২৬ জুন ২০২৩, সোমবার, ১২:২৫

বছরের ব্যবধানে আদার দাম বেড়েছে চারগুণ

এক বছর আগের এই দিনে প্রতি কেজি আদা বাজারে বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ১৪০ টাকা। এক বছর পরে এসে সেই একই আদা বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা কেজি দরে। প্রতি কেজি আদার দাম বেড়েছে প্রায় চারগুণ। দুই মাস আগেও একই আদা বিক্রি হয়েছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে। টিসিবির ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে এমন চিত্র দেখা গেছে। কোরবানির ঈদ সামনে রেখে আদা কিনতে গিয়ে অস্বস্তিতে পড়ছে সাধারণ মানুষ।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, বাজারে আমদানি নির্ভর এই পণ্যটির সরবরাহ এখন কম। অন্য বছরগুলোতে স্থানীয় পর্যায়ে যে পরিমাণ আদা উৎপাদিত হয়, সেটাও এবার কমেছে। এসব কারণে আদার দামে এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে এ বছর আদার উৎপাদন কম হয়েছে। আমদানিও কম হয়েছে। এ জন্য দাম অনেক বেশি। আমাদের দেশে যে আদা আমদানি হয় সেখানে প্রায় ৫০ শতাংশ চীনা আদা এবং বাকিগুলো অন্যান্য দেশের। তবে দেশে চীনা আদার চাহিদা বেশি। কয়েকদিন ধরেই চীনের আদা আসছে না। তাই বাজারে আদার কিছুটা সঙ্কট দেখা দিয়েছে। চীনা আদা বাজারে নেই বললেই চলে। আদা ছাড়াও কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে দেশী পেঁয়াজ, রসুন, শুকনা মরিচ, হলুদ, দারুচিনিসহ বেশিরভাগ মসলার দাম বেড়েছে।
মসলার পাইকারি বাজার ঘুরে মিয়ানমার, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ার আদা মিলছে। মানভেদে এসব আদার দাম পাইকারি ১২০ থেকে ২৫০ টাকা। আর কারওয়ান বাজারে তা খুচরায় প্রতি কেজি ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা। ৩৮০ টাকার জিরা বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ টাকায়। টিসিবির হিসাবে এক বছর আগে প্রতি কেজি জিরা সর্বনিম্ন ৩৮০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৪৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে জিরার দাম বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। বেড়েছে শুকনা মরিচের দামও। এক বছর আগে দেশী শুকনা মরিচ যেখানে ২২০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, সেই মরিচ শ্যামবাজারে ৩০০ থেকে ৩৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভারতীয় শুকনা মরিচ বিক্রি হচ্ছে আরো বাড়তি দামে ৩৮০ টাকা কেজি। খুচরা বাজারে, যেমন কারওয়ান বাজারে বিদেশী শুকনা মরিচ ৪৮০ টাকা দাম হাঁকাতেও দেখা গেছে। দেশী পেঁয়াজের জন্য এখনো বাড়তি দাম গুণতে হচ্ছে। শ্যামবাজারে দেশী পেঁয়াজ ৫৫ থেকে ৬১ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। খুচরা বাজারগুলোয় তা ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। টিসিবির হিসাবে তার এক বছর আগে দেশী পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। কারওয়ান বাজারে দেশী রসুন ১৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এক বছর আগে ২০২২ সালের ২২ জুন টিসিবির হিসাবে দেশী রসুন বিক্রি হয় সর্বনিম্ন ৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৮০ টাকায়। অর্থাৎ ক্ষেত্রভেদে দ্বিগুণের বেশি হয়েছে রসুনের দামও। কারওয়ান বাজার, শ্যামপুর ও সূত্রাপুর বাজারে প্রতি কেজি ধনিয়া ১৬৫ থেকে ২২০ টাকায়, লবঙ্গ ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায় এবং দারুচিনি ৪১০ থেকে ৪৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর টিসিবির হিসাবে বছরখানেক আগে ধনিয়া ১২০ থেকে ১৫০ টাকায়, লবঙ্গ ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় এবং দারুচিনি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলার-সঙ্কটের কারণে আমদানিকারকরা পর্যাপ্ত পরিমাণে মসলা আমদানি করতে পারছেন না। আন্তর্জাতিক বাজারেও কিছু কিছু মসলার দাম বেশি। আমদানি খরচও বেড়েছে। তাছাড়া সার, জ্বালানি ও শ্রমিক খরচ বাড়ায় দেশেও মসলার উৎপাদন খরচ বেড়েছে। সেই সাথে পরিবহন খরচও বেশি। মূলত এসব কারণে বেড়েছে মসলার দাম।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদ সামনে রেখে প্রচুর মসলা এসেছে দেশে। পাশাপাশি মসলা উৎপাদন বাড়াতে সরকারের উদ্যোগ রয়েছে। তারপরও প্রায় অর্ধেক মসলা আমদানি করতে হচ্ছে প্রতি বছর। সেজন্য এ খাতে দেশ থেকে বিদেশে চলে যাচ্ছে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা। তারপরেও ক্রেতার স্বস্তি মিলছে না এসব কিনতে গিয়ে।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/758244