২০ জুন ২০২৩, মঙ্গলবার, ১০:৩৭

জনপ্রভু নয় জনসেবক

-ইকতেদার আহমেদ

দেশের জনসাধারণের প্রদত্ত করের অর্থে গঠিত রাষ্ট্রীয় কোষাগারে রক্ষিত অর্থ থেকে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিদের বেতন, ভাতা ও সুযোগ-সুবিধাদি নির্বাহ করা হয়। দেশের সংবিধানে প্রজাতন্ত্রের কর্মের যে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে তাতে বলা হয়েছে- প্রজাতন্ত্রের কর্ম অর্থ অসামরিক বা সামরিক ক্ষমতায় বাংলাদেশ সরকারসংক্রান্ত যেকোনো কর্ম, চাকরি বা পদ এবং আইনের দ্বারা প্রজাতন্ত্রের কর্ম বলে ঘোষিত হতে পারে এরূপ অন্য কোনো কর্ম। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠিত রাষ্ট্রপতি, সরকারের শীর্ষ নির্বাহী প্রধানমন্ত্রী, সরকারের মন্ত্রিবর্গ এবং সরকারি কর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গের বেতন, ভাতা ও সুযোগ-সুবিধাদি সরকার কর্তৃক নির্বাহ করা হয়।

অতীতে সরকারি কর্মচারীদের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ এ চারটি শ্রেণী বিভাগ ছিল। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত সরকারি কর্মচারীরা কর্মকর্তা নামে অভিহিত হতেন এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত সরকারি কর্মচারীরা কর্মচারী নামে অভিহিত হতেন। ২০১৫ সালে ঘোষিত অষ্টম বেতন স্কেলে সরকারি কর্মচারীদের গ্রেডভিত্তিক পরিচিতিতে বলা হয়- সরকারি কর্মচারীগণ প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে বিভাজনের বিদ্যমান ব্যবস্থার পরিবর্তে বেতন স্কেলের গ্রেডভিত্তিক পরিচিত হবেন। অষ্টম বেতন স্কেলে ২০টি গ্রেড রয়েছে। গ্রেড-১ হতে গ্রেড-৯ এর কর্মচারীরা অতীতের প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্ত, গ্রেড-১০ থেকে গ্রেড-১২ এর কর্মচারীরা অতীতের দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্ত, গ্রেড-১৩ থেকে গ্রেড-১৬ এর কর্মচারীরা অতীতের তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীদের অন্তর্ভুক্ত এবং গ্রেড-১৭ থেকে গ্রেড-২০ এর কর্মচারীরা অতীতের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের অন্তর্ভুক্ত।

অতীতের চতুর্থ শ্রেণীভুক্ত কর্মচারীদের মধ্যে চাপরাসি, আর্দালি, পিয়নের পদবি ছিল এমএলএসএস (Member of Lower Subordinate Staff), ঝাড়–দার ও ক্লিনারের পদবি ছিল সুইপার, নৈশপ্রহরীর পদবি ছিল নাইট গার্ড এবং গাড়ি চালনায় নিয়োজিতদের পদবি ছিল ড্রাইভার। এ সব পদবি একজন কর্মচারীও তার পরিবারের সদস্যদের নিকট তার মর্যাদা ও আত্মসম্মানের জন্য হানিকর এ বিবেচনায় পদবিগুলো পরিবর্তন করে যথাক্রমে অফিস সহায়ক, পরিচ্ছন্নতা কর্মী, নিরাপত্তা প্রহরী ও গাড়ি চালক নামকরণ করা হয়।
জনপ্রতিনিধি ও জনসেবক উভয়েই প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত ব্যক্তি। এদের মধ্যে পার্থক্য হলো প্রথমোক্তরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত। অপর দিকে শেষোক্তরা যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারের কর্মে নিয়োজিত। এদের বিষয়ে সংবিধানে উল্লেখ রয়েছে- এদের কর্তব্য হবে সব সময়ে জনগণের সেবায় নিয়োজিত থাকা। জনপ্রতিনিধি ও জনসেবক উভয়ের জনগণের নিকট দায়বদ্ধতা রয়েছে। জনপ্রতিনিধি ও জনসেবকদের সদাসর্বদা দেশ ও জনগণের সেবায় সচেষ্ট থাকার কথা থাকলেও এদের অধিকাংশই যে এ পথ হতে বিচ্যুত সে বিষয়ে আজ কারো মধ্যে কোনো সংশয় নেই।

