২২ জুন ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ১১:১২

ফের পদ্মা সেতু নির্মাণ ব্যয় বাড়ছে ১,১১৮ কোটি টাকা

আবারো বাড়ছে পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয়। এ দফায় নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে ১ হাজার ১১৮ কোটি টাকা। ব্যয় বাড়ার কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নকশা প্রণয়নে অতিরিক্ত সময় লাগা, ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়াসহ সাতটি কারণকে চিহ্নিত করেছে। এ জন্য বৈদেশিক মুদ্রায় ৯ কোটি ৫০ লাখ ৩১ হাজার ডলার অতিরিক্ত খরচ করতে হবে। উল্লেখ্য, এর আগেও আরো কয়েকবার পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয় বাড়ানো হয়েছিল।

জানা গেছে, বর্তমানে পদ্মা সেতু নির্মাণ ব্যয় ৩৩ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এর সাথে এখন নতুন করে আরও ১ হাজার ১১৮ কোটি টাকা যোগ হচ্ছে। ২০০৭ সালে প্রথম প্রকল্পটি অনুমোদনের সময় ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার ১৬২ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের আন্তর্জাতিক নকশা প্রণয়নকারী ডিজাইন প্রতিষ্ঠান ‘ম্যাউনসেল এইকম’ মূল সেতুর নদীর মধ্যে অবস্থিত ৪০টি পিয়ারের মধ্যে ১০টি পিয়ারে সয়েল টেস্ট করে ডিজাইন প্রণয়ন করে। ডিজাইন রিপোর্টে বাস্তব কাজের সময় প্রতিটি পিয়ারে আলাদাভাবে সয়েল টেস্ট ও লোড টেস্ট করে সেতুর কাজ সম্পাদনের নির্দেশনা দেয়া ছিল। পরবর্তীতে বাস্তব কাজ করার সময় ২২টি পিয়ারে মাটির গুণগত মান নরম হওয়ায় পাইল পুনঃডিজাইনের প্রয়োজন হয়। পুনঃডিজাইন প্রণয়ন ও আনুষঙ্গিক কাজ করতে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ৪৩ মাস বেশি সময় লাগে। ঠিকাদার কাজের অতিরিক্ত ৪৩ মাস সময় বৃদ্ধিজনিত কারণে ১৩৭ কোটি ৯৯ লাখ টাকা ব্যয় বেড়ে যায়।

দ্বিতীয় কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, মূল সেতুর কাজের সময় বৃদ্ধি পাওয়ায় ঠিকাদারের বিদেশ থেকে আমদানি করা বৃহৎ আকৃতির ক্রেন, হ্যামারসমূহ প্রকল্প এলাকায় ৪৩ মাস অতিরিক্ত অবস্থান করাতে হয়েছে। ফলে যন্ত্রপাতির ভাড়া, ওয়েটিং চার্জ, ব্যবস্থাপনা খরচ ইত্যাদি খাতে ব্যয় বেড়েছে ৭৭০ কোটি ৬১ লাখ টাকা।

তৃতীয়ত, মূল সেতুর ২২টি পিয়ারের ডিজাইন পরিবর্তনের কারণে ৬টি পাইলের পরিবর্তে ৭টি পাইল করার প্রয়োজন হয়। ২২টি পাইল বাড়ার কারণে ব্যয় বেড়েছে আরও ৪৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।

চতুর্থত, মাওয়া প্রান্তের মাটির লিকুইফিকেশন সমস্যা থাকায় ভূমিকম্পজনিত ক্ষতি প্রতিরোধের জন্য ভায়াডাক্টের পাইলে স্কিন গ্রাউটিং করার জন্য ব্যয় বেড়েছে ৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। পঞ্চমত, ৪০০ কেভি বিদ্যুৎ লাইনের টাওয়ারের জন্য ফাউন্ডেশন প্লাটফর্ম নির্মাণে ব্যয় বেড়েছে ৪০৭ কোটি ৮৯ টাকা।

অন্যান্যের মধ্যে চুক্তিকালীন মার্কিন ডলারের বিনিময় হার ছিল ৭৮ টাকা ৩০ পয়সা। প্রতি বছর ডলারের দাম বৃদ্ধির ফলে ঠিকাদারের বৈদেশিক মুদ্রায় অতিরিক্ত ১০৫ কোটি ৪ লাখ মার্কিন ডলার পরিশোধের জন্য ব্যয় বেড়েছে ১৯৯ কোটি ২৭ লাখ টাকা।
এ ছাড়া সরকার কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে ভ্যাট ও আয়কর হার ১০ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর ফলে ব্যয় বেড়েছে ৩১০ কোটি ২৯ লাখ টাকা।

সূত্র মতে, উল্লেখিত আইটেমে ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় মূল সেতু নির্মাণে মোট ১ হাজার ৮৭৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা বেড়েছে। অন্য দিকে, বেশ কয়েকটি বিলে ৩৫০ কোটি ৮৭ লাখ টাকা খরচ কমেছে। এ ছাড়া সেতুর কাজের জন্য অতিরিক্ত ভ্যাট ও আয়কর ৪০৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যতীত নিট ব্যয় বেড়েছে ১ হাজার ১১৭ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।

জানা গেছে, মূল সেতুর অনুমোদিত মোট চুক্তিমূল্য ১২ হাজার ১৩৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশী মুদ্রায় ৩ হাজার ১০৬ কোটি ১৪ লাখ ৮৬ হাজার টাকা এবং বৈদেশিক মুদ্রায় ১১৫ কোটি ২৯ লাখ ৪ হাজার ৭৮২ ডলার পরিশোধের কথা ছিল। মূল সেতুর কাজের প্রস্তাবিত সংশোধিত চুক্তিমূল্য ১৩ হাজার ৬৫৮ কোটি ৯৯ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশী মুদ্রায় ৫ হাজার ৪৩৪ কোটি ৬৯ লাখ ৫৫ হাজার টাকা (৩৯.৭৯%) এবং বৈদেশিক মুদ্রায় ১০৫ কোটি ৩ লাখ ৫৮ হাজার ১৩১ ডলার পরিশোধ করতে হবে।
প্রস্তাবিত চুক্তিমূল্য সরকার অনুমোদন দিলে বৈদেশিক মুদ্রায় ১০ কোটি ২৫ লাখ ৪৬ হাজার ৬৫১ ডলার কম প্রয়োজন হবে। উল্লেখ্য যে, মূল সেতুর কাজের জন্য ঠিকাদারকে আইপিসি-৯৩ পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রায় ৯৫ কোটি ৫৩ লাখ ২৭ হাজার ২৪৫ ডলার (৯০.৯৬%) পরিশোধ করা হয়েছে এবং অবশিষ্ট ৯ কোটি ৫০ লাখ ৩০ হাজার ৮৮৬ ডলার পরিশোধ করতে হবে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/757311