১১ জুলাই ২০২৩, মঙ্গলবার, ১২:০৬

অভিযানেও বেপরোয়া অপরাধীরা

চট্টগ্রামে র‌্যাব-পুলিশের অভিযানেও বেপরোয়া অপরাধীরা। ছিনতাই, চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজি, মাদক ব্যবসা, খুন, ধর্ষণ, ডাকাতি, দস্যুতার মতো ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত পাড়া-মহল্লা থেকে গ্রামেও বিস্তৃত হয়েছে। থামছে না মাদক কারবারিদের দৌরাত্ম। তুচ্ছ কারণে ঘটছে খুনের ঘটনা। অপরাধ দমনে বিগত এক মাস ধরে এই অঞ্চলে চলছে র‌্যাবের ‘রোবাস্ট পেট্রোলিং’। পুলিশও নিয়মিত অভিযান জোরদার করেছে। তারপরও লাগাম টানা যাচ্ছে না অপরাধীদের।

বিগত ছয় মাসে শুধু র‌্যাবের অভিযানেই ধরা পড়েছে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ৮৫৯ সন্ত্রাসী। অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে ৮৪টি আর গোলাবারুদ উদ্ধার হয় ৩১৭টি। এসময় পাঁচ লাখ ৮৬ হাজার ২৮০ পিস ইয়াবা, নয় হাজার ৫৫০ বোতল ভারতীয় ফেনসিডিলসহ বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়। গতকাল সোমবার র‌্যাব-৭ চট্টগ্রামের পক্ষ থেকে এসব তথ্য জানানো হয়।

র‌্যাব জানায়, ডাকাতি, ছিনতাই, আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি এবং কিশোর গ্যাংয়ের অপতৎপরতা রোধে গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় রোবাষ্ট পেট্রোলিং ও চেকপোস্টে তল্লাশি অভিযান চলছে। কর্মকর্তাদের দাবি এরফলে সাধারণ মানুষের মাঝে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরছে। বেশ কিছু অপরাধ দমনে কাজ করছে র‌্যাব। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- কিশোর গ্যাংয়ের লাগাম টানা। সাম্প্রতিক সময়ে কিশোর গ্যাংয়ের কর্মকা- একটি আলোচিত বিষয় এবং ভয়াবহ সামাজিক সমস্যা। অল্প বয়সী কিশোরেরাই এই সব গ্যাং বা গ্রুপের সদস্য। তারা পাড়া-মহল্লায় বিভিন্ন ক্লাব ও সংগঠনের মাধ্যমে নিজেদের সংঘবদ্ধ করে। নিজেদের ক্ষমতা প্রদর্শন করতে গিয়ে এই সব গ্রুপের সদস্যরা ঝগড়া, মারামারি দিয়ে শুরু করে। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে সন্ত্রাস, মাদক, ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি, হত্যা ও ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ে। কিশোর অপরাধের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। তাদের বেপরোয়া দৌরাত্ম্য সমাজের মানুষের জন্য যেন আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়াতে না পারে সেজন্য র‌্যাব গোয়েন্দা নজরদারী অব্যাহত রেখেছে। মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে ৫০টির অধিক কিশোর গ্যাং রয়েছে। গত ছয় মাসে ৮-১০টি কিশোর গ্যাংয়ের ৩৩ জন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

আধিপত্য বিস্তার ও তুচ্ছ ঘটনায় হত্যাকা-ের মতো ভয়ঙ্কর অপরাধে জড়িতদেরও পাকড়াও করছে র‌্যাব। অতিসম্প্রতি নগরীর পাহাড়তলীতে জোড়া খুন, পতেঙ্গায় পান বিক্রেতাকে হত্যা, আনোয়ারায় কলাপাতা নিয়ে ঝগড়ার জেরে হত্যা, পাওনাদারকে আটকে রেখে খুন, রাঙ্গুনিয়ায় এনজিও কর্মী কল্পনা চাকমাকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে। আর এসব নৃশংস ঘটনায় মূল হত্যাকারীসহ অপরাধীদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় র‌্যাব। নগরীতে ছিনতাইকারীদের দৌরাত্মও বেড়েছে। দেশের এই প্রধান বাণিজ্যিক নগরীতে মানুষজন অনেক রাত পর্যন্ত ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানা প্রয়োজনে চলাচল করে। রাত ১১টার পর থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম বেশি থাকে। ছিনতাইকালে সামান্য বাধা দিলেই ছিনতাইয়ের শিকার ব্যক্তিকে গুরুতর আঘাত করা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে ছিনতাইকালে হত্যার ঘটনাও ঘটছে। র‌্যাব-৭ গত ছয় মাসে মহানগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে অর্ধ শতাধিক ছিনতাইকারীকে হাতে নাতে আটক করতে সক্ষম হয়েছে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড় ও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার এবং বাঁশখালী সড়কে ডাকাতি ও দস্যুতার ঘটনা ঘটছে। এসব মহাসড়কে ডাকাতি, দস্যুতা প্রতিরোধে র‌্যাব নিয়মিত টহল কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি রোবাস্ট পেট্রোলিং অব্যাহত আছে। এসব এলাকা থেকে ছয় মাসে ৬৬ জন ডাকাতকে ৮৪টি আগ্নেয়াস্ত্রসহ পাকড়াও করা হয়েছে। র‌্যাব জানায়, নিত্য নতুন কৌশলে চাঁদাবাজি চলছে। দেখা যাচ্ছে, চাঁদাবাজরা সরাসরি চাঁদা নেওয়ার পরিবর্তে তাদের নির্দিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে উচ্চমূল্যে প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কিনতে বাধ্য করছে। সেটাও র‌্যাব নজরদারীতে নিয়ে এসেছে এবং অচিরেই তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে। মাদকের বিরুদ্ধেও অভিযান অব্যাহত আছে।

র‌্যাব কর্মকর্তারা আরো জানান, বড় বড় মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারের ফলে মাদকের বৃহৎ চালান উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে। তাতে মাদক পাচার কমে আসলেও কিছু কিছু খুচরা মাদক কারবারি নগরীর নির্জন ও পরিত্যক্ত স্থান এবং কিছু এলাকায় মাদক কেনা-বেচা করছে। মহানগরীর ফিরিঙ্গি বাজার, বাকলিয়া, অলংকার, হালিশহর, পতেঙ্গাসহ নগরীর ভেতরে বাহিরে অনেক মাদক সিন্ডিকেটের সদস্য ফ্ল্যাট বাড়ি ভাড়া নিয়ে মাদক ব্যবসা করছে। র‌্যাব গত ছয় মাসে পাঁচ লাখ ৮৬ হাজার পিস ইয়াবা, দুই হাজার ২শ’ কেজি গাঁজাসহ বিপুল পরিমাণ দেশি এবং বিদেশি মদ উদ্ধার করে। এ সময় গ্রেফতার হয়েছে ৩১৫ জন মাদক ব্যবসায়ী।

https://dailyinqilab.com/national/article/586581