৩ জুলাই ২০২৩, সোমবার, ১১:৫৭

সারের দাম ১০৫, চিনির দাম ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে বিশ্বে খাদ্য, জ্বালানি ও সারের দাম অনেক বেড়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশে সারের দাম ১০৫ শতাংশ, চিনির দাম ৬০ শতাংশ, পেট্রলের দাম ৪৭ শতাংশ ও স্যানিটারি প্যাডের দাম ২৩ শতাংশ বেড়েছে।

দাম বাড়ার ফলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে খাদ্য ও জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে। এমন তথ্য উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক সংস্থা অ্যাকশনএইড পরিচালিত একটি নতুন সমীক্ষায়।

গতকাল রবিবার সংস্থাটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমন তথ্য জানানো হয়।
এশিয়া, আফ্রিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের মোট ১৪টি দেশে এক হাজারের বেশি মানুষের ওপর পরিচালিত এই সমীক্ষায় দেখা গেছে, নিরীক্ষণের সময় সারের দাম ১১৫ শতাংশের বেশি বেড়েছে। পেট্রল ও স্যানিটারি প্যাডের দাম ৮০ শতাংশ বা তার বেশি বেড়েছে। একই সঙ্গে বাল্যবিবাহের হার বৃদ্ধি, নারীস্বাস্থ্যের অবনতি ও মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে।

সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে জীবনযাত্রার ব্যয় অনেকগুলো প্যারামিটারে বেড়েছে, যা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। বাংলাদেশে সারের দাম ১০৫ শতাংশ, চিনির দাম ৬০ শতাংশ, পেট্রলের দাম ৪৭ শতাংশ ও স্যানিটারি প্যাডের দাম ২৩ শতাংশ বেড়েছে। ফলে দেশের জনগণ একাধিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। বিশেষ করে নারী, মেয়ে ও শিশুরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ফলে তাদের শিক্ষা, পুষ্টি ও স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে আপস করতে হচ্ছে।
অ্যাকশনএইডের গ্লোবাল পলিসি অ্যানালিস্ট আলবার্টা গুয়েরা বলেন, ‘এই সমীক্ষা দেখায় যে ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে প্রান্তিক মানুষ আকাশছোঁয়া খাদ্য, জ্বালানি ও সারের দামের কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। বিশেষ করে নারী ও কন্যাশিশুরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তারা এই সময়ে নানা সংকটে প্রভাবিত হয়েছে, যা তাদের খাদ্যগ্রহণ, শিক্ষা, বাল্যবিবাহ থেকে মুক্ত থাকার অধিকার এবং মানসিক স্বাস্থ্য ও সুস্থতাকে প্রভাবিত করেছে।’

সমীক্ষায় বলা হয়, বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশের মধ্যে ১০টি দেশে মেয়ে ও ছেলে উভয়ের ক্ষেত্রে বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ার হার বেড়েছে।

মূল্যবৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক চাপও বাল্যবিবাহের হার বাড়িয়ে দিয়েছে।
সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ জলবায়ু বিপর্যয়, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, কভিড-১৯, ঋণের চাপ এবং মুদ্রার অবমূল্যায়ন থেকে শুরু করে একাধিক সংকটে রয়েছে। এই কারণগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো জলবায়ু বিপর্যয়, কভিড-১৯ ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ।

অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বলেন, ‘জ্বালানির দামের অস্থিরতা সব ক্ষেত্রেই সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলেছে। বিশেষ করে খাদ্যের ওপর, যা নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে বেশি মাত্রায় প্রভাবিত করে। আমাদের জাতীয় প্রতিবেদন (বাংলাদেশ ব্যাংক) নির্দেশ করে যে আমাদের মূল্যস্ফীতি ৯.৫ শতাংশ। যদি আমরা বাস্তব দৃষ্টিতে দেখি, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে এখন চাল ও ডিমের মতো প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীর জন্য আগের দামের প্রায় দ্বিগুণ মূল্য দিতে হচ্ছে।’

ফারাহ কবির আরো বলেন, ‘পরিবর্তিত বাস্তবতা ও মানুষের বর্তমান চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রক্ষা করার জন্য সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থাগুলোকে জরুরিভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা দরকার। শিশুসহ পরিবারগুলোকে তাদের শিক্ষা চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করতে হবে। চাষাবাদে অধিক বিনিয়োগের মাধ্যমে খাদ্য আমদানির ওপর নির্ভরশীলতা কাটিয়ে উঠতে হবে। নবায়নযোগ্য শক্তি ও জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় অ্যাগ্রোইকোলজিক্যাল চাষ পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনয়ন এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি প্রয়োজন।’
অ্যাকশনএইড জানায়, ১৪টি দেশের মোট এক হাজার ১০ জন মানুষের অংশগ্রহণে ১ মার্চ থেকে ২৩ এপ্রিলের মধ্যে এই সমীক্ষা পরিচালিত হয়। উত্তরদাতাদের ৬৩ শতাংশ ছিলেন নারী। অংশগ্রহণকারীদের জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে সমীক্ষার দিনে গমের পণ্য, রান্নার তেল, পেট্রল, রান্নার জন্য গ্যাস, সার ও স্যানিটারি প্যাডের দাম কত ছিল। এই পণ্যগুলোর মূল্য ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর আগের মূল্যের সঙ্গে তুলনা করা হয়।

অংশগ্রহণকারীদের তাদের জীবন-জীবিকার ওপর এই মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব সম্পর্কেও প্রশ্ন করা হয় এবং সম্ভাব্য উত্তরগুলোর একটি সিরিজ থেকে কমপক্ষে একটি প্রতিক্রিয়া নির্বাচন করতে উৎসাহিত করা হয়।

জরিপে অংশ নেওয়া ১৪টি দেশ হলো বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র (ডিআরসি), ইথিওপিয়া, হাইতি, কেনিয়া, মালাউই, মিয়ানমার, নেপাল, নাইজেরিয়া, সিয়েরা লিওন, সোমালিল্যান্ড, জাম্বিয়া ও জিম্বাবুয়ে।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2023/07/03/1294985