১০ জুন ২০২৩, শনিবার, ৭:২২

বিমানবন্দর থেকে বের হলেই সড়কে সংকট

রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে যারাই বের হয়ে মূল সড়কে আসছে, তাদেরই দুর্ভোগের মুখে পড়তে হচ্ছে। এই এলাকায় অনেক প্রকল্পের কাজ একসঙ্গে চলমান থাকায় সড়কটিতে যান চলাচলে সংকট তৈরি হয়েছে।
ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের বিমানবন্দর অংশে সড়কের মাঝে, দুই পাশে রাখা হয়েছে নির্মাণসামগ্রী। এক কিলোমিটারের কম পথে নানা রকমের কৃত্রিম বাঁক তৈরি করে যানবাহনের গতি কমানো হয়েছে।

ভেঙে ফেলা হয়েছে পথচারীর হাঁটার পথও। ফলে বাধ্য হয়ে মানুষ হাঁটছে সড়ক দিয়ে। সব মিলিয়ে মূল সড়ক ছোট হয়ে এসেছে।
শুরুটা উল্টো বাঁক দিয়ে : বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে বনানীমুখী সড়কে উঠতে উত্তরার দিকে কিছুটা গিয়ে উল্টো বাঁক (ইউ টার্ন) নিয়ে আসতে হয়।

এই সড়কে নিয়মিত বাস চালান মো. জুয়েল। তিনি ভিআইপি-২৭ বাসের চালক। তিনি বলেন, স্বাভাবিকভাবে বনানীর কাকলী পার হলে কোথাও তেমন থামতে হয় না, কিন্তু বিমানবন্দরের সামনে এসে নিশ্চিত আটকাতে হবে। বিমানবন্দরের সামনে এলেই এসব গাড়ির গতি কমাতে হয়।

সড়কের এই অংশে যুক্ত হয় বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে আসা গাড়িগুলো। কিছুটা এগোনোর পর যেসব গাড়ি কুড়িল ও বনানীমুখী আসবে, সেগুলো উল্টো দিকে বাঁক নেয়। এই বাঁক নেওয়ার পথে বেশির ভাগ সময় গাড়ির জটলা তৈরি হয়।

থেমে থেমে নির্মাণকাজ : সড়কের এই বাঁকের কাছে নেমেছে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের আওতায় নির্মীয়মাণ উড়ালপথ। সেখান থেকে বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে কিছুটা সামনে এগোলেই এই প্রকল্পের আরেকটি উড়ালপথের কাজ চলছে।
এই দুই অল্প দূরত্বের মাঝের সড়কে প্রকল্প নির্মাণসংশ্লিষ্ট সামগ্রী রাখা হয়েছে।

ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ককে রাজধানীর সঙ্গে যুক্ত করা সড়কের এই অংশের অবস্থা এমনই। আবার গোলচত্বরের পূর্ব দিক থেকে হবে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (বিমানবন্দর-আশুলিয়া হয়ে চন্দ্রা)। গোলচত্বরের নিচে দিয়েই উত্তর-দক্ষিণ বরাবর ৬২০ মিটার দীর্ঘ আন্ডারপাস নির্মাণ করার পরিকল্পনা আছে।

এই আন্ডারপাস আশকোনা হজ ক্যাম্পের সম্মুখভাগ, বিমানবন্দর রেলস্টেশন, বিআরটি স্টেশন, এমআরটি-১ স্টেশন এবং বিমানবন্দর টার্মিনাল ১ ও ২-এর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করবে। ফলে এই এলাকায় আরো দীর্ঘ সময় নির্মাণকাজ চলবে।
নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, এখন থেকেই সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে কাজ এগোতে হবে। সব প্রকল্পের মধ্যে সমন্বয় দরকার। তা করা না গেলে ভবিষ্যতে বিমানবন্দর সড়কের এই অংশে সমস্যা আরো বাড়বে।

ভেঙে ফেলা হয়েছে ফুটপাতও : বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনের সামনের সড়কে প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকার ফুটপাত ভেঙে ফেলা হয়েছে। এতে মানুষ মূল সড়ক দিয়ে হাঁটছে। আবার স্টেশনের সামনের ফুট ওভারব্রিজটি পুরোপুরি ব্যবহার করা হচ্ছে না। পথচারীরা সড়কের মাঝখান দিয়েই হেঁটে পার হচ্ছে। এতেও সমস্যা বাড়ছে।
পথচারী হারুন হাওলাদার বলেন, ‘রাস্তা দিয়ে হাঁটা ছাড়া উপায় নেই। এক পাশে ফুটপাত আছে, আরেক পাশে নাই। ফলে বাধ্য হয়েই মাঝখান দিয়ে সড়ক পার হচ্ছি।’

স্টেশন এলাকার ভ্রাম্যমাণ দোকানি জুয়েল মিয়া বলেন, ‘একেক দিন একেক রকম কাজ হচ্ছে। কোনো কিছু বোঝা যায় না। ৮-১০ দিন হয় এই পাশে (বিমানবন্দর স্টেশন থেকে উত্তরামুখী) ফুটের রাস্তা ভাঙা হইছে।’

জানতে চাইলে বিআরটির সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অল্প সময়ে অনেক পরিকল্পনাতেই পরিবর্তন আসছে। কিছুটা জনভোগান্তি হলেও এখন কাজটা দ্রুত শেষ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

কুড়িল উড়ালপথের নিচে ভিন্ন অনুভূতির সড়ক : বিমানবন্দর থেকে বনানী অংশে সড়কের মান ঢাকার অন্যান্য সড়কের তুলনায় বেশ ভালো। তবে কুড়িলে এসে ৩০০ ফুটের দিকে যাওয়ার সময় তিন ধরনের সড়কের সংযোগ দেখা গেল।

এই সড়কে নিয়মিত যাতায়াত করেন মোহাম্মদ আলী। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, গাড়িতে এই সড়কে চলার সময় বিভিন্ন ধরনের অনুভূতি পাওয়া যায়। কোথাও মসৃণ, কোথাও খারাপ এটা স্পস্ট বোঝা যায়।

কুড়িল-পূর্বাচল লিংক রোডের উভয় পাশে ১০০ ফুট চওড়া খাল খনন ও উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের পরিচালক এম এম এহসান জামীল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সড়কের ওই অংশটি আমাদের প্রকল্পের অধীনে না। আরো দুই বছর আগে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবু ৩০০ ফুট রাস্তা আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগে ওই অংশটুকু ঠিক করে দেব।’

সরেজমিন দেখা যায়, উড়ালপথের পাশে বিআরটিসির বাসস্ট্যান্ড থেকে ৩০০ ফুট সড়কে ঢোকার আগ পর্যন্ত সড়কটি কয়েক ধাপে ঢালাইয়ের কাজ হলেও সমান হয়নি। সড়কের শেষ সীমানা এবড়োখেবড়ো অবস্থায় রয়েছে। আবার ৩০০ ফুট সড়কটি একেবারে এক্সপ্রেসওয়ের মানে করা।

জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অনেক জায়গায় উন্নয়নকাজ করতে গিয়ে রাস্তা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিভিন্ন সড়ক নিয়েই আমাদের পরিকল্পনা আছে। দ্রুতই কাজ করা হবে।’

https://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2023/06/10/1288366