১৬ জুন ২০২৩, শুক্রবার, ৩:১২

পথের দূরত্বে বাড়ছে পেঁয়াজের ঝাঁজ

সীমান্তের ওপাড়ে ১৩ টাকা; সীমান্ত পার হয়েই ২৫ টাকা; ৫০ টাকার দেশী পেঁয়াজ কিনছে ৮০ টাকায়

কৃষক অথবা সীমান্ত থেকে আড়তদার, আবার আড়তদার থেকে খুচরা বিক্রেতা-পথ যত বাড়ছে পেঁয়াজের ঝাঁজও তত বাড়ছে। ভারত থেকে কেনা হচ্ছে ১২ টাকায়। সেই পেঁয়াজ সীমান্ত পার হয়ে এপাড়ে এসে হচ্ছে ২৫ টাকা। আর তা যখন সাধারণ ভোক্তা কিনছেন তখন তাকে গুনতে হচ্ছে ৬০ টাকা। আবার কৃষকের কাছ থেকে ৪৫ টাকায় দেশী পেঁয়াজ কিনে সেই পেঁয়াজ ক্রেতার কাছে পৌঁছছে ৮০ টাকায়। ভারত থেকে আমদানির পরেও এখনো নিয়ন্ত্রণ হয়নি পেঁয়াজের বাজার। টনকে টন ভারতীয় পেঁয়াজ বাংলাদেশে ঢুকলেও ঢাকার অনেক বাজারে এখনো আমদানিকৃত পেঁয়াজের দেখা মিলছে না। বেশি দামের জন্য দেশী পেঁয়াজ বিক্রি করছে দোকানিরা। আবার কোনো কোনো অসৎ ব্যবসায়ী দেশী পেঁয়াজের সাথে ভারতীয় পেঁয়াজ মিশিয়ে তা দেশী বলে চালিয়ে দিচ্ছে।

বেনাপোলের রয়েল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধীকারী রফিকুল ইসলাম রয়েল নয়া দিগন্তকে বলেন, প্রতি টন পেঁয়াজ ভারত থেকে আমদানি করতে ১২০ ডলার এলসি করতে হচ্ছে। বাংলাদেশে আসার পর সেই পণ্যের এসেসমেন্ট হচ্ছে ৩২০ ডলারে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এরপর প্রতি কেজি পেঁয়াজ আড়তদারদের হাতে পৌঁছছে প্রায় ২৫ টাকায়। আড়তদার সেই পেঁয়াজ বিক্রি করছে ৩৮ টাকায়। আর খুচরা বাজারে সেই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। বেনাপোল থেকে গতকালও ১২ ট্রাক পেঁয়াজ ঢুকেছে বাংলাদেশে।

টঙ্গী আড়তদার সমিতির সদস্য সবুজ হোসেন মাতুব্বর নয়া দিগন্তকে বলেন, ৮-১০ দিন ধরে ভারতীয় পেঁয়াজ আসছে। এতে সামান্য হলেও বাজারে প্রভাব পড়েছে। তিনি বলেন, দেশীয় কৃষকদের লোভ অনেক বেশি। যে পেঁয়াজ কৃষকরা কেজিপ্রতি ২৩ টাকায় বিক্রি করেছেন, সেই পেঁয়াজ ৯০-৯২ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। এর পরেও তারা পেঁয়াজ বাজারে না ছেড়ে মজুদ করে আরো টাকার জন্য। ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি না হলে এখন হয়তো ১৫০ টাকার ওপরে প্রতি কেজি পেয়াঁজ কিনতে হতো। তিনি বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার পাইকারি ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ৩৮ টাকা কেজি। আর দেশীয় পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন ৫০-৫৫ টাকা কেজি।

এ দিকে পাইকারি বাজারের এই ৩৮ টাকার পেঁয়াজ গতকাল ঢাকার বাজারে বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকায়। আর দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হতে দেখা গেছে ৮০ টাকায়। ঢাকার কোনাপাড়া, ডেমরা, যাত্রাবাড়ী, মানিকনগর, গোপীবাগসহ বিভিন্ন বাজারে গিয়ে এই দামে পেঁয়াজ বিক্রি হতে দেখা যায়। রাজধানীর গোপীবাগ এলাকার শামসুল ইসলাম বলেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির পরেও এখনো ৮০ টাকায়ই পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে। তিনি বলেন, সরকার এত ঢাকঢোল পেটাল; কিন্তু কাজের কাজ তো কিছুই হলো না! তিনি বলেন, বাজারে কোনো দোকানে তিনি ভারতের পেঁয়াজ খুঁজে পাননি। বাধ্য হয়ে ৮০ টাকা দিয়ে দেশী পেঁয়াজ কিনেছেন। তিনি বলেন, অনেক দোকানে তিনি ঘুরেছেন কমদামে ভারতের পেঁয়াজ কেনার জন্য। কিন্তু দোকানিদের উত্তর ‘ওই পেঁয়াজ মিষ্টি লাগে। কেউ কিনতে চায় না।’ তবে শামসুল ইসলাম বলেন, এটা দোকানিদের কারসাজি। কমদামে পেঁয়াজ পেলে কেউ আর বেশি দামে দেশী পেঁয়াজ কিনতে চাইবে না। এ কারণে তারা ভারতীয় পেঁয়াজ দোকানে রাখছে না। আবার কোনো কোনো অসৎ দোকানি দেশী পেঁয়াজের সাথে ভারতীয় পেঁয়াজ মিশিয়ে ওই ৮০ টাকা কেজিতেই বিক্রি করছে। ক্রেতা প্রতিবাদ করেও কোনো লাভ হচ্ছে না।

সবুজ হোসেন মাতুব্বর বলেন, পাইকারি বাজারের সাথে খুচরা বাজারে দামেরতো এত ফারাক হওয়ার কথা না। তিনি বলেন, পেঁয়াজ পচনশীল পণ্য ঠিক আছে। কিন্তু এত তো পচার কথা না। যে ৫০ টাকার পেঁয়াজ ৮০ টাকা হবে, আর ৩৮ টাকার পেঁয়াজ ৬০ টাকা হবে! তিনি বলেন, এটা খুচরা বিক্রেতাদের ডাকাতি।

একাধিক ক্রেতা বলেছেন, বাজার মনিটরিং না থাকার কারণেই অসৎ ব্যবসায়ীরা এই সুযোগ পাচ্ছে। তারা সিন্ডিকেট করে ক্রেতাদেরকে এখনো বেশি দামে পেঁয়াজ কিনতে বাধ্য করছে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/755834