জাতীয় বা স্থানীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হলে জনমতের প্রতিফলনে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ প্রার্থীগণ নির্বাচিত হন। নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে পেশিশক্তির বলে বলীয়ানরা নির্বাচিত হন। পেশিশক্তির বলে নির্বাচিতদের দায়বদ্ধতা জনগণের নিকট না যতটুকু তার চেয়ে অনেক অধিক পেশি শক্তিধারীদের নিকট। পেশিশক্তি বলে নির্বাচিতরা প্রকৃত অর্থেই জনপ্রতিনিধি কি না এ বিষয়েও বিতর্ক রয়েছে।

জনপ্রতিনিধি ও জনসেবক উভয়েই গণকর্মচারী। জনপ্রতিনিধি ও জনসেবক পদে বহাল থাকাকালীন দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদ আহরণ করলে উভয়ের গণকর্মচারী হিসেবে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর অধীন মামলা পরবর্তী বিচার হয়।

জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে যারা সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত এবং জনসেবকদের মধ্যে যুগ্ম সচিব ও তদূর্ধ্ব এবং সম পদমর্যাদাধারীরা বিদেশ গমন ও বিদেশ হতে ফেরত আসার সময় বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ দিয়ে যাতায়াত করেন। এদের যাতায়াতকালে এদের সাথে একাধিক ব্যক্তি ভিআইপি লাউঞ্জে অবস্থান করেন। একজন সাধারণ যাত্রী বিমানবন্দর দিয়ে বিদেশ গমন বা বিদেশ থেকে ফেরত আসার সময় তার আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব বা শুভাকাক্সক্ষী কেউ তাকে বিদায় বা অভ্যর্থনা জানাতে বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে চাইলে জনপ্রতি ৩০০ টাকা দিতে হয়। আমাদের বিদেশ যাত্রীদের একটি বড় অংশ মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ায় কর্মরত শ্রমিক। এসব শ্রমিকের পাঠানো কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রার কারণে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডার আজ স্ফীত। বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডার স্ফীত হওয়ার কারণে আমদানি ব্যয় ও বৈদেশিক ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধে সরকার অত্যন্ত সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে। যাদের অবদানের কারণে সরকারের এ সুবিধাজনক অবস্থান তারাসহ তাদের আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও শুভাকাক্সক্ষীরা সরকারের সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এদের যখন বিমানবন্দরে অর্থ দিয়ে প্রবেশ করতে হয় তখন জনপ্রতিনিধি ও জনসেবকদের সাথে থাকা লোকজনের বিনা অর্থে ভিআইপি লাউঞ্জের সুবিধা গ্রহণ কতটুকু আইনসম্মত? পৃথিবীর সব উন্নত দেশে বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ সরকার থেকে ইজারা নিয়ে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয়। এসব দেশে জনপ্রতিনিধি বা জনসেবকসহ সরকারি-বেসরকারি যেকোনো ব্যক্তি ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করতে চাইলে নির্ধারিত অঙ্কের অর্থ পরিশোধ করতে হয়। আমাদের দেশে জনপ্রতিনিধি ও জনসেবকরা নিজ দেশে কোনোরূপ অর্থ প্রদান ব্যতিরেকে যেভাবে ভিআইপি লাউঞ্জের সুবিধা ভোগ করেন তারা যেকোনো উন্নত দেশে গেলে সেসব দেশের সব নাগরিকের মতো তাদেরও অর্থ দিয়ে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করতে হয়।

