২ জুলাই ২০২৩, রবিবার, ১১:৩৭

টানা বৃষ্টি ভারতীয় ঢলে নদ-নদীর পানি বাড়ছে আরও দুই দিন বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা

উত্তর ও উত্তরপূর্বাঞ্চলে বন্যা

কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে দেশের উত্তর ও উত্তরপূর্বাঞ্চলের নদ-নদীর পানি বাড়ছে। কোথাও কোথাও নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তার পানি বেড়ে উত্তরের কয়েকটি চেলার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানি নিয়ন্ত্রণে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। কয়েকদিনের বৃষ্টিতে এবং ভারতীয় ঢলে তিস্তার ধু ধু বালুচর এলাকা এখন পানিতে টইটম্বুর। তিস্তার চর ও নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে তলিয়ে গেছে ফসলের খেত। বিশেষ করে বাদাম, পাট ও মৌসুমি ফসলের অনেক ক্ষতি হয়েছে। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন তিস্তাপাড়ের মানুষ। চর এলাকায় চাষাবাদের জন্য বসবাসরত লোকজন গ্রাম এলাকায় চলে আসছেন। নৌকায় করে চরের ফসল নিয়ে ছুটছেন উঁচু এলাকায়।

এদিকে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণায়ও বাড়ছে নদ-নদীর পানি। গত কয়েকদিন ধরে সিলেটে এবং ভারতের বিভিন্ন স্থানে ভারি বৃষ্টি হওয়ার কারণে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সব নদ-নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেক স্থানে রাস্তা ঘাট ডুবে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবে এ বন্য হবে স্বল্পমেয়াদি। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বৃষ্টিপাত ও নদ-নদীর অবস্থা নিয়ে গতকালের প্রতিবেদনে এ পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, উজানে অর্থাৎ ভারতে ও দেশের অভ্যন্তরে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সব প্রধান নদ-নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। আবহাওয়া সংস্থাগুলোর পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ৭২ ঘণ্টায় দেশের উজানে ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। এতে এ অঞ্চলের নদ-নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। যে সব নদ-নদীর পানি বাড়ছে সেগুলো হলো, সুরমা, কুশিয়ারা, মনু, ধনু, খোয়াই, সারিগোয়াইন, ঝালুখালি, ভোগাই-কংশ, সোমেশ্বরী, যদুকাটা, মগড়া ইত্যাদি। এসব নদীর পানি দ্রুত বেড়ে বিপদসীমা পার হয়ে সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ এসব জেলার হাওর ও নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে।

নেত্রকোনার কলমাকান্দায় চারদিনের টানা বৃষ্টিতে বেড়েছে নদ-নদীর পানি। এরই মধ্যে উপজেলার প্রধান উব্দাখালী নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার গত ৪৮ ঘন্টায় উব্দাখালী নদীর পানি ৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে ওই নদীর ডাকবাংলো পয়েন্টে বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়াও উপজেলার সোমেস্বরী, মহাদেও, বৈঠাখালী, মঙ্গলেশ্বরী ও গণেশ্বরী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
পানি বেড়ে কলমাকান্দা-গোবিন্দপুর সড়কের বাউসাম রুমালীর বাড়ি সংলগ্ন এলাকায় সড়কটির কিছু অংশ পানিতে ভেঙে গেছে। এতে করে গতকাল সকাল থেকে ওই সড়কে যানচলাচল বন্ধ রয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় তীরবর্তী এলাকাসহ নিম্নাঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। তবে এখানো কোনো বসতবাড়িতে পানি ঢুকেনি। গ্রামীণ দু’কয়েকটি কাঁচা সড়ক ছাড়া এখানো কোনো সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। প্রত্যেকটি ইউনিয়নের সাথে উপজেলা সদরের যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রয়েছে।

আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী দুই দিন বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে। এ ছাড়া রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, পাবনা, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, বগুড়া, ঢাকা, ফরিদপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালি, নোয়াখালি, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও সিলেট অঞ্চলের ওপর দিয়ে দক্ষিণ অথবা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ অস্থায়ীভাবে বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেজন্য এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

https://dailyinqilab.com/national/article/584586