১৩ জুন ২০২৩, মঙ্গলবার, ১০:৫১

সামান্য বৃষ্টিতেই নগরীতে পানিবদ্ধতা

তীব্র গরমে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল রাজধানীসহ সারা দেশের মানুষের জীবন। তবে গত দু’তিন দিনের বৃষ্টিপাতে তাপমাত্রা কিছুটা কমেছে। মানুষের মধ্যে নেমে এসেছে স্বস্থি। কিন্তু অস্বস্থি তৈরি হয়েছে অন্য কারণে। তা হলো পানিবদ্ধতা। সামান্য বৃষ্টিতে নগরীতে পানিবদ্ধতা ভিন্ন অস্বস্থি তৈরি করে দিয়েছে। তাতে বর্ষার দিনগুলো নিয়ে নগরবাসীর কপালে চিন্তার ভাঁজ দেখা দিয়েছে।

গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার পর থেকে রাজধানীর বিভিন্নস্থানে বজ্রসহ বৃষ্টি শুরু হয়। সেই বৃষ্টি বেশিক্ষণ স্থায়ী না হলেও সামান্যতেই মানুষের ভোগান্তি শুরু হয়ে যায়। রাজধানীর বেশ কয়েকটি সড়ক ও অলি-গলিতে তৈরি হয় পানিবদ্ধতা। তাতে সড়কে যানবাহন চলায় সৃষ্টি হয় ঢেউয়ের, আর সেই ঢেউ আছড়ে পড়ে পাশের ফুটপাতে।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পুরান ঢাকা, বংশাল, নাজিমুদ্দিন রোড, ধানমন্ডি, মিরপুর ১৩, হাতিরঝিলের কিছু অংশ, আগারগাঁও থেকে জাহাঙ্গীর গেট যেতে নতুন রাস্তায়, খামারবাড়ি থেকে ফার্মগেট, ফার্মগেট-তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকা, মোহাম্মদপুরের কিছু অংশ, মেরুল বাড্ডা, ডিআইটি প্রজেক্ট এলাকায়, গুলশান লেকপাড় এলাকার সংযোগ সড়কসহ বিভিন্ন সড়ক ও অলগলিতে বৃষ্টির পর পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।

বিশেষ করে বৃষ্টিতে রাজধানীর মগবাজার মৌচাক এলাকা তলিয়ে যায়। বড় রাস্তা মাড়িয়ে ফুটপাত পর্যন্ত তলিয়ে যায়। এতে মার্কেটে আসা মানুষজন পড়েন বিড়ম্বনায়। বৃষ্টি থামার পর রাজধানীবাসীর ভোগান্তি বাড়িয়ে দেয় এই পানিবদ্ধতা। মানুষের অভিযোগ, অল্পকিছু সময়ের বৃষ্টিতেই রাজধানীর নাজুক হয়ে পড়ে ড্রেনেজ ব্যবস্থা।

অবশ্য রাজধানীর কর্মজীবী, শ্রমজীবী মানুষ বহু আগে থেকেই এই পানিবদ্ধতার সঙ্গে পরিচিত। বিষয়টি অনেকটা সয়েই গেছে নগরবাসীর মধ্যে। মাথায় ছাতা, গায়ে বৃষ্টি আর পায়ে শহরের নোংরা পানির মধ্যেই কর্মস্থলে ছুটে চলেন কাজে বের হওয়া মানুষগুলো। কোনো কোনো রাস্তায় পানিবদ্ধতার মধ্যে যানবাহন চলার কারণে ঢেউ সৃষ্টি হয়, আর সেই ঢেউ এসে আছড়ে পড়ে পথচারীর শরীরেও।

রিকশায় গুলশান দিয়ে যাচ্ছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী সাজেদুল ইসলাম। তিনি বলেন, অফিসের কাজে বাইরে বের হয়ে বৃষ্টি আর পানিতে পড়তে হলো। যানবাহন যাওয়ার সময় জমে থাকা পানি ঢেউয়ের মতো গায়ে এসে আমার জামা কাপড় নষ্ট করে গেল। তার প্রশ্ন এই অল্প বৃষ্টিতেই যদি এমন পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয় তাহলে বর্ষায় কেমন ভোগান্তি হতে পারে রাজধানীবাসীর, একবার চিন্তা করুন?
একই সড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় পানিবদ্ধতার কারণে ইঞ্জিনে পানি ঢুকে থেমে যায় ফতেহ আলীর সিএনজি। তিনি বলেন, সিএনজির জন্য পানি খুব ভয়ের, কারণ যেকোনো সময় স্টার্ট বন্ধ হয়ে যায়। আমার আজ তাই হয়েছে। পানি ঢুকে বন্ধ হয়ে গেছে ইঞ্জিন। পেছনে লেগে গেছে যানজট। উপায় না দেখে ঠেলেই নিয়ে যেতে হচ্ছে গাড়ি। এমন বৃষ্টি হলে পানিবদ্ধতা যেন রাজধানীতে না হয় সেই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত সংশ্লিষ্টদের।

পুরান ঢাকার বাসিন্দা এনামুল হক বলেন, রাজধানীতে হঠাৎ বৃষ্টিতে পুরান ঢাকার বেশ কিছু এলাকায় পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এরমধ্যে বংশাল রোড, নাজিমুদ্দিন রোডে সবচেয়ে বেশি রাস্তা ডুবে গেছে।

রাজধানীর আগারগাঁও থেকে মহাখালী আসার নতুন রাস্তায় বৃষ্টির পর পরই পানিবদ্ধতা দেখা গেছে। সড়কে যানবাহন চলার সময় ঢেউ সৃষ্টি হয়। এছাড়া খামারবাড়ি থেকে ফার্মগেট, ফার্মগেট-তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় সড়কে, ধানমন্ডির সড়কে একই রকমের পানিবদ্ধতা দেখা গেছে।

অন্যদিকে মেরুল বাড্ডার বাসিন্দা রহিদুল ইসলাম বলেন, সামান্য বৃষ্টিতে মেরুল বাড্ডা, ডিআইটি সড়ক, লিংক রোড সংলগ্ন আদর্শ নগরের সড়ক পানিতে ডুবে গেছে। রিকশায় অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে ডিআইটি সড়ক পার হয়ে মূল রাস্তায় আসতে হলো। এছাড়াও পান্থপথ, নিউ মার্কেট, শুক্রাবাদ, মিরপুর সড়ক, ধানমন্ডি, যাত্রাবাড়ী, মোহাম্মদপুর, পুরান ঢাকার কিছু কিছু সড়কে বৃষ্টির কারণে পানিবদ্ধতার খবর পাওয়া গেছে।

এদিকে দেশের পাঁচ বিভাগের অনেক জায়গায় এবং চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা ও ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি এবং বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে বলে আগেই জানিয়েছিল আবহাওয়া অফিস।

https://dailysangram.info/post/527335