৭ জুলাই ২০২৩, শুক্রবার, ১১:৩৫

কমেছে আমদানি উৎপাদনে প্রভাব পড়ার শঙ্কা

বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের কারণে পণ্য আমদানি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। সেজন্য নানা পদক্ষেপ নিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে বাধার মুখে পড়েন ব্যবসায়ীরা। ফলে শিল্পের কাঁচামালসহ বেশকিছু পণ্য আমদানি ও ব্যয় কমে গেছে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্য আমদানি ব্যয় আগের অর্থবছরের চেয়ে কমেছে প্রায় ১০ শতাংশ।
একইসঙ্গে আমদানি পণ্যের পরিমাণ কমেছে ৪ শতাংশের মতো। আমদানি কমে গেলে দেশের উৎপাদনমুখী শিল্পখাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কর্মসংস্থান ও শিল্পের প্রবৃদ্ধি কমতে পারে বলেও মনে করেন বিশ্লেষকরা। কারণ, দেশে পণ্য আমদানি বাড়লে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও বেড়ে যায়। এতে উৎপাদন যেমন বাড়ে, তেমনি কর্মসংস্থানও বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে আমদানি কমলে বিশেষ করে শিল্পের কাঁচামাল আমদানি ব্যাহত হলে উৎপাদন কমে যায়।

এতে রপ্তানি আয়ও কমে যাওয়ার শঙ্কা থাকে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, শিল্পের কাঁচামালের আমদানি কমে যাওয়া অর্থনীতির জন্য ভালো নয়।

কাস্টম হাউসের তথ্য বলছে, সদ্য বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্য আমদানি হয়েছে ১৩ কোটি ৩১ লাখ টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ১৩ কোটি ৮২ লাখ টন। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে আমদানি পণ্যের পরিমাণ কমেছে ৫১ লাখ টন বা ৩ দশমিক ৭১ শতাংশ। তবে খরচের হিসাবে আমদানি কমেছে ১০ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৭ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ৮ হাজার ৭৬৪ কোটি ডলারের। শুল্কায়ন মূল্য ধরে এই হিসাব করা হয়েছে। তবে ঋণপত্রের মূল্য হিসাব করা হলে খরচের কিছুটা কম-বেশি হতে পারে। আমদানির এই হিসাব দেশের ৩৯টি কাস্টম হাউস ও শুল্ক স্টেশনের। এসব কাস্টম হাউস ও শুল্ক স্টেশন দিয়ে ৯৫ শতাংশের বেশি পণ্য আমদানি হয়।

পরিমাণে কম-বেশি হলেও পণ্য আমদানি কমার তালিকাটি এবার বেশ বড়। এই তালিকায় যেমন রয়েছে শিল্পের কাঁচামাল, তেমনি রয়েছে বিলাস পণ্য ও বাণিজ্যিক পণ্য। সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে পুরোনো লোহার টুকরার আমদানি ব্যয় কমেছে প্রায় ২৭ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রায় ২০০ কোটি ডলারের পুরোনো লোহার টুকরা আমদানি হয়েছে। আর ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ২৭৩ কোটি ডলারের। আমদানি কমার পাশাপাশি বিশ্ববাজারে পণ্যটির দাম কমে যাওয়ায় আমদানি ব্যয় এবার বেশি কমেছে। একইভাবে পুরোনো জাহাজের আমদানি অর্ধেকে নেমেছে। সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে ৫৩ কোটি ডলারের পুরোনো জাহাজ আমদানি হয়, যা আগের অর্থবছরে ছিল ১১০ কোটি ডলার।

সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে প্লাস্টিক শিল্পের কাঁচামাল ও সরঞ্জাম আমদানি হয় ২৩৪ কোটি ডলারের। ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ২৭৩ কোটি ডলারের। আমদানি ব্যয় কমার পাশাপাশি এ পণ্যের আমদানির পরিমাণও কমেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমদানি হয় ১৩ লাখ ৭৮ হাজার টন, আগের অর্থবছরে যার পরিমাণ ছিল ১৬ লাখ ৩৫ হাজার টন। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য গম, চিনি, সয়াবিন তেল ও সয়াবিন তৈরির কাঁচামাল সয়াবিন বীজের আমদানিও কমেছে। তবে পাম তেলের আমদানি বেড়েছে। বিলাস পণ্য ফল ও বাদামের আমদানিও কমেছে এবার। যেমন ফলমূল ও বাদাম জাতীয় পণ্য এবার আমদানি হয়েছে ৭ লাখ ৯৮ হাজার টন, যা গত বছরের তুলনায় ২ লাখ টন কম।

এ ছাড়া কমেছে যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ আমদানিও। ২০২২-২৩ অর্থবছরে যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ আমদানি হয়েছে ১ হাজার ১৯৮ কোটি ডলারের। ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ১ হাজার ৩১৩ কোটি ডলার। সেই হিসাবে যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ আমদানি প্রায় ৯ শতাংশ কমেছে। বস্ত্রশিল্পের কাঁচামাল তুলা আমদানিও কমেছে। অবশ্য আমদানি কমলেও আমদানি ব্যয় প্রত্যাশিত মাত্রায় কমেনি। যেমন সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে তুলা আমদানি প্রায় ১৭ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ২৪ হাজার টন। তবে আমদানি ব্যয় কমেছে প্রায় ৭ শতাংশ। গত অর্থবছরে তুলা আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ৪১৫ কোটি ডলার।

এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি’র বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমদানি যে কমেছে তা উৎপাদন ও ভোগের নেতিবাচক প্রভাব দেখে বোঝা যায়। ডলার সংকটের কারণে এটা প্রত্যাশিত ছিল। বিদায়ী অর্থবছরে রপ্তানি ও প্রবাসী আয় লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কম হয়েছে। তাই রপ্তানি ও প্রবাসী আয় বৃদ্ধিতে নজর দিতে হবে। আমদানি নির্ভর নয় এমন বৈদেশিক ঋণ যেগুলো পাইপলাইনে আছে, তা দ্রুত ছাড় করাতে পারলে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বাড়বে। আর বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমার সুযোগ কাজে লাগিয়ে উৎপাদনমুখী শিল্পে ব্যবহৃত পণ্যের আমদানি বাড়াতে হবে। তাহলে উচ্চ প্রবৃদ্ধিতে যাওয়া সম্ভব হবে।


https://mzamin.com/news.php?news=63389