বাজারে চিনির দাম বেড়েই চলেছে। তবু দিনাজপুরের একমাত্র ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান সেতাবগঞ্জ চিনিকলে ২০২০ সাল থেকে আখ মাড়াই কার্যক্রম বন্ধ। এ অবস্থার মধ্যেই এই চিনিকলে আট কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি করা হয়েছে বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি)। তাই সেটি অব্যবহৃতই পড়ে আছে।
চিনিকল সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের বাস্তবায়নাধীন ও বাংলাদেশ সরকারের (জিওবি) অর্থায়নে বর্জ্য শোধনাগারের কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের ১ জুলাই। ২০২০ সালের ৩০ জুনের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ বি এম ওয়াটার কম্পানি লিমিটেড বেঁধে দেওয়া সময়ের অতিরিক্ত তিন বছর পরও শোধনাগারটি হস্তান্তর করেনি। শোধনাগার প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় আট কোটি ১০ লাখ ৩১ হাজার টাকা।
সেতাবগঞ্জ চিনিকল প্রতিষ্ঠার ৮০ বছর পর বর্জ্য শোধনাগার পুরোপুরি তৈরি হওয়ার আগেই আখ মাড়াই কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। এতে বন্ধ হয়ে যায় চিনি উৎপাদন। ফলে আট কোটি টাকার ইটিপি প্রকল্প বাস্তবায়িত হলেও মূলত তা কোনো কাজে লাগছে না।
সেতাবগঞ্জ চিনিকল সূত্রে জানা যায়, ৪০০ কোটি টাকা লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে দেশের ছয়টি চিনিকলের সঙ্গে সেতাবগঞ্জ চিনিকলেরও আখ মাড়াই কার্যক্রম স্থগিত করে দেয় সরকার।
এর পর থেকে আড়াই বছর ধরে সেখানে কোনো চিনি উৎপাদিত হচ্ছে না। সেই হিসাবে বন্ধ ছয়টি চিনিকলের বর্জ্য শোধনাগার নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৪৮ কোটি ৬১ লাখ ৮৬ হাজার টাকা।
এদিকে সেতাবগঞ্জ চিনিকলের অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারীরা জানান, ২০১৭ সাল থেকে অবসরপ্রাপ্ত ২১৬ জন শ্রমিক-কর্মচারীর গ্র্যাচুইটির আনুমানিক ১১ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের প্রতিটি পরিবার সময়মতো টাকা না পাওয়ায় মানবেতর জীবন যাপন করছে।
সেতাবগঞ্জ চিনিকল শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি প্রশান্ত কুমার চৌহান বলেন, ‘চিনিকলে আখ মাড়াই কার্যক্রম স্থগিত রাখার বিষয়টি দুঃখজনক।
অনেক শ্রমিক-কর্মচারী বেকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এ কারণে বর্জ্য পরিশোধনাগারটিও কোনো কাজে আসছে না। মাঝখান থেকে সরকারের কয়েক কোটি টাকা অপচয় হলো।’
সেতাবগঞ্জ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘এই চিনিকলের বর্জ্য শোধনাগারটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ বি এম ওয়াটার কম্পানি লিমিটেড আমাদের কাছে এখনো হস্তান্তর করেনি। তবে চিনিকলের উৎপাদন চালু থাকলে শোধনাগারটি ব্যবহার করে সুফল পাওয়া যেত।’
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘অবশ্যই কোনো একদিন সেতাবগঞ্জ চিনিকলটি উৎপাদনে ফিরে আসবে। তখন বর্জ্য শোধনাগারটিও চালু হবে।’