২১ জুন ২০২৩, বুধবার, ১:৪৯

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র হলে রাতভর নির্যাতন যৌন হয়রানি

আতঙ্কে হল ছেড়েছেন ভুক্তভোগী

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) লালন শাহ হলের গণরুমে থাকা নবীন শিক্ষার্থীকে রাতভর নির্যাতন ও যৌন হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগী ওই ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।

রোববার রাতে লালন শাহ হলে ১৩৬ নম্বর কক্ষে (গণরুম), হল গেট, জিয়া হল মোড়ে দফায় দফায় রাত ১২টা থেকে রাত সাড়ে ৩টা পর্যন্ত তাকে নির্যাতন করা হয়। এ ঘটনায় বিচার চেয়ে মঙ্গলবার ভুক্তভোগী ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা ও প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। চারুকলা বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আফিফ হাসান ও তন্ময় বিশ্বাসসহ কয়েকজন তাকে দফায় দফায় নির্যাতন ও যৌন হয়রানির করে বলে অভিযোগ করা হয়। এ ঘটনার পর আতঙ্কে হল ছেড়ে মেসে অবস্থান করছেন ওই শিক্ষার্থী।
ভুক্তভোগীর দেওয়া অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী হলের গণরুম ৩৩০ নম্বর কক্ষে থাকেন। রোববার রাত ২টার দিকে তাকে অন্য গণরুম ১৩৬ নম্বর কক্ষে ডাকেন চারুকলা বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আফিফ হাসান ও তন্ময় বিশ্বাস। এ সময় ওই কক্ষে আরও বেশ কয়েকজন অবস্থান করছিলেন। তারা ভুক্তভোগীর ওপর মানসিক, শারীরিক অত্যাচার ও নানা কার্যক্রমের মাধ্যমে যৌন হয়রানি করে।

এ ঘটনার পর ভয়ে ওই শিক্ষার্থী হল থেকে বের হয়ে যান। পরে ভুক্তভোগী তার বিভাগের সিনিয়র ও হল ছাত্রলীগ কর্মী ফাহিম ফয়সালকে বিষয়টি জানান। তিনি তাকে হলে আসতে বলেন। পরে হলে প্রবেশের সময় তাকে আবারও মারধর করে অভিযুক্তরা। এ সময় তাকে মারতে মারতে জিয়া মোড়ে নিয়ে আসা হয়। সেখানে তার জামা ছিঁড়ে ফেলে অভিযুক্তরা। এ সময় তার চশমা ভেঙে যায়। পরে বিচারের জন্য ছাত্রলীগের কক্ষে (শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের কক্ষ) নিয়ে সেখানে ফের মারধর করা হয় বলে লিখিত অভিযোগপত্রে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী।

ভুক্তভোগী ও আবাসিক শিক্ষার্থী সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী ৩৩০ নম্বর কক্ষে ও অভিযুক্তরা ১৩৬ নম্বর কক্ষে থাকেন। রাত সাড়ে ১২টার দিকে হলের ছাদে ভুক্তভোগীকে ফোনে কথা বলতে দেখে অভিযুক্তরা তাকে ডেকে পরিচয় পর্বের পর ১৩৬ নম্বর কক্ষে দেখা করতে বলেন। সেখানে তার ওপর বিভিন্ন ভাবে র‌্যাগিং করা হয়। র‌্যাগিংয়ের এক পর্যায়ে তাকে নগ্ন করে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করতে বাধ্য করা হয় বলে জানান ভুক্তভোগী। এ ছাড়া আরও এমন কিছু করতে বাধ্য করা হয়, যেটি অপ্রকাশযোগ্য।

অভিযুক্ত আফিফ হাসান বলেন, মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি। কিছুটা মনোমালিন্য হয়েছিল। পরে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয় ভাই বিষয়টি মীমাংসা করে দিয়েছেন। অপর অভিযুক্ত তন্ময় বিশ্বাসও একই বক্তব্য দেন।
শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয় সাংবাদিকদের বলেন, গণরুমের দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছিল। তারা আমার কাছে এলে আমি মীমাংসা করে দিয়েছি। দফায় দফায় মারধরের বিষয়টি আমি জানি না।

ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরীন সাংবাদিকদের বলেন, ‘অফিস সময়ের শেষ দিকে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। আজ বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে পারিনি। সে অভিযোগে যে বিষয়টি উল্লেখ করেছে সেটি কোনো ভাবেই শোভনীয় নয়। আবেদনটি গুরুত্বসহকারে আমলে নেওয়া হয়েছে। অভিযুক্তদের আগামীকাল ডেকে তাদের থেকে অধিকতর তথ্য সংগ্রহ করা হবে।’
প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, আমার অফিসের কর্মকর্তা আমাকে জানিয়েছে, শেষ সময়ে একটি অভিযোগ এসেছে। কাল অফিসে গিয়ে বিষয়টি দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেব।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/688398