৭ জুলাই ২০২৩, শুক্রবার, ১১:১৮

সারা বছর কাঁচামরিচ কেনেননি কেন অর্থমন্ত্রীর প্রশ্ন

ভয়ের কারণে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) কাছ থেকে ঋণ নেয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গত বছর দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে সমস্যা দেখা দেয়। তাই ভয় পেয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ঋণ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে সে ভয় কেটে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) এক্সিকিউটিভ সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ইয়ামাদা জুনিচির নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

কাঁচামরিচের কেজি ৪০০-৫০০ টাকা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জাবাবে অর্থমন্ত্রী পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, কাঁচামরিচ সারা বছর কেনেননি কেন? আপনারা এক দিনের জন্য কাঁচামরিচ কেনেন। কেউ তৈরি করবে বলেন? ক্ষেত লাগবে। এখানে বিনিয়োগও করতে হবে।

মানুষ না খেয়ে নেই ঠিক আছে, কিন্তু যেভাবে দাম বাড়ছে তাতে মানুষ কষ্টে আছে এমন প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, সাধারণ মানুষ কষ্ট করছে সারা বিশ্বে। আমরা বিশ্বের বাইরে নয়। আর আমাদের হাতে কিছু করার নেই। আমাদের হাতে যা আছে, তা দিয়ে চেষ্টা করছি। এতে করে আমরা ভালো অবস্থানে আছি। খুব ভালো অবস্থানে রাখতে পারলে আমরা আরো খুশি হতাম।
অর্থমন্ত্রী জানান, দেশের অর্থনীতি ভালো রয়েছে। অর্থনীতিতে কোনো সমস্যা নেই। এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে একজন সাংবাদিক অর্থমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন, দেশের অর্থনীতি ভালো থাকলে, আইএমএফের কাছ থেকে কেন নেয়া হলো। এর জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, গত বছর দেশের অর্থনীতিতে যে ভয় দেখা দিয়েছিল বর্তমানে তা আর নেই। সে সময় অর্থনৈতিক বিভিন্ন সূচকে সমস্যা দেখা দেয়ায় ভয় পেয়ে আইএমএফ থেকে ঋণ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে সে পরিস্থিতি নেই। তিনি এর পর সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, আইএমএফের কাছ থেকে যে অর্থ নেয়া হয়েছে তা, এখানে যারা আছেন তারাই পরিশোধ করতে পারেন। তিনি আরো বলেন, আইএমএফের ঋণ নিয়ে অনেক আলোচনা হলেও তারা বাংলাদেশকে যে পরিমাণ ঋণ দিচ্ছে তা যেকোনো সময় পরিশোধ করা যাবে। তাদের ঋণ বাংলাদেশের দুই মাসের রেমিট্যান্সের সমপরিমাণ।

আইএমএফের ঋণ কর্মসূচি থেকে সরকার সরে আসবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দেননি। তবে বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশের অনেক ভালো অবস্থায় রয়েছে বলে জানান তিনি।

এ সময় অর্থমন্ত্রী গত তিন বছরে বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধিসহ অন্যান্য সূচক ভালো অবস্থায় রয়েছে যার একটি লিখিত ফিরিস্তি তুলে ধরেন।

উল্লেখ্য, আইএমএফ গত ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে। এর তিন দিন পরই প্রথম কিস্তিতে ছাড় করেছে ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার। ২০২৬ সাল পর্যন্ত সাড়ে তিন বছরে মোট সাত কিস্তিতে দেবে ঋণের পুরো অর্থ।

মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার যখন ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসে তখন মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ। বর্তমানে সারা বিশ্ব মূল্যস্ফীতিতে ভুগছে। বাংলাদেশেও মূল্যস্ফীতি বেড়েছে তবে তা এখনো ১২ শতাংশ ক্রস করেনি। তাহলে কি নিত্যপণ্যের বাজার স্বাভাবিক রয়েছে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন, মূল্যস্ফীতি বাড়লেও মানুষ কি না খেয়ে আছে?

