১৪ জুন ২০২৩, বুধবার, ১০:৫০

আবারো হজ ফ্লাইট বিপর্যয়

আবারো হজের ফ্লাইট বিপর্যয় ঘটেছে। হজযাত্রী সঙ্কটে গতকাল একদিনেই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের চারটি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। এর আগেও যাত্রী সঙ্কটে ১৭টির বেশি হজ ফ্লাইট বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে বিমান ও সৌদি এয়ারলাইন্স। এ সঙ্কট মোকাবেলায় এর আগে সৌদির কাছে ১০টি ফ্লাইটের অনুমতি চাওয়া হলেও নতুন করে আবারো সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ফলে শেষ দিকে হজযাত্রী পরিবহনে চরম সঙ্কট দেখা দেয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। এ দিকে হজফ্লাইট শেষ হতে আর মাত্র ১০ দিন বাকি থাকলেও প্রায় আড়াই হাজার হজযাত্রীর এখনো ভিসা আবেদন করেনি ৩৫৫টি হজ এজেন্সি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হজযাত্রী থাকা ১৫টি এজেন্সিকে শোকজ করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।

গত ২১ মে বাংলাদেশ থেকে হজ ফ্লাইট শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে এবার এক লাখ সাড়ে ২২ হাজার ব্যক্তি পবিত্র হজ পালনে যাচ্ছেন। আগামী ২২ জুন সৌদি আরবে যাওয়ার শেষ ফ্লাইট। পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে ২৭ জুন। ইতোমধ্যে মঙ্গলবার রাত ২টা পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ৭৬ হাজার ৯৪০ জন হজযাত্রী সৌদি আরব পৌঁছেছেন। গতকাল আরো কিছু হজযাত্রী সৌদি আরব গিয়েছেন। গতকাল মোট ১১টি ফ্লাইট ছিল। এর মধ্যে চারটি ফ্লাইটই বাতিল করা হয়েছে। এর সব ক’টিই বাংলাদেশ বিমানের। জানা যায়, এর আগেও যাত্রী সঙ্কটে ১৭টির বেশি হজ ফ্লাইট বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে বিমান ও সৌদি এয়ারলাইন্স। এ সঙ্কট মোকাবেলায় এর আগে সৌদির কাছে ১০ ফ্লাইটের অনুমতি চেয়েছে সরকার। এবার নতুন করে আরো এত বেশি ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় নতুন করে আবারো সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ফলে শেষ দিকে হজযাত্রী পরিবহনে চরম সঙ্কট দেখা দেয়ার আশংকা তৈরি হয়েছে।

এ দিকে হজ ফ্লাইট শেষ হতে আর মাত্র ১০ দিন বাকি থাকলেও প্রায় আড়াই হাজার হজযাত্রীর এখনো ভিসা আবেদন করেনি ৩৫৫টি হজ এজেন্সি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হজযাত্রী থাকা ১৫টি এজেন্সিকে শোকজ করেছে ধর্মমন্ত্রণালয়।

বাণিজ্যিক ফ্লাইটে হজযাত্রী নিচ্ছে সৌদি এয়ারলাইন্স, দুর্ভোগে হজযাত্রীরা : হজযাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নিয়ম রয়েছে বাংলাদেশ থেকে প্রত্যেক হজযাত্রীকে নিতে হবে ডেডিকেটেড হজ ফ্লাইটে। এ কারণের হজ ফ্লাইটের ভাড়া জনপ্রতি এক লাখ ৯৮ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। হজযাত্রীদের নিবিঘ্নে চেক ইন ও ইমিগ্রেশনের আয়োজন করা হয়েছে আশকোনা হজ ক্যাম্পে। তবে সেই নিয়ম ভঙ্গ করে বাণিজ্যিক ফ্লাইটে হজ যাত্রী বহন করছে সৌদি এয়ারলাইন্স। হজযাত্রীদের কষ্ট লাঘব ও জটিলতা কমাতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। হজ যাত্রী বহনের অনুমতি প্রাপ্ত এয়ারলাইন্সগুলো ডেডিকেটেড ফ্লাইটের মাধ্যমে হজযাত্রী বহন করবে। হজযাত্রীদের চেক ইন ও বাংলাদেশ অংশের ইমিগ্রেশন হচ্ছে আশকোনা হজ ক্যাম্পে। অন্য দিকে রোড টু মক্কার আওতায় হজযাত্রীদের সৌদি অংশের ইমিগ্রেশনও সম্পন্ন হয় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। ফলে হজযাত্রীরা সৌদি আরবে পৌঁছে কোনো জটিলতা ছাড়াই বিমানবন্দর থেকে সরাসরি হোটেলে চলে যেতে পারছেন। একই সাথে হজযাত্রীদের সৌদি আরবের বিমানবন্দরে লাগেজ সংগ্রহ করতে হয় না। হজ ব্যবস্থাপনার আওতায় তাদের লাগেজও পৌঁছে দেয়া হয় হোটেলে। বাণিজ্যিক ফ্লাইটে হজযাত্রী বহন করায় এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন হজযাত্রীরা। বরং সৌদি আরবে লাগেজ সংগ্রহ, ইমিগ্রেশনসহ নানা জটিলতার মধ্যে পড়তে হচ্ছে।