আমাদের জনপ্রতিনিধি ও জনসেবকদের অনেকেই গানম্যানের সুবিধা ভোগ করে থাকেন। তারা যানবাহনযোগে চলাচলের সময় তাদের যানবাহনের সামনের আসনে গানম্যান উপবিষ্ট থাকেন। এদের কারো কারো বাহনের সামনে-পিছনে আবার কারো বাহনের শুধুমাত্র সামনে অথবা পেছনে নিরাপত্তারক্ষীদের বাহন থাকে। এরূপ নিরাপত্তারক্ষীদের বাহন সাইরেন বাজিয়ে অথবা নিরাপত্তারক্ষীদের হাতে থাকা ইলেকট্রনিক সিগন্যাল স্টিকের মাধ্যমে জনপথে তাদের সরব উপস্থিতির জানান দেয়। প্রায়ই দেখা যায় এদের চলাচল ত্বরিত করার জন্য নির্ধারিত সিগন্যালে এদের বাহনকে থামতে হয় না আবার উল্টো পথ দিয়ে সদর্পে বাহন চালাতে কখনো এদেরকে দ্বিধান্বিত হতে দেখা যায় না। জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে রাষ্ট্র ও সরকারের শীর্ষ পদে আসীনদের চলাচলের সময় অপর সবার চলাচলের পথ রোধ করা হয়। এ রোধের স্থায়িত্বকাল আগমন ও প্রস্থানের সময় ৪০-৬০ মিনিট স্থায়ী হয়। যানজটের কারণে ঢাকা শহরবাসী এমনিতেই নাকাল। এভাবে যেদিন অপরাপরের পথ রোধ করা হয় সেদিন যানজটের তীব্রতা আরো বাড়তে দেখা যায় এবং এর রেশ গভীর রাত অবধি থাকে।
জনসেবকদের মধ্যে সরকারের ক্ষমতার প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে যারা পদস্থ পদে কর্মরত এদের বিভিন্ন পর্যায়ে যেমন উপসচিব, যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও সচিব পদে নির্ধারিত সংখ্যক পদ রয়েছে। এ ধরনের যেকোনো পদে শূন্যতা দেখা দিলে পদোন্নতির অবকাশ সৃষ্টি হয়। কিন্তু বিগত এক দশক অবধি দেখা যাচ্ছে শূন্যপদ না থাকা সত্ত্বেও পদোন্নতি দিয়ে এরূপ পদস্থদের সন্তুষ্ট করার প্রয়াসে এক দিকে চাকরির নিয়ম, নীতি ও শৃঙ্খলা ভেঙে ফেলা হচ্ছে অপর দিকে এদের স্বপদে কর্মহীনভাবে বসিয়ে রেখে জনগণের করের টাকার অপচয় করা হচ্ছে।

সরকার কর্তৃক সর্বশেষ যে বেতন স্কেল ঘোষিত হয়েছে তাতে সরকারের সর্বোচ্চ পদে নিয়োজিত সচিবদের জন্য যে বেতন, ভাতা ও সুবিধাদির সংস্থান করা হয়েছে তা সরকারের আর্থিক সামর্থ্য এবং দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় অপর্যাপ্ত এমনটি দাবি করার কোনো অবকাশ নেই। সচিবরা চালকসমেত গাড়ি ব্যবহারের জন্য সরকার কর্তৃক প্রাধিকারপ্রাপ্ত। সম্প্রতি সচিবসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন যেসব কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক চালকসমেত সরকারি গাড়ি ব্যবহারের জন্য প্রাধিকারপ্রাপ্ত সরকারের পক্ষ থেকে তাদের সরকার প্রদত্ত গাড়ি ও চালকের পরিবর্তে বিনা সুদে গাড়ি ক্রয়ের জন্য ৪৫ লাখ টাকা ঋণ এবং গাড়ি চালকের বেতন ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ মাসিক ৪৫ হাজার টাকা ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সচিবসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন অনেক কর্মকর্তা এ সুবিধাটি গ্রহণ করেছেন কিন্তু তারা ঠিকই মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বিভাগ অথবা প্রকল্প থেকে একাধিক গাড়ি ব্যবহার করে সরকার প্রদত্ত গাড়ির অভাব পূরণ করে চলেছেন। আর তাই যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে গাড়ি ক্রয়ের জন্য সুদবিহীন ঋণ ও রক্ষণাবেক্ষণ ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে তা সার্বিক বিবেচনায় ব্যাহত হতে চলেছে।

অধিকাংশ সচিব ও সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে দেখা গেছে জনগণের সেবা ও নিরাপত্তার চেয়ে নিজ সেবা ও নিরাপত্তার বিষয়ে অধিক নিমগ্ন। অতীতে সচিবদের জন্য বাসগৃহে বাবুর্চি ও নিরাপত্তা প্রহরীর ব্যবস্থা ছিল না। সাম্প্রতিক সময়ে সরকার সচিবদের জন্য বাবুর্চি ও নিরাপত্তা প্রহরীর পরিবর্তে উভয়ের জন্য ১৬ হাজার টাকা করে ৩২ হাজার টাকা ভাতার ব্যবস্থা করেছে। সচিবরা ইতোপূর্বে তিন হাজার টাকা গৃহস্থালি বাবুর্চি ভাতাপ্রাপ্ত হতেন। সচিবরা যখন গাড়িতে করে চলাচল করেন তখন তাদের সাথে সার্বক্ষণিক পুলিশ বিভাগের কনস্টেবল পদমর্যাদার একজন গানম্যান অবস্থান করেন। সচিবরা তার কার্যালয়ে অবস্থানকালীনও গানম্যান তার ব্যক্তিগত সহকারীর কক্ষে অপেক্ষমাণ থাকেন।

