৬ জুলাই ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ১:৫৩

রোগীর চাপ বেশি ঢাকা দক্ষিণের হাসপাতালে

প্রতিদিনই ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশের হাসপাতালে ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে ৫৮৪ জন ভর্তি হন। এ সময়ে মারা গেছেন ১ জন। বিগত বছরের মতো এবারও ঢাকায় বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন। মৃত্যুর সংখ্যাও এখানে বেশি। আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) তুলনায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) এলাকার হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ও মৃত্যু বেশি হচ্ছে। যদিও দুই সিটিতে প্রায় সমান সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন।

জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, দুই সিটির হাসপাতালগুলোতে সমান অনুপাতে রোগী ভর্তিতে বিকেন্দ্রীকরণজনিত অব্যবস্থাপনা রয়েছে। দক্ষিণের রোগীদের উত্তরে পাঠাতে ব্যর্থ হচ্ছে। এতে ওই হাসপাতালগুলোতে চাপ বাড়ছে। চিকিৎসক-নার্সরাও সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। এভাবে চলতে থাকলে অতিরিক্ত রোগীর চাপে প্রয়োজনীয় ও মানসম্মত সেবা দেওয়া চিকিৎসকদের জন্য চ্যালেঞ্জ হবে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মাদ খুরশীদ আলম যুগান্তরকে বলেন, ‘ঢাকা দক্ষিণের মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চাপ অনেক বেশি। অন্যদিকে উত্তরের শহিদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে বিছানা ফাঁকা পরে আছে। দক্ষিণে ওয়ার্ডের সংখ্যাও বেশি। আমরা দক্ষিণের রোগীদের উত্তরের হাসপাতালগুলোতে আনতে পারছি না। আরও বড় কারণ যানজট। ফলে রোগীর স্বজনের ভোগান্তি পোহাতে চান না। যদি সব হাসপাতালে ডেঙ্গু ভর্তি ডিস্ট্রিবিউশন বা ম্যানেজমেন্ট (ব্যবস্থাপনা) করতে পারতাম, তাহলে এক এলাকায় কম অন্য এলাকায় বেশি হতো না। তখন পেশেন্ট ম্যানেজমেন্ট ভালোভাবে করা যেত।’

দক্ষিণ সিটিতে অবস্থিত মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জানুয়ারি থেকে ৪ জুলাই পর্যন্ত ২ হাজার ৪০৯ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২ হাজার ৫৮ জন। মারা গেছেন ২০ জন। বর্তমানে ৩৩১ জন চিকিৎসাধীন আছেন।

হাসপাতালটির পরিচালক ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান বলেন, ‘প্রতিদিনই রোগী বাড়ছে। শুরুর দিকে যাত্রাবাড়ী, কাজলা, মাতুয়াইল, পলাশপুর, জুরাইন, শনিরআখড়া, মুগদা, মান্ডা এলাকার রোগী আসত। এখন সারা শহর থেকে রোগী আসছে। তাই সবাইকে শয্যা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। চিকিৎসাদানের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক ডাক্তার ও নার্সের সংকট রয়েছে। তাছাড়া হসাপাতালে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিতে হচ্ছে। এরপরও চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। যে হারে রোগী আসছে, এমনটা চলতে থাকলে চিকিৎসক-নার্সসহ অন্যান্য জনবলের প্রয়োজন হবে। না হলে সেবা দেওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে।

দক্ষিণ সিটির আওতাভুক্ত স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের (মিটফোর্ড) পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. কাজী রশিদ-উন-নবী বলেন, জানুয়ারিতে ৪৫ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১০ জন, মার্চে ১৪ জন ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হন। কিন্তু এপ্রিল থেকে মে পর্যন্ত ভর্তির সংখ্যা বেড়ে ১২০ জনে দাঁড়ায়। জুনে তা আরও বেড়ে ৫৯৮ জন হয়। মে থেকে জুনে এক মাসের ব্যবধানে প্রায় পাঁচগুণ বেশি ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। ৫ জুলাই পর্যন্ত মিটফোর্ডে ৭৩৭ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হন। তাদের ৬৩০ জন সুস্থ হয়েছেন। বর্তমানে ১০১ জন ভর্তি আছেন। এখন পর্যন্ত ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আমরা আমাদের সাধ্যমতো সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

দক্ষিণ সিটির ঢাকা মেডেকেল কলেজ ও হপাসাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. নাজমুল হক বলেন, ২ জুন ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছিল মাত্র ১২ জন। এক মাস পর ৪ জুলাই সংখ্যা হয় ১৪০ জন। এখন প্রতিদিনই রোগী বাড়ছে। তিনি বলেন, ঢামেকে চলতি বছর ৯১১ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। সুস্থ হয়ে বাড়ি গেছেন ৭৩২ জন। মারা গেছেন ৮ জন। বর্তমানে ১৭১ জন চিকিৎসাধীন আছেন।

অন্যদিকে উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার সবচেয়ে বড় চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান শহিদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চাপ অনেক কম। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ডা. খলিলুর রহমান বলেন, শেরে বাংলানগরে অবস্থিত সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে মোহাম্মদপুর, মিরপুর, আগারগাঁও, শেওরাপাড়া, ফার্মগেট, মহাখালীর রোগী বেশি আসে। চলতি বছরের শুরুর দিকে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি একেবারেই কম ছিল। সবখানে রোগী বাড়ায় এখানেও বাড়ছে। বুধবার পর্যন্ত মোট ১৭৬ জন ভর্তি হয়েছেন। গত ছয় মাসে একজন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। ১৪০ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। বুধবার ১২ জন ভর্তি ছিলেন। ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় সব ধরনের প্রস্তুতি ও লজিস্টিক সাপোর্ট আমাদের আছে।

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. গোলাম কিবরিয়া বলেন, চলতি বছর ১৩৩ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়। এর মধ্যে ১১১ জন সুস্থ হয়েছেন। কেউ মারা যাননি। বর্তমানে ২৫ রোগী ভর্তি আছেন। তিনি বলেন, আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি আছে।

কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মাহফুজা আরা বেগম বলেন, আমাদের হাসপাতালে প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ জনের মতো ডেঙ্গু উপসর্গ নিয়ে আসছেন। ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দিতে হাসপাতালের চার ও পাঁচতলার ৪২টি শয্যা প্রস্তুত রাখা রয়েছে। কিন্তু ভর্তিযোগ্য রোগী কম আসছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৯ জন ভর্তি হয়েছেন। কেউ মারা যাননি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রশাসন ডা. রাশিদা সুলতানা বলেন, সারা দেশেই ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে। ঢাকায় বেশি আক্রান্তের কারণ গরম আবহাওয়া, জনঘনবসতি, বৃষ্টিপাতের ফলে যত্রতত্র পানি জমে থাকা ও ভবন নির্মাণ। কিন্তু মশার কামড় থেকে বাঁচতে অনেকেই ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করেন না। জনসচেতনতা থাকলেও মানতেও আগ্রহ কম। এতে ঢাকায় রোগী বাড়ছে।
২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ৫৮৪, এক মৃত্যু : গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশের হাসপাতালে ডেঙ্গু নিয়ে আরও ৫৮৪ জন ভর্তি হয়েছেন। এ সময় একজনের মৃত্যু হয়েছে। ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৮২ জন, আর ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২০২ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ১ হাজার ৯১১ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। ঢাকার ৫৩টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে ১২৮৫ জন এবং অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ৬২৬ জন ভর্তি আছেন।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/692676