৭ জুলাই ২০২৩, শুক্রবার, ১১:৪১

কাঁচা মরিচের ঝালের মধ্যেই আলুতে আঁচ!

দেশের বাজারে কাঁচা মরিচের পর এবার আলুর দামে আঁচ লেগেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরায় আলুর দাম কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর রামপুরা, কারওয়ান বাজার ও বাড্ডার বাজার ঘুরে এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

গত সপ্তাহে প্রতি কেজি আলু ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
দেড় মাস আগে প্রতি কেজি আলু ছিল ৩০ টাকা। বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সরবরাহে বড় ধরনের ঘাটতি না থাকলেও বাড়তি লাভের উদ্দেশ্যে ব্যবসায়ীরা আলুর দাম বাড়িয়েছেন।

ভোক্তাদের অভিযোগ, অসাধু ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে কাঁচা মরিচের পর এবার আলুর দাম বাড়াচ্ছেন। এসব ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় তাঁরা নানা অজুুহাতে পণ্যের দাম বাড়িয়ে যাচ্ছেন।

রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা আলুর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখন আলুর পাইকারি দাম প্রতি কেজি ৩৮ থেকে ৪০ টাকা। খুচরা ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ার সুযোগ নিয়ে প্রতি কেজি ৫০ টাকায় বিক্রি করছেন। তবে আলু প্রতি কেজি ৪৫ টাকায়ও বিক্রি করতে দেখা গেছে। বাজারে সাধারণত কার্ডিনাল বা ডায়মন্ড জাতের সাদা ও লাল আলু সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়ে থাকে।
দাম বাড়ার বিষয়ে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের পর পাইকারি বাজার থেকেই বেশি দামে আলু কিনতে হচ্ছে। তাই দাম কিছুটা বাড়তি। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখন মোকামেই আলুর দাম বেশি। এ কারণে বাড়তি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে।
রাজধানীর বাড্ডা বাজারের আলু ব্যবসায়ী জাফর উদ্দিন বলেন, ‘আলুর দাম দেড় মাস ধরেই বাড়ছে।

আগে আলু প্রতি কেজি ছিল ৩০ টাকা, সেটি কোরবানির ঈদের আগ ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হয়। ঈদের পর কেজিতে আরো ১০ টাকা বেড়ে এখন মানভেদে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি বাজারে দাম বাড়ার কারণে আমাদেরও বাড়িয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে।’

কারওয়ান বাজারের পাইকারি আলু ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ‘এখন মোকাম থেকেই বাড়তি দামে আলু কিনতে হচ্ছে। প্রতি কেজিতে খরচ পড়ে যাচ্ছে প্রায় ৩৬ টাকা। পরিবহনসহ সব খরচ মিলিয়ে ৪০ টাকার নিচে বিক্রি করা যাচ্ছে না।’
সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির বাজারদরের তালিকায় দেখা গেছে, এক বছরের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারে আলুর দাম বেড়েছে ৩৪ শতাংশের বেশি। গত বছরের এই সময়ে বাজারে আলুর কেজি ছিল ২৮ থেকে ৩০ টাকা, যা এ বছর ৩৮ থেকে ৪০ টাকা। টিসিবির এই দর অনুযায়ী গত এক সপ্তাহে আলুর দাম বেড়েছে ৩ শতাংশের মতো।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের হিসাব মতে, গত বুধবার পর্যন্ত হিমাগারে সংরক্ষিত আলুর রয়েছে ২৬ লাখ ৫৩ হাজার টন।
বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, ‘দেশে আলুর বড় কোনো সংকট নেই। সরবরাহ যা আছে, তাতে ডিসেম্বর পর্যন্ত ভালোভাবে চলবে। কিন্তু এর পরও বাজার ঊর্ধ্বমুখী। ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত মুনাফা করার প্রবণতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।’

কাঁচা মরিচের দাম এখনো ক্রেতার নাগালের বাইরে। গতকাল রাজধানীর বাজারগুলোতে খুচরায় প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ৪০০ থেকে ৪৮০ টাকায়। ২৫০ গ্রাম কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। কারওয়ান বাজারে পাইকারিতে বিক্রি হয়েছে এক হাজার ৬০০ টাকা পাল্লা (পাঁচ কেজি)। প্রতি কেজির দাম পড়ে ৩২০ টাকা। সরবরাহ আরো বাড়লে কাঁচা মরিচের দাম কমবে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

বাজারে মরিচের সরবরাহ বাড়াতে এখন বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে প্রতিদিনই কাঁচা মরিচ আসছে। দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে গতকাল ভারত থেকে এসেছে ৫৭ টন ২৫০ কেজি কাঁচা মরিচ।

গতকাল হিলি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দেশি কাঁচা মরিচ ৩২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে, যা বুধবার খুচরা বাজারে বিক্রি হয়েছে ২৮০ টাকা কেজি।

হিলি স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ২৬ জুন ভারতীয় পাঁচটি ট্রাকে ২৭ মেট্রিক টন, ৫ জুলাই ভারতীয় চারটি ট্রাকে ২৯ টন ৯৮০ কেজি এবং ৬ জুলাই ভারতীয় সাতটি ট্রাকে ৫৭ টন ২৫০ কেজি কাঁচা মরিচ আমদানি হয়েছে এই বন্দর দিয়ে।

৯০ ব্যবসায়ীকে ৬ লাখ টাকা জরিমানা : কাঁচা মরিচের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে অভিযানে নেমেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এই তদারকি অভিযানে সারা দেশে ৯০ ব্যবসায়ীকে ছয় লাখ পাঁচ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

গতকাল ভোক্তা অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঢাকা মহানগরসহ দেশের সব বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে একযোগে কাঁচা মরিচ ও চিনির মূল্য এবং মজুদসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য তদারকির লক্ষ্যে অভিযান পরিচালিত হয়। ঢাকায় অভিযান পরিচালনা করে দুটি টিম। অন্যান্য বিভাগীয় শহরসহ মোট ৩৬টি জেলায় একযোগে এই অভিযান পরিচালিত হয়। সব মিলিয়ে ৩৮টি বাজারের ৯০ জন ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হয়।

বাজারে খোলা চিনি প্রতি কেজি ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা ও সোনালি মুরগি ২৮০ টাকা। দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৭৫ থেকে ৮০ টাকা ও আমদানি করা পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৫৫ টাকা।

পেঁয়াজের দামের বিষয়ে রাজধানীর শ্যামবাজার পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও আমদানিকারক মো. আব্দুল মাজেদ বলেন, ‘পেঁয়াজের দামে কোনো পরিবর্তন নেই। আজ (গতকাল) পাইকারিতে দেশি পেঁয়াজ কেজি ৬০ টাকা এবং আমদানি করা পেঁয়াজ ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।’

বেগুন-টমেটোর দাম বেড়েছে : সপ্তাহের ব্যবধানে বেগুন, টমেটোসহ কিছু সবজির দাম বেড়েছে। বেগুন মানভেদে প্রতি কেজি ৭০ থেকে ১০০ টাকা, টমেটো ১৬০ থেকে ২০০ টাকা, ঢেঁড়স ৫০ থেকে ৬০ টাকা, করলা ১০০ টাকা, চিচিঙ্গা ও ধুন্দুল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা ও পটোল ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচকলা হালি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, লাউ প্রতিটি ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

https://www.kalerkantho.com/online/national/2023/07/07/1296297