১৫ জুলাই ২০২৩, শনিবার, ৮:৩২

মিরসরাইয়ে ঋণের কিস্তি পরিশোধে দিশেহারা জেলেরা

মাছের প্রজনন মৌসুম শুরু হওয়ায় ৬৫ দিনের জন্য সমুদ্রে মাছ ধরা বন্ধ রয়েছে। গত ২০ মে মধ্যরাত থেকে শুরু হয় হওয়া নিষেধাজ্ঞার ধারাবাহিকতায় সাগরে মাছ ধরা বন্ধ রেখেছে চট্টগ্রামের মিরসরাইসহ উপকূলীয় অঞ্চলের জেলেরা। নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সরকারের পক্ষ থেকে যে সহায়তা দেয়া হয়েছে তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল বলে দাবি করছেন জেলেরা। জেলেদের দাবি সরকারের দেয়া জুলাই মাসের ৩০ কেজি চাল এখনো পায়নি তারা।

মিরসরাই উপজেলা মৎস্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ২৯টি জেলে পাড়ায় নিবন্ধিত জেলে রয়েছে ২ হাজার ২৬ জন। আরো ৬০০ জেলে তালিকা নিবন্ধনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তবে তালিকাটি এখনো অনুমোদন পায়নি। ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার জন্য প্রত্যেক জেলে দুই দফায় ৮৬ কেজি চাল সহায়তা পাওয়ার কথা। নিষেধাজ্ঞাটি দুই অর্থবছরের মাঝামাঝি হওয়ায় চাল সহায়তাগুলো দুই দফা দেয়া হয়। প্রথম দফায় ৫৬ কেজি ও দ্বিতীয় দফায় ৩০ কেজি চাল দেয়া হয়ে থাকে। কিন্তু প্রথম দফায় ৫৬ কেজি চাল পেলেও দ্বিতীয় দফার ৩০ কেজি এখনো পায়নি জেলেরা।

উপজেলার ডোমখালী জেলে পাড়ার জেলে সুবল জলদাশ বলেন, স্থানীয় একটি এনজিও সংস্থা থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে জাল কিনেছি। কিন্তু সরকার ৬৫ দিনের মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে চরম কষ্ট হচ্ছে। দৈনিক ৩০০ টাকায় অন্য জনের কাছ থেকে একটি ব্যাটারি চালিত রিকশা ভাড়া নিয়ে টাকা জোগানের চেষ্টা করছি। এ ছাড়া সরকারের দেয়া জুলাই মাসের সহযোগিতা এখনো পাননি। তাই পরিবারে চার সদস্য নিয়ে সংসার চলছে অনাহারে অর্ধাহারে।

সাহেরখালী স্লুইসগেট এলাকায় কথা হয় বলরাম জলদাশের সাথে। তিনি বলেন, আগামী ২৩ জুলাই সাগরে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে। কিন্তু এখনো জেলেরা জুলাই মাসের চাল পায়নি। তাই দ্রুত জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত চাল বিতরণের দাবি জানান তিনি।
ষাটোর্ধ্ব বাবুল দাশ বলেন, গত তিন বছর ধরে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরের কারণে সাগরে আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না। তার ওপর এখন চলছে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা। কিছুদিন পর আবার ইলিশের কারণে মাছ ধরা বন্ধ থাকবে। এভাবে চলতে থাকলে এ পেশায় টেকা যাবে না।

উপজেলার ডোমখালী ও সাহেরখালী জেলে পল্লী ঘুরে দেখা গেছে, সাগর পাড়ে সারি সারি নৌকা বাঁধা রয়েছে। জাল ও নৌকা মেরামতের দিন শুরু করেছে জেলেরা। অনেক জেলে সাগরে বেঁধে রাখা নৌকা পাহারা দিচ্ছে। এ সময় কথা হয় অরুণ জলদাশে সাথে। তিনি বলেন, তার পরিবারে ছয়জন সদস্য রয়েছে। একটি এনজিও সংস্থা থেকে এক লাখ টাকা ঋণ নিয়ে বোটের মেরামত করেছি। মাছ ধরা বন্ধ থাকায় কিস্তি দিতে পারছি না। অনেক দেনা হয়ে গেছে।

এ দিকে নিষেধাজ্ঞার শুরু থেকে উপজেলা বিভিন্ন স্থানে সাগরে অভিযান চালায় উপজেলা প্রশাসন। সর্বশেষ গত ১১ জুলাই উপজেলার ডোমখালী এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুই হাজার বিভিন্ন ধরনের জাল জব্দ করা হয়। পরে জালগুলো উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা নাসিম আল মাহমুদের উপস্থিতিতে জালগুলো পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়।

মিরসরাই উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা নাসিম আল মাহমুদ জানান, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞায় প্রত্যেক জেলে পরিবারকে দুই দফায় ৮৬ কেজি চাল সহায়তা দেয়া হয়ে থাকে। প্রথম দফায় দুই হাজার ১২৬ জনকে চাল সহায়তা দেয়া হয়েছে। কিন্তু জুলাই মাসের চাল এখনো এসে পৌঁছেনি। আশা করা যায় আগামী সপ্তাহে চালগুলো বিতরণ করা যাবে।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/762323/