২৭ জুন ২০২৩, মঙ্গলবার, ৭:২২

উড়ালপথের নিচের রাস্তা, বছরে ক্ষতি ২১ হাজার কোটি টাকা

রাজধানীর যানজট নিরসনে গত দুই দশকে উড়ালপথ, উড়াল সেতু, বিআরটি, ইউ লুপ, মেট্রো রেলসহ নানা প্রকল্পে উড়াল সেতু (ফ্লাইওভার) নির্মিত হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় বিস্তৃত মোট ১০৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এসব উড়ালপথের নিচে দখল-বেদখল, ব্যবহার-অব্যবহার ও অপব্যবহারে পড়ে আছে প্রায় ২০৭ একর জমি। ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকায় এটি মূল্যবান নগর-সম্পদের অপচয়। এর নেতিবাচক প্রভাবে প্রতিবছর সামাজিক, অর্থনৈতিক, পরিবেশগত ও জনস্বাস্থ্যগত ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ওপরে।

প্রতি ডলার ১০৭ টাকা মূল্য ধরে বাংলাদেশি মুদ্রায় যা অন্তত ২১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।

সম্প্রতি জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) অর্থায়নে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ইনক্লুসিভ আর্কিটেকচার অ্যান্ড আরবানিজমের (সিআইএইউ) গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। সিআইএইউ বলছে, ঢাকার আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে জনকল্যাণমুখী ও জনস্বাস্থ্যবান্ধব পরিকল্পনার মাধ্যমে উড়ালপথের নিচের এই মূল্যবান নগর-জমিকে সম্পদে পরিণত করা সম্ভব।
গত রবিবার ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সিআইএইউয়ের সেমিনারকক্ষে এক অনুষ্ঠানে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়।
সিআইএইউয়ের নির্বাহী পরিচালক স্থপতি অধ্যাপক আদনান জিল্লুর মোর্শেদ মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

মূল প্রবন্ধে আদনান জিল্লুর মোর্শেদ জানান, উড়াল সেতু যেমন নগরের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগব্যবস্থাকে গতিশীল করছে, তেমনি এর নিচের জায়গাগুলোও গণপরিসর তৈরিতে ও জনকল্যাণমুখী কাজে ব্যবহার করার সুযোগ আছে।

তিনি বলেন, মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার ও মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের নিচে বেশ কিছু জায়গায় পার্কিং, পাবলিক টয়লেট, পুলিশ বক্স, মসজিদ, অস্থায়ী কাঁচাবাজার, ভাগাড় এবং ছোট দোকান গড়ে উঠেছে। কোথাও কোথাও অন্ধকারে ছিন্নমূল মানুষের থাকার জায়গা চোখে পড়েছে।

কিছু জায়গায় নিম্নবিত্ত ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা জীবিকা নির্বাহ করছেন এবং পথশিশুরা খেলাধুলার জন্য ব্যবহার করছে। অনেক সময় অন্ধকারাচ্ছন্ন জায়গাগুলোয় মাদক সেবন ও মাদক কেনাবেচা হয়। পথচারীদের জন্যও এটি নিরাপত্তার হুমকি। সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে কিছু জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে সবুজায়ন হয়েছে। মূল বিষয় হলো, সামগ্রিকভাবে এ নিয়ে কোনো নীতিমালা নেই।

ফলে বেশির ভাগ জমির সুষম ব্যবহার নিশ্চিত হয়নি।
আদনান জিল্লুর মোর্শেদ বলেন, ‘উন্নত দেশগুলোয় ফ্লাইওভার ও এলিভেটেড স্ট্রাকচারের নিচের অংশে জনবান্ধব, টেকসই ও সাশ্রয়ীভাবে ব্যবহার উপযোগী কমিউনিটি জোন তৈরি করা হচ্ছে। সেখানে রয়েছে হাঁটাচলার পথ ও সাইকেলের লেন, নগর-কৃষি, বাগান, বনায়ন ও খেলাধুলার ব্যবস্থা। কিছু জায়গায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ও শরীরচর্চা কেন্দ্র, সুইমিংপুল, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ এবং পথনাটক ও শিল্পকর্ম প্রদর্শনের ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে।’

সিআইএইউয়ের নির্বাহী পরিচালক আরো বলেন, ‘উড়ালপথের মতো অবকাঠামোর বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজন সদিচ্ছা। এ বিষয়ে নগর প্রশাসনের সঙ্গে জড়িত সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করা এবং পরিকল্পনাগত ঘাটতি পূরণে অবদান রাখাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য।’

সিআইএইউ জানিয়েছে, এ গবেষণা প্রকল্পের পদ্ধতি হিসেবে ঢাকার বিভিন্ন উড়াল সেতুসংলগ্ন এলাকার স্থানীয় লোকজনের মধ্যে নৃতাত্ত্বিক জরিপ করা হয়েছে, যেখানে ব্যবসায়ী, অস্থায়ী দোকানদার, বাসাবাড়ির মানুষ, পথচারী এবং সড়কের শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীর সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। জরিপে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে তাঁদের প্রতিদিনকার জীবনে উড়াল সেতু এবং এর নিচে ঢাকা পড়া জায়গার প্রভাব নিয়ে সমীক্ষা চালানো হয়েছে।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2023/06/27/1293838