগজনক নয়। আমাদের অটোমেশন সিস্টেম চালু হয় গেলে অটোমেটিক আমরা তথ্যগুলো পেয়ে যাব এবং আপনাদের জানাতে পারব।

ডা. শাহাদাৎ বলেন, বেসরকারি হাসপাতালগুলো আমাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল না। কোভিডের সময় থেকে তাদের থেকে আমরা তথ্য পাওয়া শুরু করি। আরও ৩০টি হাসপাতাল আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই ডেঙ্গু রোগীর তথ্য দেবে। এই তথ্যগুলো দেওয়ার জন্য আমরা সেই হাসপাতালগুলোকে ইতিমধ্যে ট্রেনিংয়েরও ব্যবস্থা করেছি। ক্রমান্বয়ে প্রতিটি বেসরকারি হাসপাতালই যেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে তথ্য দেয়, সেই ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, যে তথ্যগুলো আমরা নিয়মিত দেই, এর বাইরেও বেসরকারি কিছু তথ্য আমাদের কাছে আসে, কিন্তু সেগুলো ইনকমপ্লিট হওয়ায় আপনাদের দিতে পারি না। আমাদের শুধু কতজন রোগী ভর্তি আছে বা আক্রান্ত হয়েছে, সেগুলো পেলেই হয় না। আমাদের রোগীর নাম, বাবার নামসহ পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা নিতে হয়। এমনকি সেগুলো আবার সিটি কর্পোরেশনে পাঠাতে হয়। আশা করি ভবিষ্যতে রোগীদের বিস্তারিত তথ্য যোগানের বিষয়ে আমরা আরও উন্নতি করব।

এ সময় উপস্থিত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডা. রাশেদা সুলতানা বলেন, দেশে ডেঙ্গু সংক্রমণ পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হচ্ছে। তবে প্রতিটি হাসপাতালেই আমাদের ডেঙ্গু কর্নার আছে, ইনফরমেশন ডেস্ক আছে। ডেঙ্গু চিকিৎসায় যারা কাজ করছেন, তাদের আমরা ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করেছি। প্রতিটি হাসপাতালেই পর্যাপ্ত শয্যা প্রস্তুত রাখা আছে।
তিনি আরও বলেন, শুধু ডিএনসিসি ডেডিকেটেড ডেঙ্গু হাসপাতালেই ৮০০টি শয্যা রেখেছি। এছাড়া, মুগদা হাসপাতালে ৬০০টি শয্যা আছে, ঢাকা মেডিকেলে আছে ১২০টি শয্যা, সলিমুল্লাহ মেডিকেলে ১৯৫টি, শিশু হাসপাতালে ৪৪টি, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ১২০টি, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ২৫০টি, কুয়েত মৈত্রীতে ৭২টি শয্যা প্রস্তুত করা হয়েছে। এছাড়াও, ঢাকা সিটির বাইরে প্রতিটি উপজেলা হাসপাতাল থেকে শুরু করে মেডিকেল কলেজ পর্যন্ত ডেঙ্গুর জন্য আলাদা কর্নার এবং ডেঙ্গুর আলাদা শয্যা রেডি আছে। সুতরাং আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়লেও আমরা চিকিৎসা দিতে প্রস্তুত আছি।
চট্টগ্রামে আরও ৮৭ জন আক্রান্ত

চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেংগুতে নতুন করে আরও ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সোমবার (১৭ জুলাই) চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের হিসাবে এ নিয়ে চলতি বছর চট্টগ্রামে ডে্গংুতে ১৮ জনের মৃত্যু হলো।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘন্টায় ডেংগুতে মারা যাওয়া ওই দুইজনের একজন শিশু এবং অন্যজন নারী। তাদের মধ্যে একজন ১৫ বছর বয়সী। তার নাম মো. আলভী। তিনি নগরীর পাঁচলাইশ এলাকার বাসিন্দা। গত ১৬ জুলাই ডে্গংু আক্রান্ত হয়ে নগরীর বেসরকারি পার্কভিউ হাসপাতালে ভর্তি হন। গতকাল চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানেই তার মৃত্যু হয়। অন্যজন ৩৮ বছর বয়সী শারমিন হেনা রিতা। তিনি গত ১৫ জুলাই পার্ক ভিউ হাসপাতালে ডেংগু নিয়ে ভর্তি হন। ১৭ জুলাই সেখানেই তার মৃত্যু হয়।

এদিকে, গতকাল সোমবার ২৪ ঘন্টায় ডেংগু আক্রান্ত হয়েছে আরও ৮৭ জন।চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র বলছে, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে আরও ৮৭ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। চলতি বছরে এ পর্যন্ত ডেংগু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪৬৪জনে। এছাড়া শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ডে্গংুতে প্রাণ হারিয়েছেন ১৮ জন। গতকাল বিভিন্ন হাসপাতালে মোট ডে্গংু রোগী ভর্তি ছিল ৩৮০জন।

https://dailysangram.info/post/530224