৬ জুলাই ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ১:৪৭

ইসির ক্ষমতা হ্রাস সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতন্ত্রকে ঝুঁকিতে ফেলবে

মন্তব্য করতে রাজি নন প্রধান নির্বাচন কমিশনার

জাতীয় সংসদে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ক্ষমতা হ্রাস সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতন্ত্রকে ঝুঁকির মুখে ফেলবে বলে মন্তব্য করেছে নাগরিক সংগঠন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। সংগঠনটি বলছে, আমরা মনে করি, এমনিতেই নির্বাচন কমিশন সব রাজনৈতিক দল এবং বিভিন্ন সংগঠনের কাছে আস্থা অর্জন করতে পারেনি। আরপিওর এই সংশোধনী নির্বাচন কমিশনকে আরো আস্থার সঙ্কটে ফেলবে। সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে একটি ক্ষমতাহীন প্রতিষ্ঠানে পরিণত করবে। তা ছাড়া সব দলের অংশগ্রহণে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলক হবে কি না, তা নিয়ে আমরা যখন সঙ্কটে নিমজ্জিত, তখন এই ধরনের একটি উদ্যোগ এই সঙ্কটকে আরো ঘনীভূত করবে। যা কোনো সচেতন নাগরিকের কাম্য নয়।

এ দিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, পাস হওয়া বিলটি আইন আকারে গেজেট হলে, তখনই বলা সমীচীন হবে। এটি বিল আকারে পাস হয়েছে। বিল এবং আইন এক নয়।

গতকাল গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছেন সুজনের সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান এবং সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। বিবৃতিতে তারা বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ করেছি যে, ৪ জুলাই জাতীয় সংসদে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)-এর যে সংশোধনী পাস করা হয়েছে, তাতে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা হ্রাস করা হয়েছে। এই ধরনের উদ্যোগের তীব্র প্রতিবাদ করছি। নির্বাচনে অনিয়ম ও বল প্রয়োগের মতো ঘটনায় নির্বাচনের দিন কোনো কেন্দ্র বা আসনের ভোট বন্ধ করাসহ তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনের যেকোনো পর্যায়ে যেকোনো নির্বাচনী এলাকার নির্বাচন স্থগিত ও ফলাফল বাতিলের ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনকে ফিরিয়ে দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

উল্লেখ্য, এই সংশোধনীর পর নির্বাচন কমিশন শুধুমাত্র ভোটের দিন কোনো অনিয়মের অভিযোগে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের ভোট বন্ধ করতে পারবে। ভোটের দিন ব্যতীত অন্য কোনো সময় নির্বাচন স্থগিত বা ফলাফল স্থগিত বা বাতিল করতে পারবে না।
সুজন নেতৃদ্বয় বলছেন, আমরা জানতে পেরেছি যে, নির্বাচন কমিশন থেকেই ফলাফল স্থগিত বা বাতিল করার বিষয়টি স্পষ্ট করার জন্য একটি উপধারা যুক্ত করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। অথচ গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)-এর ৯১ (ক) ধারায় বলা ছিল ‘কমিশন যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে, নির্বাচনে বলপ্রয়োগ, ভীতি-প্রদর্শন এবং চাপ সৃষ্টিসহ বিভিন্ন বিরাজমান অপকর্মের কারণে যুক্তিযুক্ত, ন্যায়সঙ্গত এবং আইনানুগভাবে নির্বাচন পরিচালনা নিশ্চিত করিতে সক্ষম হইবেন না, তা হলে ইহা যেকোনো ভোট কেন্দ্র বা ক্ষেত্রমত, স¤পূর্ণ নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচনের যেকোনো পর্যায়ে ভোট গ্রহণসহ নির্বাচনী কার্যক্রম বন্ধ করিতে পারিবে।

