রাজধানীর মৌচাক এলাকার সড়কে বড় বড় গর্ত। বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতায় বুঝা যাচ্ছে না। ফলে ঘটছে দুর্ঘটনা। গতকাল যাত্রীসহ একটি রিকশা গর্তে পড়ে উল্টে যায় : নয়া দিগন্ত
২৫ এপ্রিল ২০১৭, মঙ্গলবার, ১০:১০

একটানা বৃষ্টিপাতে নগরজুড়ে ভোগান্তি

রাজধানীতে গত কয়েক মাস ধরে সিটি করপোরেশন, ওয়াসাসহ বিভিন্ন সংস্থা ব্যাপক খোঁড়াখুঁড়ি করেছে। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। এর মধ্যে হঠাৎ করেই আগাম ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হওয়ায় ভোগান্তির মাত্রা বেড়ে গেছে কয়েক গুণ। কাদাপানিতে একাকার হয়ে গেছে পুরো রাজধানী। বছরের পর বছর ধরে ফাইওভার নির্মাণের কারণে মালিবাগ-মৌচাক এলাকার অবস্থা সবচেয়ে শোচনীয় হয়ে পড়েছে। ভাঙা সড়কের মধ্যে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় জনসাধারণের চলাচলের সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়েছে ওই এলাকার সড়কগুলো। এতে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনায় পড়তে হচ্ছে ওই সব সড়ক ব্যবহারকারীদের।
প্রতি বছর বর্ষা মওসুমে রাস্তার ভাঙন ও জলাবদ্ধতার কারণে নগরীতে দুর্ভোগ দেখা দেয়। কিন্তু এবার ভরা গ্রীষ্মেই শুরু হয়েছে নগরবাসীর ‘আগাম দুর্ভোগ’। উন্নয়ন কাজের ধীরগতির কারণে ভাঙা রাস্তাগুলো সময়মতো সংস্কার না হওয়ায় এবং অনেক স্থানে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় গ্রীষ্মকালেই দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতাসহ নানা সমস্যা। সাগরে নি¤œচাপের কারণে গত বুধবার বিকেল থেকে প্রতিদিন বৃষ্টি হওয়ায় দুর্ভোগের চিত্র এখন নগরজুড়ে। প্রধান সড়কগুলো চলাচলযোগ্য থাকলেও ভালো নেই পাড়ামহল্লার রাস্তাগুলো। বেশিরভাগ ওয়ার্ডের রাস্তা ভেঙেচুরে একাকার হয়ে আছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, বাড্ডা-গুলশান লিংক রোডে দণি দিকের ফুটপাথ খোঁড়াখুঁড়ি করে ড্রেনেজ পাইপ লাইন স্থাপনের কাজ চলছে। বৃষ্টির পানি ওই গর্তে ঢুকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে ফুটপাথটি। সেখান দিয়ে এখন হাঁটারও উপায় নেই। পূবালী মটরসের এক কর্মী জানান, কাজ নিয়মিত হচ্ছে না। একবার শুরু হয়ে দু’একদিন চলে, এরপর সপ্তাহ খানেক বন্ধ থাকে। কাজটি দ্রুত হলে বৃষ্টির আগেই শেষ হয়ে যেত।
শাহজাদপুরের বাঁশতলা থেকে বাজার পর্যন্ত রাস্তার বেহাল দশা চলছে কয়েক বছর ধরে। মেরামত না হওয়ায় রাস্তাটি ভাঙতে ভাঙতে এলাকাবাসীর দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বৃষ্টির কারণে চরমে উঠেছে মানুষের দুর্ভোগ। স্থানীয় বাসিন্দা আমিনুল হক বলেন, প্রায় দশ বছর আগে শাহজাদপুরের রাস্তা মেরামত করেছিল সিটি করপোরেশন। এরপর আর সংস্কার না হওয়ায় রাস্তার ঢালাই ভেঙে গর্তের সৃষ্টি করেছে।
ডিএনসিসির ১৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো: জাকির হোসেন বলেন, শাহজাদপুরের রাস্তাগুলোর অবস্থা অনেক দিন ধরেই খারাপ হয়ে আছে। চলতি অর্থবছর এগুলো মেরামত করা সম্ভব হবে না। আশা করি আগামী অর্থবছরে শাহজাদপুরের রাস্তাগুলো মেরামত করা সম্ভব হবে। এ জন্য প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে।
বৃষ্টির সময় ড্রেনের লাইনের কাজ চলছে গুলশান আবাসিক এলাকার ১০৩ নম্বর সড়কে। স্থানীয়দের অভিযোগ, অর্থবছরের শেষ দিকে এসে সিটি করপোরেশনের কাজের হিড়িক পড়ে গেছে। অথচ এ কাজগুলো যদি তিন-চার মাস আগে করা হতো তাহলে বৃষ্টির কারণে মানুষের এত দুর্ভোগ হতো না।
বৃষ্টির কারণে দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে ডিএনসিসির আওতাধীন মিরপুরের কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, কাফরুল, টোলারবাগ, রামপুরা, বাড্ডা, উত্তরা, আশকোনা প্রভৃতি এলাকায়। সময়মতো কাজ শেষ না হওয়ায় দুই সিটি করপোরেশনের বেশির ভাগ এলাকায় তীব্র জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
