১৬ জুলাই ২০২৩, রবিবার, ১২:৩৬

ঢামেকের মেঝেতেও ঠাঁই হচ্ছে না ডেঙ্গু রোগীদের

কুমিল্লার দাউদকান্দির বাসিন্দা মোশারফ হোসেন। ২৯ বছর বয়সী এই যুবক পেশায় ডেকোরেটার্স ব্যবসায়ী। গত সোমবার রাতে দাউকান্দি শহরের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অবস্থানকালে হঠাৎ তার শরীরে ব্যথা ও হালকা জ্বর শুরু হয়। সময় গড়াতে তার শরীরের ব্যথা ও জ্বরের তীব্রতা বাড়তে থাকে। বাসায় যাওয়ার সময় তিনি একটি ফার্মেসী থেকে জ্বর ও ব্যথার ওষুধ নিয়ে যান। ভোররাতে তার প্রচণ্ড জ্বর আসে। সকালে তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে পরীক্ষা করলে ডেঙ্গু পজেটিভ ও প্লাটিলেট ১ লাখের কাছাকাছি দেখা যায়। ওই হাসপাতালে দুদিন ভর্তি থাকার পর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনে ভর্তি করা হয়। এখন ঢামেকে তার চিকিৎসা চলছে।

প্লাটিলেট এখনো স্বাভাবিক অবস্থায় যায়নি। মোশারফ মানবজমিনকে বলেন, আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আশেপাশে ঝোঁপঝাড়ও নাই। বাড়িতেও মশা জন্মানোর মতো পরিবেশ নাই। তবুও আমি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছি। এই হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর দেখছি শ’ শ’ রোগী প্রতিদিন ভর্তি হচ্ছে।

আমার মতো শরীরের যন্ত্রণায় অনেককে কাতারাতে দেখেছি। শুধু মোশারফই নন সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলা থেকেও ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসে ভর্তি হচ্ছেন। একদিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার রোগী আর অন্যদিকে বিভিন্ন জেলার রোগীদের চাপে ঢামেকের মেডিসিন ওয়ার্ডগুলোতে পা ফেলার জায়গাটুকুও নেই। মেডিসিনের পুরুষ-নারীদের বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডের সবক’টি শয্যা রোগীতে পূর্ণ। প্রতিটি ফ্লোরের ওয়ার্ডের বাইরের সিঁড়ির পাশের ফাঁকা স্থানের মেঝেতে শত শত রোগী। প্রতিটা রোগীর সঙ্গে ২/৩ জন করে স্বজন আছেন। রোগী ও স্বজনের চাপে মেডিসিনের প্রতিটি ওয়ার্ড ও তার বাহিরে হিমশিম অবস্থা। অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক, নার্স, ব্রাদার, ওয়ার্ড বয়, পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ সংশ্লিষ্টরা।

ঢামেক সূত্র জানিয়েছে, দেশের সবচেয়ে বড় এই হাসপাতালটি সাধারণ রোগীদের শেষ ভরসাস্থল। সারা দেশ থেকেই চিকিৎসা নিতে এখানে রোগীরা আসেন। বছরের সবসময় মেডিসিন ওয়ার্ডগুলোতে রোগীর চাপ বেশি থাকে। মেডিসিনের রোগী বেশি হওয়াতে এই বিভাগের জন্য অনেকগুলো ডেঙ্গু ওয়ার্ড করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেশি হওয়াতে ডেঙ্গু রোগী ও মেডিসিনের অন্যান্য রোগীদের চাপ পড়েছে এসব ওয়ার্ডে। কিছুদিন আগেও ঢাকার ভেতরের রোগীরা ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বেশি ভর্তি হতো। কিন্তু কিছুদিন থেকে ঢাকার আশেপাশের জেলা থেকে অহরহ রোগী আসছেন। এতে করে মেডিসিন বিভাগের ওয়ার্ডে শয্যা সংকট দেখা দিয়েছে। একজন রোগী ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি গেলে একটি শয্যা ফাঁকা হয়। আর ওই একটি শয্যা পাবার আশায় ৫০ জন রোগী অপেক্ষায় থাকেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল প্যাথলজীর বিভাগীয় প্রধান ডা. আজিজ আহমেদ খান মানবজমিনকে বলেন, এর আগে কোনো বছরই ডেঙ্গু পরীক্ষার এত চাপ পড়েনি ঢামেকে। কিন্তু এ বছর আমরা রীতিমত হিমশিম খাচ্ছি। গত কয়েকদিনে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অন্তত দুই শতাধিক শিক্ষার্থীর ডেঙ্গু পরীক্ষা এখানে করা হয়েছে। ঢাকার বাহিরে থেকে যেসব রোগীরা এখানে ভর্তি হচ্ছেন তাদেরও ডেঙ্গুজনিত পরীক্ষার চাপ বেড়েছে। তিনি বলেন, ডেঙ্গুর ভয়াবহ পরিস্থিতি। যারাই আক্রান্ত হচ্ছেন তারা সহজেই ভালো হচ্ছেন না। সাময়িকভাবে ভালো হয়ে হাসপাতাল ছাড়লেও ভুগতে হচ্ছে অনেকদিন।

এদিকে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন মশক নিধনে মাসব্যাপী মোবাইল কোর্ট ও অভিযান অব্যাহত রেখেছে। গতকাল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ম্যাজিস্ট্রেট আকন্দ মো. ফয়সাল উদ্দীনের নেতৃত্বে কামরাঙ্গীচরের মাহাদীনগর এলাকায় অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে ৩৭টি বাড়ি পরিদর্শন করা হয়। এরমধ্যে ২টি নির্মাণাধীন বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা থাকায় ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) নিজেদের নির্মাণাধীন ভবনে এডিসের লার্ভা পাওয়ায় ৪ লাখ টাকা জরিমানা করেছে ডিএনসিসি’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। ডিএনসিসি’র মাসব্যাপী বিশেষ মশক নিধন অভিযানের সপ্তম দিনে এডিসের লার্ভা পাওয়ায় ১৪টি মামলায় মোট ৯ লাখ ৮৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।

https://mzamin.com/news.php?news=64852