সচিবরা বাবুর্চি ও নিরাপত্তা প্রহরীর জন্য প্রাধিকারপ্রাপ্ত হয়ে থাকলে প্রাধিকারপ্রাপ্ত জনবলের পরিবর্তে উভয় জনবলের জন্য সচিবদের যদি ভাতা দেয়া হয় সে ক্ষেত্রে অধিকাংশ সচিব জনবল ব্যবহার না করে অথবা যৎসামান্য অর্থের বিনিময়ে নিজ উদ্যোগে উক্ত সেবাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করবেন। আর তাতে বাবুর্চি ও নিরাপত্তা প্রহরীর পরিবর্তে এ বাবদ সরকার প্রদত্ত অর্থের সাকুল্য পরিমাণ সচিবরা প্রাপ্ত হবেন।

বর্তমানে সচিব পদে যে সংখ্যক কর্মকর্তা কর্মরত রয়েছেন একই ও উচ্চ পদমর্যাদায় এর চেয়ে অনেক অধিক সংখ্যক কর্মকর্তা সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও দফতরে কর্মরত রয়েছেন। সচিবদের জন্য বাবুর্চি ও নিরাপত্তা প্রহরীর পদ সৃষ্টি এবং নিয়োগ না দিয়ে এদের বিপরীতে নির্ধারিত অঙ্কের ভাতা গ্রহণের সুবিধা সমমানের ও এর চেয়ে উচ্চ পদে কর্মরত কর্মকর্তাদের অনুরূপ বাবুর্চি ও নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগ অথবা নিয়োগের বিপরীতে ভাতার সুবিধার জন্য অধিকারী করে তুলেছে। সচিবদের চেয়ে সরকারের জ্যেষ্ঠতার মানক্রম তালিকার ঊর্ধ্বে অবস্থান করছেন এমন অনেক পদধারী বাসগৃহে বাবুর্চি ও নিরাপত্তা প্রহরীর সুবিধাপ্রাপ্ত হন না যেমন- উচ্চাদালতের বিচারক, অ্যাটর্নি জেনারেল, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনার, মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনার, সংসদ সদস্য, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক প্রভৃতি। বর্তমানে জেলা জজরাও সচিবের সমমর্যাদাসম্পন্ন একই স্কেলের অন্তর্ভুক্ত। সচিবদের জন্য কোনো বিশেষ সুযোগ-সুবিধা এবং সুযোগ-সুবিধার পরিবর্তে ভাতার ব্যবস্থা করা হলে সমপদে ও ঊর্ধ্বতন পদে কর্মরত অপর সব অনুরূপ সুযোগ-সুবিধা ও ভাতার দাবিদার। সচিবদের এরূপ ভাতা দিয়ে অন্যদের বঞ্চিত করা হলে তা দেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধানের আলোকে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি সুযোগের সমতার পরিপন্থী।

একজন জনপ্রতিনিধি দল থেকে মনোনয়ন পাওয়া পরবর্তী নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হয়ে যখন নির্বাচিত হন তখন তিনি তার নির্বাচনী এলাকার সব জনগণের প্রতিনিধি। অনুরূপভাবে একজন জনপ্রতিনিধি যখন সরকারের মন্ত্রী পদ লাভ করেন তখন তার দেশের সব শ্রেণিপেশার মানুষের হয়ে কাজ করার কথা কিন্তু এদের অনেকেই দলীয় সঙ্কীর্ণ বলয় থেকে মুক্ত হয়ে নিজেকে সবার প্রতিনিধি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে ব্যর্থতার পরিচয় দেন। এতে করে জনপ্রতিনিধি হিসেবে তাদের মূল যে দায়িত্ব জনসেবা তা ব্যাহত হয়।

জনগণের করের অর্থে লালিত জনপ্রতিনিধি ও জনসেবকদের মধ্যে অনেকের যে বিলাসবহুল ও জৌলশপূর্ণ জীবনধারণ প্রণালী তা কোনোভাবেই তাদের পদের বিপরীতে নির্ধারিত ক্ষমতা, আইনানুগভাবে প্রাপ্ত বেতন, ভাতা ও সুযোগ-সুবিধাদির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ক্ষমতার অপব্যবহারও বিপুল বিত্তবৈভব এদের মনমানসিকতাকে এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছে, প্রকৃত অর্থেই এরা যে জনসেবক তা বেমালুম ভুলে গিয়ে জনপ্রভুরূপে নিজেদের জাহিরের প্রয়াসে দেশের সচেতন জনমানুষ হতবাক ও বিস্মিত।
লেখক : সাবেক জজ, সংবিধান, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক
E-mail: iktederahmed@yahoo.com

https://www.dailynayadiganta.com/post-editorial/756721