ঢাকা দণি সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) আওতাধীন এলাকার মধ্যে বৃষ্টির কারণে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা মালিবাগ-মৌচাক এলাকার। মালিবাগ-মগবাজার ফাইওভার নির্মাণকাজ সময়মতো শেষ না হওয়ায় সড়কটি ভেঙেচুরে গেছে। সড়কের বড় গর্তগুলো হয়ে উঠেছে মারণফাঁদ। ফাইওভার সংশ্লিষ্ট শান্তিনগর চৌরাস্তা, রাজারবাগ, মালিবাগ রেলগেট এলাকা দিয়ে চলাচলকারী মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই।
ওই এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শান্তিনগর থেকে মালিবাগ চৌরাস্তা পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে কোনো কোনো অংশে হাঁটু পানি জমে আছে। পানি আছে মালিবাগ চৌরাস্তা থেকে মৌচাক পর্যন্ত। এ ছাড়া মৌচাক থেকে মালিবাগ রেলক্রসিং হয়ে আবুল হোটেল পর্যন্ত সড়কের কোথাও কোথাও হাঁটু পানি জমে রয়েছে।
মৌচাক থেকে মালিবাগ রেলক্রসিং পর্যন্ত সড়কের একপাশে গর্ত খুড়ে মাটি তুলে রাস্তায় ফেলে রাখা হয়েছে। রাস্তায় রাখা হয়েছে পাইপসহ নির্মাণসামগ্রী। ফলে সড়কের ওই অংশে পথচারী ও যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। মৌচাক থেকে মালিবাগ চৌরাস্তা পর্যন্ত সড়কের একপাশেও রাস্তা খুঁড়ে রাখায় লোকজনের চলাচল বিঘিœত হচ্ছে। পানির মধ্য দিয়ে চলতে গিলে রিকশা উল্টে যাচ্ছে, অটোরিকশা বিকল হয়ে যাচ্ছে। আর যানজট লেগে থাকছে রাতদিন।
যাত্রাবাড়ী, জুরাইন, পোস্তগোলা, দোলাইরপাড়, মিরহাজীর বাগ এলাকায় সিটি করপোরেশনের ঠিকাদার ঢিমেতালে ড্রেনেজ লাইনের কাজ করতে থাকায় বৃষ্টির সময় সীমাহীন দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে এলাকাবাসীর মধ্যে। দোলাইরপাড় হাই স্কুলের উত্তর সীমানাঘেঁষা রাস্তাটি এখন আর চলাচলের উপযোগী নেই। চার মাস ধরে ড্রেনেজের কাজ শেষ না হওয়ায় মিরহাজীর বাগের বেশির ভাগ রাস্তা বেহাল পড়ে আছে।
গত কয়েক দিনের বৃষ্টির কারণে বাসাবোর আহমদবাগে নকশী বিল্ডিংয়ের সামনের রাস্তায় পানি জমে রয়েছে। এতে চলাচলে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ওই এলাকার বাসিন্দাদের। বিশেষ করে স্কুলগামী শিশুদের বেশি সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। কদমতলা ওয়াসা রোডের কিছু স্থানেও পানি জমে যাওয়ায় পথচারীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এ ছাড়া বৃষ্টি হলেই নয়াপল্টন, ফকিরাপুল, আরামবাগ, মতিঝিল ও কমলাপুর এলাকায় মূল সড়কে পানি জমে যাচ্ছে। এ পানি সরতে ৫/৬ ঘণ্টা লেগে যায়।
ডিএসসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো: আসাদুজ্জামান বলেন, এবার একটু আগেই বৃষ্টি চলে এসেছে। এতে ড্রেনেজ লাইনের উন্নয়ন কাজে সমস্যা হচ্ছে। তিনি বলেন, ফাইওভারের কারণে মালিবাগ ও শান্তিনগরসহ আশপাশের এলাকার ড্রেনেজ লাইন ব্লক হয়ে গিয়েছিল। এগুলোকে আমরা নতুন করে নির্মাণ করে দিচ্ছি। আশা করি আগামী দেড়-দুই মাসের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে।
গতকাল শান্তিনগর এলাকা পরিদর্শনে যান ঢাকা দণি সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। এ সময় তিনি বলেন, ডিএসসিসির উন্নয়ন কাজের ফলে গত বছরের চেয়ে এ বছর জলাবদ্ধতা অনেক কম। পুরো কাজ বাস্তবায়ন হলে এ চিত্র থাকবে না। আগামী আগস্টের মধ্যে জলাবদ্ধতা একেবারেই থাকবে না। মেয়র বলেন, শান্তিনগরে চলতি বর্ষা মওসুমে ৮৫ শতাংশ জলাবদ্ধতা কমেছে। চলতি বছরের জুন ও জুলাইয়ের মধ্যে শান্তিনগরের ফাইওভারের নির্মাণকাজ শেষ হবে। এরপর আর কোনো দুর্ভোগ থাকবে না।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/214938