‘৯১ (কক) উপধারায় বলা হয়েছে’ কোনো ভোটকেন্দ্র বা সম্পূর্ণ নির্বাচনী এলাকার ফলাফল প্রকাশ স্থগিত করতে পারবে, যদি কমিশন নিশ্চিত হয় যে, সেই ভোটকেন্দ্র বা পুরো নির্বাচনী এলাকার ফলাফল বল প্রয়োগ, হুমকি, কারসাজি বা অন্য কোনো অসদাচরণ দ্বারা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। প্রয়োজনীয় সময়ের মধ্যে দ্রুত তদন্ত শেষে সরকারি গেজেটে পুরো নির্বাচনী এলাকার ফলাফল প্রকাশের নির্দেশনা দিবে। অথবা নির্দিষ্ট ভোটকেন্দ্রের বা পুরো নির্বাচনী এলাকার নির্বাচন বাতিলপূর্বক নতুন করিয়া নির্বাচন করতে পারবে। এ ছাড়াও উচ্চ আদালতের রায়েও গেজেট প্রকাশের আগ পর্যন্ত নির্বাচনী ফলাফল বাতিলের ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনকে প্রদান করা হয়েছে। আমাদের কাছে বোধগম্য নয় যে, উল্লিখিত ধারা দু’টিসহ উচ্চ আদালতের রায় থাকার পরেও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে কেন এই সংশোধনী প্রস্তাব দেয়া হলো। এটা কি কোনো পাতানো খেলা?

সংশোধনীর দিকে আমাদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে, বিষয়টি হলো পূর্বে মনোনয়নপত্র দাখিলের ন্যূনতম সাত দিন আগে ক্ষুদ্রঋণ এবং টেলিফোন, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির বিল পরিশোধের বিধান থাকলেও এখন মনোনয়নপত্র দাখিলের আগের দিন পর্যন্ত তা পরিশোধের বিধান করা হয়েছে। বিষয়টি মোটেও ইতিবাচক নয়। কেননা এতে ঋণখেলাপিরা নির্বাচনে অংশগ্রহণে উৎসাহিত হবে।
সুজন বলছে, আমরা সরকারকে মনে করিয়ে দিতে চাই যে, সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব। আর এ দায়িত্ব পালন করতে হলে, নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনভাবে আইনি দায়িত্ব পালন করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা হ্রাস করা সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ঝুঁকির মুখে ফেলবে বলে আমরা মনে করি।
আইন হোক তখনই বলা সমীচীন হবে : সিইসি

আইন আকারে জারি হওয়ার আগে জাতীয় সংসদে পাস হওয়া গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনী বিল নিয়ে এখনই কোনো মন্তব্য করতে রাজি নন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) নিয়ে যে বিলটা পাস হয়েছে আমি অপেক্ষা করছি আইনটা হোক। এখনো আইন পাস হয় নাই। বিল পাস হয়েছে। বিল এবং আইন এক নয়। বিল যেটি পাস হয়েছে, রাষ্ট্রপতি যদি সম্মতি প্রদান করেন তাহলে এটি আইন আকারে গেজেট হবে। তখনই বলা সমীচীন হবে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে গতকাল আরপিও বিল পাসের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি এ কথা বলেন। উল্লেখ্য ভোট বন্ধে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা কমিয়ে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধনী বিল জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে মঙ্গলবার। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) সদস্যদের আপত্তির মুখে জাতীয় সংসদে এ বিল পাস হয়। যদিও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সংসদে দাবি করেন, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ক্ষমতা খর্ব করা হয়নি।

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, তার আগ পর্যন্ত আমি নিশ্চিত নই, বিলটি কী আকারে। আইন আকারে এটা প্রকাশিত হোক, এর পরে আমি অবশ্যই কথা বলব। বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে বলব আমাদের অবস্থানটা। ৯১-এর-ক ধারার প্রসঙ্গ আসলে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, এই মুহূর্তে আমি কোনো কথা বলব না। একটু অপেক্ষা করেন। বিলটা মনে হয় দুই-এক দিনের মধ্যে জানতে পারব রাষ্ট্রপতি সম্মতি দিয়েছেন কি না। তখন বলাটা সমীচীন হবে।

সাংবাদিকদের উদ্দেশে সিইসি বলেন, আমরা আপনাদেরকে বলব। বিস্তারিত আপনাদের প্রশ্নের জবাব দেবো। বিলটা সম্পর্কে একটু এটাকে আইন হতে দেন। এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করব না।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/760083