জানা গেছে, সৌদি এয়ারলাইন্স নিয়মিত বাণিজ্যিক ফ্লাইট এসভি-৮০৫-এ হজযাত্রী বহন করা হয়েছে। এসভি ৮০৫ ফ্লাইটটি ঢাকা থেকে ছেড়ে যায় ১৩ জুন রাত ১টায়। ফ্লাইটটি রিয়াদে পৌঁছানোর শিডিউল সময় (সৌদি সময়) ভোর ৪টা ৫ মিনিটে। রিয়াদ বিমানবন্দরে তাদের ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করতে হবে। এমনকি রিয়াদ বিমানবন্দরে তাদের ৬ ঘণ্টা অপেক্ষার পর জেদ্দাগামী সৌদি এয়ারলাইন্সের আরেকটি ডমেস্টিক ফ্লাইটে উঠতে হবে। এসভি ১০২৭ ফ্লাইটে রিয়াদ থেকে প্রায় দুই ঘণ্টা উড়ে তারপর জেদ্দা পৌঁছাবেন এই হজযাত্রীরা। এই বাণিজ্যিক ফ্লাইটে প্রায় ৭০ জন হজযাত্রী ছিলেন।

আশকোনায় হজ অফিসের পরিচালক মো: সাইফুল ইসলাম বলেন, হজযাত্রীদের ডেডিকেটেড ফ্লাইটের মাধ্যমে সৌদি আরবে নিতে হবে এটা ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নিয়ম। বাণিজ্যিক ফ্লাইটে হজযাত্রী বহনের বিষয়টি সৌদি এয়ারলাইন আমাদের জানায়নি। এ দিকে হজ ফ্লাইটের ক্যাপাসিটি লস সামলে অতিরিক্ত হজফ্লাইট ব্যবস্থা নিতে চিঠি দিয়ে সৌদি এরাবিয়ান এয়ারলাইন্সকে গত ৩ জুন নির্দেশনা দিয়েছিল ধর্ম মন্ত্রণালয়। এয়ারলাইন্সটির কান্ট্রি ম্যানেজারকে ক্যাপাসিটি লস পূরণের লক্ষ্যে জেদ্দাতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক অতিরিক্ত হজ ফ্লাইট প্রদানের বিষয়ে সৌদি আরবের জিএসিএ এর নিকট আবেদন করতে বলা হয়। একই রকম নির্দেশনা দেয় হয় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকেও। ইতোমধ্যে সৌদি আরবে আবেদন করে ফ্লাইটের সংখ্য বাড়ানোর অনুমতি চেয়েছে বিমান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন হাব নেতা বলেন, সরকার নির্বিঘ্নে ও হজযাত্রীদের কষ্ট কমাতেই ডেডিকেটেড ফ্লাইটের নিয়ম করেছে, এ জন্য বিমান ভাড়াও অনেক বেশি। সেটি না করে হজযাত্রীদের কমার্শিয়াল ফ্লাইটে নেয়া হলে তাদের কষ্ট হবে অনেক বেশি। সৌদি এয়ারলাইন্স নিয়ম না মেনে হজযাত্রীদের দুর্ভোগের মধ্যে ফেলেছে। সরকারের উচিত দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া।

এ বিষয়ে সৌদি এয়ারলাইন্সের কোনো কর্মকর্তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে এয়ারলাইন্সটি বাংলাদেশে জেনারেল সেলস এজেন্ট (জিএসএ) ইউনাইটেড লিংক লিমিটেডের কর্মকর্তা রফিুকুল ইসলাম বলেন, সৌদি এয়ারলাইন্সের ডেডিকেটেড হজ ফ্লাইটের কিছু ক্যাপাসিটি লস হয়েছে, সেটা অ্যাডজাস্ট করতেই কমার্শিয়াল ফ্লাইটে হজযাত্রী নেয়া হচ্ছে। ঢাকা থেকে কমার্শিয়াল ফ্লাইটে হজ যাত্রীরা রিয়াদে যাচ্ছেন, তারপর সেখান থেকে ডমিস্টিক ফ্লাইটে জেদ্দায় যাবেন। ধর্ম মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে কমার্শিয়াল ফ্লাইটে হজযাত্রী নেয়া হচ্ছে। এবার বাংলাদেশ থেকে হজযাত্রী পরিবহন করছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, সৌদি এয়ারলাইন্স ও ফ্লাইনাস। মোট যাত্রীর অর্ধেক হজযাত্রী পরিবহন করবে বিমান। বাকি হজযাত্রী পরিবহন করছে সৌদি এয়ারলাইন্স ও ফ্লাই নাস।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/755317