২ জুলাই ২০২৩, রবিবার, ১১:০৮

টানা বৃষ্টিতে রাজধানীতে জলাবদ্ধতা

টানা বৃষ্টিতে ডুবে গেছে রাজধানী ঢাকা। মূল সড়ক থেকে অলিগলি সর্বত্রই থৈ থৈ পানি। জলাবদ্ধতার কারণে রাজধানীবাসীর সাথে ঈদের ছুটি শেষে ঢাকায় ফেরা মানুষও বিপাকে পড়েছেন। বিকেলে বৃষ্টি হওয়ায় ঈদের আনন্দেও ভাটা পড়েছে। ঈদের ছুটিতে যারা পরিবার নিয়ে ঘুরতে বের হওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন, তাদের অনেককেই সেই পরিকল্পনা বাতিল করতে হয়েছে।

ঈদের দিন থেকেই রাজধানীসহ সারা দেশে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। গত শুক্রবারও বিকেলের পর রাজধানীতে ঝুম বৃষ্টি নেমেছিল। গতকাল সকালে বৃষ্টির মাত্রা ছিল কম। তবে আকাশে ছিল মেঘ। দুপুরের পর আকাশ অন্ধকার করে নামে মুষলধারে বৃষ্টি; যা প্রায় দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা স্থায়ী ছিল। টানা বৃষ্টির কারণে তলিয়ে গেছে রাজধানীর অলিগলি থেকে শুরু করে প্রধান সড়কও। তবে সড়কে যানবাহনের সংখ্যা কম থাকায় জলাবদ্ধতার কারণে যানজট দেখা দেয়নি।

গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় ৯১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। এই বৃষ্টির ফলে রামপুরা অঞ্চলের অধিকাংশ গলিতেই প্রায় হাঁটু সমান পানি জমে রয়েছে। এমনকি বেশ কিছু বাসাবাড়িতেও বৃষ্টির পানি ঢুকে যেতে দেখা গেছে। মিরপুর অঞ্চলের বিভিন্ন গলিতেও পনি জমে থাকতে দেখা গেছে। গলিতে পানি জমে থাকতে দেখা গেছে বাড্ডা, মালিবাগ, খিলগাঁও অঞ্চলেও।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টানা বৃষ্টির কারণে রাজারবাগ পুলিশ লাইনের সামনের সড়ক, মতিঝিল কলোনি এলাকা, টিটিপাড়া মোড়, আর কে মিশন রোড, পুরান ঢাকার বংশাল, নাজিমুদ্দিন রোড পানির নিচে তলিয়ে গেছে। জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে ধানমন্ডি, মিরপুর ১৩, হাতিরঝিলের কিছু অংশে। আগারগাঁও থেকে জাহাঙ্গীর গেট যেতে নতুন রাস্তায়, খামারবাড়ি থেকে ফার্মগেট, ফার্মগেট-তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ডসংলগ্ন এলাকা, কাওরানবাজার, মোহাম্মদপুরের কিছু অংশ, মেরুল বাড্ডা, ডিআইটি প্রজেক্ট এলাকা, গুলশান লেকপাড় এলাকার সংযোগ সড়কের কয়েকটি স্থানে বৃষ্টির পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।

পশ্চিম তেজতুরী বাজার এলাকাস্থ বসুন্ধরা সিটির পেছনের একটি গলিতে গিয়ে দেখা গেছে, বৃষ্টির পানিতে রাস্তায় হাঁটুপানি। রাস্তার পাশে অনেক দোকান ও বাসাবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। তবে ওই সব এলাকায় বাসিন্দাদের ৩০ টাকা করে পানি পার করছেন রিকশাচালকরা।

স্থানীয়রা জানান, বৃষ্টি হলেই ওই রাস্তায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এ সময় সুবিধাভোগী কিছু রিকশাচালক সেখানে অবস্থান করে এবং পানি পারাপারের জন্য জনপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা নেয়।

একই অবস্থা রাজধানীর গ্রিন রোড এলাকাতেও। সেখানে সরেজমিন দেখা গেছে, পান্থপথ মোড় থেকে ফার্মগেট আসার রাস্তা পুরোই পানিতে ডুবে গেছে। এ ছাড়া এইচআর হোম ও এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটির সামনে পানি থৈ থৈ করছে। সেখানে কোমর পরিমাণ পানি। তাই সিএনজি অটোরিকশা, প্রাইভেট কার, মাইক্রো বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে রিকশায় চড়ে লোকজনকে পানি পাড়ি দিতে দেখা গেছে।

সিএনজি অটোরিকশার চালক আসাদুল বলেন, বৃষ্টি শুরুর কিছুক্ষণ পরেই ধানমন্ডি, শুক্রাবাদের কিছু সড়কে পানি জমে যায়। এর মধ্যে গাড়িতে যাত্রী নিয়ে আসার সময় ইঞ্জিন হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। পরে যাত্রী নামিয়ে কিছুদূর গাড়ি ঠেলে নিয়ে আসতে হয়েছে। পরে গাড়ি স্টার্ট নিয়েছে। হাতিরঝিল হয়ে গুলশানের দিকে আসার সময়ও অনেক স্থানে জলাবদ্ধতা দেখেছি।
পুলিশ প্লাজার সামনে থেকে লেকপাড় দিয়ে শাহজাদপুর যাচ্ছিলেন রিকশাচালক ইদ্রিস আলী। তিনি বলেন, হাতিরঝিলসহ গুলশান লেকপাড়ের রাস্তায় হাঁটু সমান পানি জমেছে। রিকশায় যাত্রী টানার সময় অন্য গাড়ি পাশ দিয়ে গেলে যাত্রীসহ আমি পুরোটাই ভিজে যাচ্ছি ঢেউয়ে।

রামপুরার বাসিন্দা শেখ আরিফুর রহমান বলেন, ঈদের ছুটি শেষ হয়ে যাচ্ছে। আগামীকাল থেকে অফিস খুলবে। বৃষ্টির কারণে গত দুই দিন সন্তানদের নিয়ে বের হতে পারিনি। আজ সকালে আকাশ ভালো ছিল, পরিকল্পনা করেছিলাম সবাই মিলে বিকেলে ঘুরতে যাবো। কিন্তু বৃষ্টির কারণে আজো ঘুরতে বের হওয়া সম্ভব হলো না। বৃষ্টিতে ছেলেমেয়েদের এবারের ঈদ আনন্দই মাটি হয়ে গেল।
গতকাল আবহাওয়ার অফিসের আবহাওয়াবিদ শাহীনুর রহমান জানিয়েছেন, আগামীকাল সোমবার থেকে বৃষ্টিপাত কমতে পারে। সেই সাথে বাড়তে পারে গরম।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/759122