৫ জুলাই ২০২৩, বুধবার, ১:২৪

প্রতিমন্ত্রীর সিন্ডিকেটের কবলে ত্রাণ

কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) ও টেস্ট রিলিফের (টিআর) এবং বিভিন্ন দুর্যোগে ত্রাণের বিশেষ বরাদ্দের টাকা সি-িকেটের কবলে পড়ে গেছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের রাঘব-বোয়ালরাই এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত। এমনকি প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সি-িকেট গড়ে তোলার অভিযোগ উঠেছে। ফলে অনেক এলাকায় বরাদ্দ দেয়া দুর্যোগ মোকাবিলার টাকা ভাগ বাটোয়ারা করে নেয়ায় প্রকল্পের কাজ হয়না। আবার কোনো কোনো এলাকার বরাদ্দের টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। অর্থবছরের শেষদিকে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় কবলিত এলাকায় কোনো ত্রাণ বরাদ্দ দেওয়া সে টাকা কারা তুলেছেন সে ব্যাপারে কোনো তথ্য দিতে পারছে না সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ত্রাণের টাকা ভাগবাটোয়ারা স্বাভাবিক ঘটনা। এছাড়া বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নি¤œচাপটি ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’য় আঘাত হানতে পারে। এমন তথ্য দেয়ার পর থেকে কক্সবাজারে এরই মধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে সংবাদ সম্মেলন করে এর তথ্য জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। এর জন্য কি পরিমান ব্যয় করা হয়েছে তা এখনো প্রকাশ করা হয়নি। অভিযোগ উঠেছে এর বেশির ভাগ টাকা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীর দপ্তর এবং অধিদপ্তর বরাদ্দের টাকা সি-িকেটের পকেটে গেছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীর ডা: এনামুন রহমানের ইনকিলাবকে বলেন, আমার কোনো সিন্ডিকেট নেই, যে অভিযোগ তুলেছে তা মিথ্যা। দুর্নীতি বন্ধে আমি অনেক পদক্ষেপ নিয়েছি।

গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কারে দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) ও টেস্ট রিলিফের (টিআর) বিশেষ বরাদ্দের টাকায় অনিয়ম রোধে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা এবং দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ১০ দফা সুপারিশ প্রায় ৬ বছরে বাস্তবায়ন করতে পারেনি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। এছাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা নিবার্হী অফিসারে দ্বন্দ্বের কারণে কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) এবং টিআর প্রকল্পের বাস্তবায়ন থমকে গেছে। এর মধ্যেই শত শত উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম এবং বদলীর জন্য দুযোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিবকে চিঠি দিয়েছেন জনপ্রতিনিধিরা। এছাড়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীর ডা: এনামুন রহমানের বিরুদ্ধে জাতীয় সংসদের সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এবং এমপিরা প্রশ্ন তুলেছেন।

গ্রামীণ উন্নয়নের ক্ষেত্রে কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) ও টেস্ট রিলিফ (টিআর) প্রকল্প ঘিরে অনিয়ম-দুর্নীতি নতুন নয়। কিন্তু ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে এ দুর্নীতি-অনিয়মকে নতুন মাত্রা দিয়েছে বিশেষ বরাদ্দের আওতায় গৃহীত প্রকল্পগুলো। এসব প্রকল্পে বরাদ্দ করা অর্থের কোনো কাজ হয়নি। বিশেষ বরাদ্দের অর্ধেক অর্থ গেছে ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীর ডা: এনামুন রহমানের একটি সিন্ডিকেটের কাছে। বাকি টাকা গেছে মধ্যস্বত্বভোগীসহ পিআইও অফিসের কর্মকর্তাদের পকেটে গেছে বলে মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা ইনকিলাবকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তারা বলেন, গত অর্থবছরে ‘বিশেষ বরাদ্দ’ হিসেবে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় এবং বড় দুযোগ দেখা দিলে এসব বরাদ্দের আদেশের কেনাবেচা হয়েছে ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীর লোকজন ও মন্ত্রণালয়ের বারান্দাতেই। সংসদ সদস্য ও উপজেলা পরিষদে দেওয়া বরাদ্দ নিয়েও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। এ বরাদ্দও ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছে দলীয় নেতাকর্মীরা। অর্থবছরের শেষদিকে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় কবলিত এলাকায় কোনো ত্রাণ বরাদ্দ দেওয়া সে টাকা কারা তুলেছেন কি কাজ করেছেন তা মন্ত্রণালয় থেকে তথ্য দেয়া হচ্ছে না। এ ছাড়া গত অর্থ বছরের বরাদ্দের কাজ বাস্তবায়ন করতে পারেনি খোদ জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরীর নিবার্চনী এলাকা রংপুর-৬। তার এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা এ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন। এ বছরেও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা এখনো কোনো প্রকল্পের তালিকা দাখিল করা হয়নি।

