২৮ জুন ২০২৩, বুধবার, ৮:১৪

সার আমদানির টেন্ডারে অংশ নেয়নি কোনো প্রতিষ্ঠান

সরকারের কাছে পাওনা ৬-৭ হাজার কোটি টাকা

নন-ইউরিয়া সার (টিএসপি, ডিএপি, এমওপি) আমদানির টেন্ডারে (দরপত্র) অংশ নেয়নি কোনো আমদানিকারক। কৃষি মন্ত্রণালয় ৬-৭ হাজার কোটি টাকা পাওনা না দেয়ায় বেসরকারি আমদানিকারকরা এতে অংশ নেননি। আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা পাওনা ছিল। এর মধ্যে প্রায় ৯-১০ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। বাকি প্রায় ৬-৭ হাজার কোটি টাকা কবে দেয়া হবে, তা স্পষ্ট করে কেউ বলছেন না। অন্য দিকে যথাসময়ে সরকার পাওনা টাকা না দেয়ায় বিদেশী ব্যাংকের পাওনার সাথে ইন্টারেস্টও বাড়ছে। এ ছাড়া ডলার সঙ্কটের কারণে নানা সমস্যা তো রয়েছেই। সব মিলিয়ে সরকার এসবের সমাধান না করায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সার আমদানির জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের টেন্ডারে অংশ নেয়নি বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান।

এ বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদা আক্তার গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, সরকারের কাছে পাওনা সবসময় থাকেই। আমরা রি-টেন্ডার করব। এবার তারা অংশগ্রহণ করেনি। সামনে হয়তো করবে আশা করি।

জানা যায়, কৃষি মন্ত্রণালয় প্রতি বছরের মতো ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভর্তুকির আওতায় বেসরকারি আমদানিকারকদের মাধ্যমে প্রায় দুই লাখ টন নন-ইউরিয়া সার আমদানির জন্য গত ৭ জুন দরপত্র আহ্বান করে। গত রোববার ছিল আমদানিকারকদের দরপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন। কিন্তু নির্ধারিত দিনে দেশের ৩৫-৪০ জন সার আমদানিকারকের কেউই দরপত্র জমা দেয়নি।
বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও নওয়াপাড়া ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী ফাইজুর রহমান বকুল নয়া দিগন্তকে বলেন, ডলার সঙ্কটের কারণে ব্যাংকগুলো বিদেশী সাপ্লায়ারদের পেমেন্ট করতে পারছে না। সরকারের কাছে এখন আমাদের (আমদানিকারক) পাওনা প্রায় ৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সারের দাম ৪ গুণ বাড়ছে। এ ছাড়া আরো কিছু সমস্যা রয়েছে। এসব কারণে আমাদের কেউ টেন্ডারে অংশ নেয়নি। নাম না প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আমদানিকারক বলেন, সরকারের কাছে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকার মতো পাওনা ছিল। ৯-১০ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। এখন আরো প্রায় ৬ থেকে ৭ হাজার কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। আমরা এই মুহূর্তে এই টাকা যে চাচ্ছি তা নয়। সরকার যদি মৌখিকভাবেও বলে যে, ১-২ মাসের মধ্যে শোধ করবে, তাতেও রাজি। সরকার আমাদের ডেকে বলুক, পেমেন্টটা কবে দেবে। আমরা এই নিশ্চয়তা চাচ্ছি। তিনি বলেন, বিদেশী ব্যাংক আমাদের কাছ থেকে টাকা পায়। তাদেরকে সঠিক সময়ে টাকা পরিশোধ করতে না পারায় ইন্টারেস্টসহ দেনা বাড়ছে। আরেকটি সমস্যা হলো ডলারের দামের তারতম্য। বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম নির্ধারণ করেছে ১০৮ টাকা। আমরা যেসব ব্যাংকে এলসি খুলছি তারা ১১০-১১২ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছে। এটাতে কোটি কোটি টাকা বেশি যাচ্ছে। মালটা তো সরকারের জন্যই আমরা আনছি। কেন বেশি দেবো?

আরেক আমদানিকারক বলেন, আমাদের আনা সার ইতোমধ্যে ব্যবহার করে কৃষক ঘরে ফসল তুলেছে। কিন্তু সরকার আমাদের পাওনা দিচ্ছে না। কবে দেবে সে কথাও কেউ বলছে না। এটা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। তাই আমদানিকারক কেউই টেন্ডারে অংশ নেয়নি। পাওনা টাকা পরিশোধ, ডলার সঙ্কটের সমাধান এবং ফরেন পেমেন্ট দেরিতে দেয়ার কারণে ফরেন ব্যাংকে যে ইন্টারেস্ট দিতে হচ্ছে- এসবের সমাধান করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আরেকজন আমদানিকারক বলেন, লিখিতভাবে দরকার নেই। আমাদের ডেকে বসুক। এসব সমস্যা সমাধান করুক। আমরা সরকারকে সহযোগিতা করতে চাই।

সার ব্যবসায়ীরা সাংগঠনিকভাবে নয়, ব্যক্তিগতভাবেই টেন্ডারে অংশ নেয়নি উল্লেখ করে এক ব্যবসায়ী বলেন, টেন্ডারের মাধ্যমে সরকারি কার্যাদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এমওপি, ডিএপি ও টিএসপি আমদানি করেছে। এখন সরকারের কাছে আগের পাওনা রয়েছে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা। আমদানির তিন মাসের মধ্যে টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও দীর্ঘ দিন ধরে আমদানিকারকরা পাচ্ছেন না। কবে দেবে সেটাও কেউ বলছে না। ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, ব্যাংক সুদ বেড়েই যাচ্ছে, এভাবে চলতে থাকলে অনেকেই ঋণখেলাপি হয়ে যাবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সাধারণত এপ্রিল মে মাসের দিকেই নন-ইউরিয়া সার আমদানির জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়ে থাকে। গতবারও এপ্রিল মাসে নন-ইউরিয়া সার আমদানির টেন্ডার আহ্বান করে কৃষি মন্ত্রণালয়। এবার জুনে করলেও তাতে কেউই অংশ নেয়নি। এ কারণে আগামীতে নন-ইউরিয়া সার নিয়ে সঙ্কট দেখা দিতে পারে। এ জন্য খুব দ্রুতই রি-টেন্ডার আহ্বানের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/758676