তিনি আরো বলেন, মূল্যস্ফীতিতে যাতে নিম্ন আয়ের মানুষ সমস্যায় না পড়ে যে জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে ১ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে ১ লাখ পরিবারকে কম মূল্যে নিত্যপণ্য দেয়া হচ্ছে। এসব কর্মসূচির মাধ্যমে যাদের কাছে খাবার নেই তাদেরকে সাশ্রয়ীমূল্যে খাবার পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। এভাবেই মূল্যস্ফীতির চাপ মোকাবেলা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী গেল জুন মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট হিসাবে জুন শেষে মূল্যস্ফীতি খানিকটা কমে ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশে নেমেছে। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় পণ্য ক্রয়ে ক্রেতাদের একশ টাকায় পৌনে ১০ টাকা বেশি গুনতে হয়েছে।
জাইকার প্রতিনিধিদলের সাথে সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, তাদের অর্থায়নে বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এসব প্রকল্পের অগ্রগতি বিষয়ে তাদের জানানো হয়েছে। মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্পের অগ্রগতি প্রায় ৯৫ শতাংশ। পুরো কাজ শেষ করে খুব শিগগির এ প্রকল্পের উদ্বোধন করতে চায় সরকার। তাছাড়া জাইকার অন্যান্য প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতিতেও প্রতিনিধিদলটি সন্তোষ প্রকাশ করেছে বলেও জানান তিনি।

কৃচ্ছ্রতা থেকে আমরা কবে নাগাদ বের হতে পারব? এমন প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, কোন জায়গায় আপনি খারাপ দেখেছেন। এ বছর আমেরিকায় তিনটি ব্যাংক ব্যর্থ হয়েছে। এতে বোঝা যায়, বিশ্ব অর্থনীতি কোন জায়গায় গেছে। বৈশ্বিক অর্থনীতি আপনারা যদি বিবেচনা করেন, তাহলে আপনাকে মেনে নিতে হবে যে আমাদের অর্জন তুলনামূলক অন্যদের চেয়ে অনেক ভালো।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জাইকাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে বাজেট সহায়তা নেয়া হয়। আগামীতে বাজেট সহায়তা যেনো বাড়ানো হয় সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।

বৈশ্বিক বিনিয়োগ প্রতিবেদন নিয়ে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের গেল কয়েক বছরের সামষ্টিক অর্থনীতির দৃশ্যপট আপনারা সেখানে দেখতে পাবেন। আমাদের যেমন প্রবৃদ্ধির হারের গেল তিন বছরের পাশাপাশি ফিগার আছে। ২০২০-২০২১, ২০২১-২০২২ ও ২০২২-২০২৩। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে জিডিপিতে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ, ২০২১-২০২২ সালে সাত দশমিক ১০ শতাংশ, ২০২২-২০২৩ সালে ৬ দশমিক ০৩ শতাংশ।

ন্যাশনাল ইনকাম পার ক্যাপিটা (মাথাপিছু আয়), যেটা নিয়ে সবাই সবসময় উদ্বিগ্ন থাকেন। ২০২০-২১ অর্থবছরে এটা দুই হাজার ৫৯১ মার্কিন ডলার। পরের অর্থবছরে এসে সেটা হয়েছে দুই হাজার ৭৯৩ ডলার। ২০২২-২৩ সালে এসে দুই হাজার ৭৬৫ মার্কিন ডলার হয়েছে- যোগ করেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরে রফতানি অনেকটা পড়ে গিয়েছিল। তখন এটি ছিল ৩৮ বিলিয়ন ডলার। পরের বছরে সেটা ছিল ৫২ বিলিয়ন ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সেই রফতানি হয়েছে ৫৫ বিলিয়ন ডলার। রেমিট্যান্স আসাও বেড়েছে। ২০২০-২১ বছরে আমাদের রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ২৪ বিলিয়ন ডলার।

বৈঠকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শরিফা খান, জাইকার এক্সিকিউটিভ সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ইয়ামাদা জুনিচি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/760328