এদিকে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) এবং গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা /কাবিখা) কর্মসূচির আওতায় প্রকল্প অনুমোদন, বাস্তবায়ন এবং অর্থ উত্তোলনের আগামী ২৫ জুন পর্যন্ত সময় বাড়িয়েছে দিয়েছে সরকার। সম্প্রতি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, চলতি ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) এবং গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা/কাবিখা) কর্মসূচির আওতায় ১ম ও ২য় কিস্তিতে ছাড় করা অর্থ বা খাদ্যশস্যের প্রকল্প অনুমোদন, বাস্তবায়ন এবং অর্থ উত্তোলনের সময় আগামী ২৫ জুন পর্যন্ত নির্দেশক্রমে এতদ্বারা বৃদ্ধি করা হয়েছিলো। তবে সারাদেশে কি পরিমান বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তার কোনো তথ্য নেই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষনাবেক্ষণা (টিআর) কর্মসূচির আতায় নির্বাচনী এলাকা ভিত্তিক সংসদ সদস্যদের অনুকুলে গত ১১ জনু ৩৯ লাখ ২৩ হাজার ৩৩৩ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া ১ কোটি ৯১ লাখ ৬৭ হাজার ৭২৩ হাজার টাকা গত ১১ জুন বরাদ্দ দেয়া হয়। এছাড়া গত ১৩ জুন টাঙ্গাইল ৩৩১ মহিলা আসনের সংসদ সদস্যে নামে ১৩ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ ৩য় কিস্ত দেয়া হয়।

এ বছরে ৬৪ জেলায় বরাদ্দের পরিমান কত জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীর ডা: এনামুন রহমানের ইনকিলাবকে বলেন, এখন বলা সম্ভব হচ্ছে না, আমরা ৪র্থ কিস্তির বরাদ্দ দিচ্ছি। মোট বরাদ্দ বলা যাচ্ছে না। কি কারণে মাঠ পযায়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা নতুন বরাদ্দ দিয়েছি আগামী আগস্ট পর্যন্ত বাস্তবায়নের সময় দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে বাস্তবায়ন করতে পারবে আমি আশা করছি। যেসব জেলায় প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন হচ্ছে না সেগুলোর জেলা ও উপজেলার কর্মকর্তাদের ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে গত ২০১৮ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সচিব মো. শামসুল আরেফিন গত ২১ মে এক চিঠিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব কাছে এই সুপারিশমালা হস্তান্তর করেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং দুদক চেয়ারম্যানের একান্ত সচিবকেও ওই চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কারে টিআর, কাবিখা, কাবিটা কর্মসূচিতে অনিয়ম রোধে সরকারের কাছে ১০ দফা সুপারিশ করা হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে পাঠানো দুদকের চিঠিতে বলা হয়, দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে কাবিখা, টিআর ও কাবিটা প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের নানা অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশনে প্রেরণ করা হয়। তৎপ্রেক্ষিতে দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্ত প্রতিবেদনে অনিয়মের বিশদ বিবরণ পাওয়া যায়। এছাড়া পত্রপত্রিকায় এ বিষয়ে নানা ধরনের অনিয়মের প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। দুদক পরিচালিত গণশুনানিকালেও এ সংক্রান্ত নানা অভিযোগ উত্থাপিত হয়। এসব অভিযোগ ও কমিশনের অনুসন্ধান থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার কর্মসূচি প্রকল্পের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় অনিয়ম রোধে দুদক ১০ দফা সুপারিশ করে। নীতিমালা অনুযায়ী প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যায় তেমন পর্যাপ্ত সময় দিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর অর্থ ছাড় করবে। অর্থবছর শেষে জুন মাসের শেষ সপ্তাহে অর্থ ছাড় করা হলে আত্মসাতের সুযোগ সৃষ্টি হয়। কাজেই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অর্থ ছাড় করা প্রয়োজন। বিশেষ প্রকল্পে অর্থ বা সম্পদ বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর কর্তৃক প্রকল্প প্রস্তাব সরেজমিন যাচাই করা যেতে পারে এবং প্রকল্পের আদৌ প্রয়োজন আছে কি না- তাও নির্ধারণ করা যেতে পারে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরকেন্দ্রীক সক্রিয় দালাল চক্র ও দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা তাদের এজেন্টদের নিষ্ক্রিয় করা যেতে পারে। বিশেষ কোনো প্রকল্প বারাদ্দের কোনো প্রস্তাব প্রয়োজনীয়তার নিরিখে সতর্কতার সাথে করতে হবে। জেলা প্রশাসকরা এরূপ বিশেষ প্রকল্পের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে প্রেরণের ক্ষেত্রে শতভাগ সরেজমিন যাচাই করে প্রেরণ করবেন। এর ফলে ভুয়া প্রকল্পের সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যাবে। বিশেষ ও সাধারণ বরাদ্দের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে নীতিমালা অনুসরণ করা হয়েছে কি না- তা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে শতভাগ নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেওয়া যেতে পারে। এহেন কর্মকা- ভুয়া কমিটি রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

