২৮ জুন ২০২৩, বুধবার, ৭:৫৩

ঘরে ফেরা মানুষের দুর্ভোগ

ছুটির দিনেও রাজধানীতে যানজট


মানুষের ঈদ যাত্রা নির্বিঘেœ করতে সরকার ছুটি একদিন বাড়িয়ে দিয়েছে। সেই হিসেবে গতকাল মঙ্গলবার থেকে সরকারিভাবে ঈদের ছুটি শুরু হয়েছে। ঘরমুখী মানুষেরা ফিরতে শুরু করেছেন নিজ নিজ বাড়িতে। কিন্তু পথের যানজটের কারণে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। আধা ঘণ্টার পথ তারা পেরোতে পারছেন না তিন ঘণ্টায়ও।

রাজধানী থেকে বের হওয়ার অন্যতম এক পথ হচ্ছে গাবতলী। কিন্তু গাবতলীতে পশুর হাট থাকায় সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানী থেকে বেরোনোর মুখে ভয়াবহ যানজটের কবলে পড়েন মানুষ। সাভার রুটে নিয়মিত যাতায়াত করা যানবাহনগুলো পড়ে ভোগান্তির কবলে। এই রুটে চলাচল করা বসুমতী বাসের হেলপার মনির বলেন, মিরপুর এক নম্বর থেকে মাজার রোড পর্যন্ত আসতে আমার দুই ঘণ্টা লাগল। এখনো গাবতলী পৌঁছতে পারি নাই। যেখানে অন্য দিন আমার মিরপুর এক নম্বর থেকে হেমায়েতপুর যেতে সময় লাগে আধা ঘণ্টা।

গতকাল কল্যাণপুর থেকে শুরু হয়ে যানজট চলে যায় আমিনবাজার সেতুর শেষ পর্যন্ত। যেসব যাত্রী গাবতলী পর্যন্ত যাবেন তারা অনেকেই বাস থেকে নেমে হেঁটে রওনা দেন গন্তব্যে। গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে যেসব বাস ঢাকা থেকে বের হয় সেসব বাসকে আটকে থাকতে হয়েছে জ্যামে। আর দূরপাল্লার যাত্রীদের বাস টার্মিনাল পর্যন্ত পৌঁছতেই পড়তে হয়েছে ভোগান্তিতে। অনেকেই নিজেদের ব্যাগ ও মালামাল নিয়ে হেঁটেই রওনা হয়েছেন বাস টার্মিনালের উদ্দেশে।

ঈদের ছুটিতে রংপুরে রওনা হন রফিকুল আলম। তিনি বলেন, আমি থাকি আদাবরে। আজ বাড়ি যাব বলে আগেই টিকিট কেটে রেখেছিলাম। আসার সময় অনেকক্ষণ জ্যামে বসে থাকতে হয়েছে। কষ্ট করে টেকনিক্যাল পার করেছি। এখন হেঁটেই যাচ্ছি বাসস্ট্যান্ডে। সাথে ব্যাগ কম থাকলে আরো আগেই বাস থেকে নেমে যেতাম।

পশুর হাটকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জায়গায় যানজট : গাবতলী থেকে থেকে বের হওয়ার কিংবা গাবতলী দিয়ে ঢাকায় ঢোকার পথে জ্যামের মূল কারণ গাবতলীর পশুর হাট। ঈদের ছুটি শুরু হওয়ায় পশুর হাটে মানুষের আনাগোনা শুরু হয়েছে। অনেকে কোরবানির পশু কিনে বাড়ি ফিরছেন। কেউ বা আবার এসেছে কিনতে বা দেখতে। এ ছাড়াও প্রতিনিছুই আসছে পশু বহনকারী পিকাপভ্যান। এতে সৃষ্টি হয়েছে দীর্ঘ যানজট। পশুর হাটকে কেন্দ্র করে এই যানজট পৌঁছে কল্যাণপুর পর্যন্ত। অপর পাশে এই যানজট পৌঁছে আমিনবাজার সেতুর শেষ পর্যন্ত।

গাবতলী পশুর হাটের সামনে কর্মরত সার্জেন্ট রাস্তার দীর্ঘ যানজট নিয়ে বলেন, পশুর হাটের কারণেই এই দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছে। দেখা যাচ্ছে যে প্রতিনিছুই মানুষজন পশু কিনে হাট থেকে বের হচ্ছেন, রাস্তা পার হচ্ছেন। এতে একটি গাড়ি চলাচলের যে স্বাভাবিক গতি তা ব্যাহত হচ্ছে। তারা চাইলেই স্বাভাবিকভাবে যেতে পারছে না। তাই দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এখানে যানজটের অন্য কোনো কারণ নেই। এই যানজট এক দিকে শহরের বাইরে, অন্য দিকে শহরের ভেতর পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছে।

গাবতলীর মতো একই চিত্র দেখা গিয়েছে গুলিস্তানে। সদরঘাটগামী বা কদমতলী রুটের বাসগুলো যানজটে আটকে যায় পুরানাপল্টন মোড়েই। চিড়িয়াখানা থেকে কদমতলী রুটে চলাচল করে দিশারী পরিবহন। এই বাসে হেলপার বলেন, আমাদের পল্টন মোড় থেকে ফুলবাড়িয়া যেতে নরমাল সময়ে ১০ মিনিটের মতো লাগে। আর আজ পল্টন থেকে গোলাপশাহ মাজার পর্যন্ত যেতেই আধা ঘণ্টা লেগে যাচ্ছে।

সদরঘাট থেকে লঞ্চে পিরোজপুর যাবেন শামীম হোসেন। তিনি বলেন, আমার ৬টায় লঞ্চ, এখন বাজে বিকেল সাড়ে ৪টা। কিন্তু রাস্তায় যে জ্যাম লেগেছে তাতে আমি ৬টার আগে সদরঘাট যেতে পারব না। তাই বাস থেকে নেমে হেঁটেই চলে যাচ্ছি।

ফুলবাড়িয়া মোড়ে দায়িত্ব¡রত সার্জেন্ট ফরিদ বলেন, যানজটের বেশ কয়েকটি কারণ আছে। এর মূলে রয়েছে রথযাত্রা, আজ (মঙ্গলবার) ফিরতি রথ ছিল। ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে রথযাত্রা জয়কালী মন্দিরের দিকে গেছে। এ কারণে বেশ কিছুক্ষণ জ্যাম ছিল। এ ছাড়া গার্মেন্ট ছুটি হওয়ার কারণে বেশির ভাগ শ্রমিক বাড়ি ফিরতে রওনা হন সদরঘাটের দিকে। তাই মানুষের একটা জ্যামও আছে। আর ঈদের সময় স্বাভাবিকভাবেই তুলনামূলক জ্যাম কিছুটা বেশি থাকে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/758700