১৯ জুন ২০২৩, সোমবার, ১০:২৪

দেশের উত্তরাঞ্চলে বন্যার শঙ্কা আগামী ২৪ ঘণ্টায়

সিলেটসহ পূর্বাঞ্চলেও বাড়ছে নদীর পানি

দেশের ভেতরে ও উজানে বৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢলে বন্যা পরিস্থিতি তৈরির আশঙ্কা আছে। দু’একদিনের মধ্যে নীলফামারীসহ উত্তরাঞ্চলে বন্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে দুধকুমার নদীর পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে ২৪ ঘণ্টায় বেড়ে সেখানে বন্যা তৈরি হতে পারে। ইতোমধ্যে উজানের পানির চাপের ফলে তিস্তা ব্যারেজের সব গেট খুলে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া পূর্বাঞ্চলে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলাও বন্যাকবলিত হওয়ার আশঙ্কা আছে। নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির সঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। চিলমারীতে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে খাউরিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ। সরকারি সংস্থা বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র (এফএফডব্লিউসি) এবং যুগান্তর প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

এফএফডব্লিউসি জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে সিলেটের লরের গড়ে ১৪৭ মিলিমিটার। এ ছাড়া সুনামগঞ্জে ১০০, ছাতকে ১১২, জাফলংয়ে ১০৯, লালাখালে ১০৩, সিলেটে ৮২, কানাইঘাটে ৮১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ১৭১, শিলচরে ৬৭, জলপাইগুঁড়িতে ৯৫, দার্জিলিংয়ে ৮৪, গোয়ালপাড়ায় ৭১ ও গ্যাংটকে ৫৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এই বৃষ্টির কিছু পানি উত্তরাঞ্চলের তিস্তা আর বাকিটা সিলেট অঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার বিভিন্ন নদনদীতে যুক্ত হচ্ছে।

সংস্থাটির পূর্বাভাস অনুযায়ী, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও গঙ্গা-পদ্মা নদ-নদীতে পানি বর্তমানে বাড়ছে। আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকতে পারে। আর এই তিনটির পানি বেড়ে যাওয়ায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদ-নদীর পানিও দ্রুত বাড়তে পারে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উজানে ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস আছে। এর ফলে বিশেষ করে সুরমা, কুশিয়ারা, মনু, খোয়াই, সারিগোয়াইন, ঝালুখালি, ভোগাই, কংস, সোমেশ্বরী, যদুকাটার পানির স্তর দ্রুত বাড়তে পারে। এতে বিপৎসীমা অতিক্রম করে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার কিছু নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে। অন্যদিকে আগামী ২৪ ঘণ্টায় উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার অববাহিকা ও আশপাশের উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস আছে। ফলে এ সময় নদীগুলোর পানি সময় বিশেষে দ্রুত বাড়তে পারে।

কুড়িগ্রাম : চিলমারী উপজেলার দক্ষিণ খাউরিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজটি ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে বিলীন হয়েছে। এতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ৭ শতাধিক শিক্ষার্থীর লেখাপড়া বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। রোববার ভোর ৫টা থেকে স্কুল অ্যান্ড কলেজটি ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে বিলীন হতে শুরু করে। স্থানীয়রা জানান, রোববার ভোর ৫টা থেকে স্কুল অ্যান্ড কলেজটি ব্রহ্মপুত্র নদে বিলীন হতে শুরু করে।
কলেজ অধ্যক্ষ জহিরুল ইসলাম মন্ডল বলেন, এই প্রতিষ্ঠানটি নয়ারহাট ইউপির একমাত্র মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। অষ্টমীরচর ইউনিয়নসহ দুই ইউনিয়নের একমাত্র কলেজ এটি। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাধ্যমিক পর্যায়ে প্রায় সাড়ে ৫০০ এবং উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ১২০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বিলীন হওয়ায় ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বিচ্ছিন্ন দুটি ইউনিয়নের চরাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন বিঘ্নিত হয়ে পড়ল। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, কলেজটি রক্ষার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বিভিন্ন সময় জানানো হয়েছিল। ভবনটি বিলীন হলেও শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা যেন ব্যাহত না হয় সেজন্য আমরা পূর্বপ্রস্তুতি হিসাবে প্রায় দুই কিলোমিটার অভ্যন্তরে স্কুল অ্যান্ড কলেজের কার্যক্রম শুরু করেছি।

চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ) : খোয়াই ও সুতাং নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। রোববার বিকাল ৩টায় খোয়াই নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল। উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে কয়েক হাজার হেক্টর আউশ ফসল। পাউবো হবিগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসনাইন বলেন, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে ভারি বর্ষণ হওয়ায় খোয়াই নদীতে পানি বাড়ছে। আমরা সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছি।

কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) : উপজেলার নিম্নাঞ্চলে আউশের জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। ধলাই নদীতে পানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। কয়েকটি ইউনিয়নে নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের ১০ স্থান ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কমলগঞ্জে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাকিব হোসেন বলেন, বাঁধের বিষয়ে আমরা সতর্ক আছি। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত উদ্দিন বলেন, বাঁধের বিভিন্ন এলাকায় উন্নয়ন কাজ হওয়ায় আপাতত বাঁধ ঝুঁকিমুক্ত।

গোয়াইনঘাট : বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে তবে উপজেলা সদরের সঙ্গে পূর্ব জাফলং, মধ্য জাফলং, রস্তমপুর, পশ্চিম জাফলং, তোয়াকুল নন্দিরগাঁও ইউনিয়নের উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাকারী সড়কগুলোতে তিনটি স্থানে সেতুর নির্মাণকাজ চলায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এতে দুর্ভোগের শিকার স্থানীয়রা।

সুনামগঞ্জ : জেলার প্রধান নদী সুরমার পানি বৃদ্ধি পেয়ে ছাতক পয়েন্ট দিয়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে তলিয়ে যাচ্ছে নিম্নাঞ্চল।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/687621