৫ জুলাই ২০২৩, বুধবার, ১:২২

ভয়ঙ্কর রূপে ডেঙ্গু, ঢাকার দুই সিটিতে ৫৫টি ওয়ার্ড ঝুঁকিপূর্ণ

মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই ভয়ঙ্কররূপ নিয়েছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি। ডেঙ্গু নিয়ে চালানো এক গবেষণার ফলাফল তাই বলছে। ঢাকার উত্তর-দক্ষিণ যাই বলি না কেন সবাই ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ঢাকা মহানগরীর ৪৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ বহুতল ভবনে পাওয়া গেছে এডিস মশার লার্ভা। এরমধ্যে আবার ঢাকার দুই সিটির ৫৫টি ওয়ার্ড ঝুঁকিপূর্ণ। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২০ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ বাড়িতে ডেঙ্গু জ্বরের বাহক এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গবেষণায় উঠে এসেছে। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সভাকক্ষে দেশে চলমান ডেঙ্গু সংক্রমণের প্রি-মনসুন সার্ভের ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার জাতীয় ম্যালেরিয়া ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় গত ১৮ থেকে ২৭শে জুন ঢাকায় বর্ষা মৌসুম পূর্ববর্তী এই জরিপ চলে।

অনুষ্ঠানে জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা ঢাকা উত্তর সিটির ৪০টি ওয়ার্ডে এবং দক্ষিণ সিটির ৫৮টি ওয়ার্ডে সর্বমোট ৩ হাজার ১৪৯টি বাড়িতে সার্ভে করেছি, এর মধ্যে ৫৪৯টি বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। পরিচালক বলেন, উত্তর-দক্ষিণ যাই বলি না কেন আমরা সবাই ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছি।

তিনি বলেন, এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপের স্বীকৃত পদ্ধতি ‘ব্রুটো ইনডেক্স’র মানদণ্ডে লার্ভার ঘনত্ব ২০ শতাংশের বেশি হওয়া মানেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। সার্ভেতে দেখা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডে এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৮টি ওয়ার্ডে ডেঙ্গু সংক্রমণের হার ঝুঁকিপূর্ণ পর্যায়ে। ঢাকা উত্তর সিটির ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ডগুলো হলো- ২, ৩, ৫, ৬, ১০, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮, ১৯, ২০, ২১, ২২, ২৩, ২৫, ২৬, ২৭, ২৮, ২৯, ৩০, ৩১, ৩৩, ৩৫, ৩৭, ৩৮ নং ওয়ার্ডসহ সর্বমোট ২৭টি ওয়ার্ড।

মিরপুর, পল্লবী, মাজার রোড, পীরের বাগ, মণিপুর, শ্যাওড়াপাড়া, কাফরুল, ইব্রাহিমপুর, খিলক্ষেত, কুড়িল, জোয়ার সাহারা, বনানী, গুলশান, বারিধারা, মহাখালী, রামপুরা, খিলগাঁও, মালিবাগ, কাওরান বাজার, তেজতুরী বাজার, আগারগাঁও, মোহাম্মদপুর, বায়তুল আমান, মগবাজার, ইস্কাটন, বাড্ডা পড়েছে এসব ওয়ার্ডের আওতায়। ঢাকা দক্ষিণ সিটির ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ডগুলো হলো- ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৯, ১১, ১২, ১৩, ১৫, ১৬, ১৮, ১৯, ২২, ২৩, ২৬, ৩৩, ৩৪, ৩৬, ৪১, ৪৪, ৪৬, ৪৮, ৫০, ৫১, ৫৪, ৫৫, ৫৬ নং ওয়ার্ডসহ সর্বমোট ২৮টি ওয়ার্ড। গোরান, মেরাদিয়া, বাসাবো, সবুজবাগ, মুগদা, মাদারটেক, ফকিরাপুল, আরামবাগ, শাহজাহানপুর, রাজারবাগ, পুরানা পল্টন, বায়তুল মোকাররম, ধানমণ্ডি, রায়েরবাজার, নীলক্ষেত, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, এলিফেন্ট রোড, মিন্টো রোড, কাকরাইল, হাজারীবাগ, লালবাগ, আজিমপুর, পলাশী, বংলাশ, সিদ্দিকবাজার, শাঁখারীবাজার, রায় সাহেববাজার, ওয়ারী, সূত্রাপুর, মিলব্যারাক, সায়েদাবাদ, উত্তর যাত্রাবাড়ী, মীরহাজিরবাগ, ধোলাইপাড়, গে-ারিয়া, জুরাইন এবং কামরাঙ্গীরচর এসব ওয়ার্ডের আওতায় পড়েছে। উত্তরে ৫৪টি এবং দক্ষিণে ৭৫টি ওয়ার্ড মিলিয়ে ঢাকায় মোট ওয়ার্ড ১১৯টি। এই হিসাবে ঢাকার অর্ধেক ওয়ার্ডই রয়েছে ডেঙ্গুর ‘উচ্চ ঝুঁকিতে’। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ৯৮টি ওয়ার্ডে এ জরিপ করা হয়েছে। উত্তরের ৪০টি এবং দক্ষিণের ৫৮টি ওয়ার্ডে গেছেন জরিপকারীরা। ৫৪৯টি বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পেয়েছেন তারা। এর মধ্যে উত্তরে ২৭২টি এবং দক্ষিণে ২৭৮টি বাড়িতে লার্ভা মিলেছে।
জরিপে প্রতি একশ’ প্রজনন উৎসের মধ্যে ২০টি বা তার বেশিতে যদি এডিস মশার লার্ভা বা পিউপা পাওয়া যায়, তাহলে সেটাকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ উপস্থিতি’ বলা হয়। অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, এই ফলাফলের মানে হলো, এসব এলাকায় ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার উপস্থিতি অনেক বেশি। দেশে গত একদিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে, একদিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৬৭৮ জন। আক্রান্ত ও মৃত্যুর এই সংখ্যা এ বছরের সর্বোচ্চ। এ বছর সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯ হাজার ৮৭১ জন। তাদের মধ্যে ৬১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এডিস মশাবাহিত এই রোগে আক্রান্ত হয়ে গত বছর ৬২ হাজার ৩৮২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। তাদের মধ্যে রেকর্ড ২৮১ জনের মৃত্যু হয়। এর আগে ২০১৯ সালে দেশের ৬৪ জেলায় এক লাখের বেশি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। সরকারি হিসাবে সে বছর মৃত্যু হয়েছিল ১৬৪ জনের।

https://mzamin.com/news.php?news=63089