টিআর-কাবিখায় অনিয়ম রোধে দুদকের ১০ সুপারিশ গুলো হচ্ছে, নীতিমালা মোতাবেক প্রকল্প এলাকায় একাধিক সাইনবোর্ড সহজে দৃষ্টিগোচর হয় এমন জায়গা স্থাপন নিশ্চিত করবে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি। সামাজিক অডিট কার্যক্রম নিশ্চিত করা প্রয়োজন। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি নীতিমালা অনুযায়ী কার্য সম্পাদনে ব্যর্থ হলে এবং এর ফলে কোনো প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটলে সকলে সমভাবে দায়ী হবেন মর্মে পরিপত্র জারি করা যেতে পারে। অধিকতর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পিআইসির মাধ্যমে বাস্তবায়িত কাবিখা প্রকল্পের অর্থ সরাসরি পিআইসির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। দুর্যোগ ছাড়া অন্য কোনো প্রকল্পে বিশেষ বরাদ্দ না দেওয়া যেতে পারে। উপজেলায় অন্তর্গত সকল রাস্তা, খাল, নালা, সামাজিক, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ডাটাবেজ প্রণয়ন ও সংরক্ষণ করা যেতে পারে। যাতে সংশ্লিষ্ট রাস্তা ও প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নমূলক কর্মকা- বাস্তবায়নকারী সংস্থার নাম ও উন্নয়নের সাল আবশ্যিকভাবে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। কোন বছরে কী সংস্কার করা হল তা পূর্বের বছরের সংস্কার কাজের সাথে তুলনা করে একটি তুলনামূলক বিবরণী পেশ করতে হবে। সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে দুর্নীতি বন্ধে গত এপ্রিলের শেষ দিকে দুদক কার্যালয়ে এক মতবিনিময় সভায় টিআর, কাবিখা নীতিমালায় অনিয়ম-দুর্নীতির ফাঁকফোকর বন্ধে সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল।

মন্ত্রণালয়ের বারান্দায় বরাদ্দের আদেশ বিক্রি, বিশেষ বরাদ্দ বণ্টনের ক্ষমতা কেবল মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্তাব্যক্তিদেরথ এ ছাড়া বিশেষ বরাদ্দ বণ্টনের আলাদা কোনো নিয়মনীতি নেই। অভিযোগ উঠেছে, গেল অর্থবছরে বিশেষ বরাদ্দের আদেশ মন্ত্রণালয়ের বারান্দাতেই কেনাবেচা হয়েছে। মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা ছাড়াও সরকারদলীয় বিভিন্ন সংগঠন ও ভুঁইফোড় প্রতিষ্ঠানের প্যাডে যে যেভাবে পারছে, আবেদন করেছে। আর মন্ত্রণালয়ও তা যাচাই-বাছাই ছাড়াই আবেদনে উল্লিখিত প্রকল্পের বিপরীতে সরাসরি বরাদ্দ দিয়েছে। মন্ত্রণালয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আবেদনপত্রের ওপর কত টন বরাদ্দ দেওয়া হবে, তা সহস্তে লিখে অনুমোদনের স্বাক্ষর করছেন। ফলে কোনো উপজেলায় বিশেষ বরাদ্দ গেছে, আবার অনেক উপজেলায় কোনো বরাদ্দই যায়নি। পাবনার একটি ইউনিয়নে এক হাজার থেকে দেড় হাজার টন বিশেষ বরাদ্দ দেওয়ারও দৃষ্টান্ত রয়েছে, যেখানে কাজ হয়নি এক টাকারও। বরাদ্দের বাকি অর্থ হয়েছে ভাগবাটোয়ারা। এ সব বরাদ্দের সঙ্গে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (ত্রাণ কর্মসূচি-২) আবু সাইদ মো. কামালসহ ৬জন কর্মকর্তা ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীর একটি সিন্ডিকেটের কাছে করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, উন্নয়নের নামে টিআর ও কাবিখা প্রকল্পের টাকা এবং চাল-গম সরকারি দলের নেতাকর্মীদের ভাগবাটোয়ারা করে নেওয়া নতুন কিছু নয়। তবে দিন দিন এর প্রসার লক্ষ্য করার মতো। গত ১০ বছরে টিআর ও কাবিখার পেছনে সরকারের যে ব্যয় হয়েছে, তা দিয়ে দেশের অনেক বড় উন্নয়ন করা যেত। কিন্তু এসব টাকা উঠেছে দলের একশ্রেণির নেতাকর্মীর পকেটে।

## https://dailyinqilab.com/national/article/585426