৯ জুন ২০২৩, শুক্রবার, ৮:২০

বললেন কক্সবাজারের ইউপি চেয়ারম্যান

৮ কেন্দ্রে ভোট ডাকাতি করে তোমাকে উপজেলা চেয়ারম্যান বানিয়েছি

নিজে আটটি কেন্দ্রে ভোট ডাকাতি করে কক্সবাজার সদর উপজেলার চেয়ারম্যান কায়সারুল হক ওরফে জুয়েলকে বিজয়ী করেছিলেন বলে দাবি করেছেন উখিয়া উপজেলার হলদিয়াপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এস এম ইমরুল কায়েস চৌধুরী। গত মঙ্গলবার বিকেলে কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মাহবুবুর রহমান চৌধুরীর নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিয়ে এমন বক্তব্য দেন তিনি।

পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের তারাবুনিয়ারছড়া এলাকায় মাহবুবুর রহমানের পথসভায় যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী। তাঁর বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে ইমরুল কায়েসকে বলতে শোনা যায়, ‘কায়সারুল হক জুয়েল, তুমি যদি আমার বক্তব্য শুনে থাকো বিগত নির্বাচনে তোমার জন্য কক্সবাজারে ৮টি কেন্দ্রে আমি ভোট ডাকাতি করেছি, নৌকার পক্ষে গিয়ে। আমি ইমরুল কায়েস যদি না থাকতাম, তুমি উপজেলা চেয়ারম্যান হতে পারতে না।’

ইমরুল কায়েস আরও বলেন, ‘জুয়েল তোমার যদি মনে না থাকে, আমার শ্রদ্ধাভাজন মাসেদুল হক রাশেদ, যিনি এখন নারকেলগাছ মার্কায় ভোট করছেন, উনার কাছে জিজ্ঞেস করে দেখ। তোমার যদি মনে না থাকে, তোমার মেঝ ভাই জেলা পরিষদের মার্শাল মামা আছে, তাকে জিজ্ঞেস করে দেখ ইভিএমের মধ্যে তোমার জন্য ভোট ডাকাতি করে কারচুপি করে তোমাকে এই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বানিয়েছি। আর তুমি কথায় কথায় আমাকে টার্গেট করো, আমাদের টার্গেট করো। কারণ তুমি একজন অকৃতজ্ঞ। তুমি যদি কৃতজ্ঞ হতে, সেদিনের কথা তুমি ভুলে যেতে না।’

কক্সবাজার পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মাসেদুল হক ওরফে রাশেদ (নারকেলগাছ)। তিনি কক্সবাজার সদর উপজেলা চেয়ারম্যান কায়সারুল হকের (জুয়েল) বড় ভাই। কায়সারুল ২০১৯ সালে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে ইমরুল কায়েস তাঁর পক্ষে কাজ করেছিলেন। ইমরুল নিজেও ২০২২ সালে হলদিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিপক্ষে নির্বাচন করে জিতে এসেছিলেন।
কায়সারুল হকের আরেক ভাই কক্সবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীনুল হক ওরফে মার্শালকে উদ্দেশ্য করেও কথা বলেন ইমরুল কায়েস। শাহীনুলও বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের মোস্তাক আহমদ চৌধুরীকে হারিয়ে চেয়ারম্যান হন।

ভিডিওতে ইমরুলকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি আমাদের সম্মানিত জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীনুল হক মার্শাল মামাকে বলতে চাই, আপনি যে জেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান হয়েছেন সেখানে আমাদের ভোট ছিল না? আজ দুঃখের সাথে বলতে হয় জেলা পরিষদ নির্বাচনে আমার শ্রদ্ধাভাজন মোস্তাক আহমদ প্রার্থী ছিলেন। উনি আমার কাছে গিয়েছিলেন। আমি উনার সাথে তেমন কোনো কথা বলিনি। কিন্তু শাহীনুল হক মার্শাল যখন গিয়েছিলেন আমার ১৩টা ভোটের ১৩ জনকে আমি তার সঙ্গে দেখা করিয়ে দিয়েছিলাম। আপনারা অকৃতজ্ঞ মানুষ। সে জন্য কথায় কথায় আমাদের কথা বলেন। আপনারা যদি পৌরসভায় নির্বাচিত হন, এই পৌরবাসীকে আপনারা ভুলে যাবেন। কারণ আপনারা অকৃতজ্ঞ।’

এ বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে ইমরুল কায়েস প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিটি জনসভা ও সংবাদ সম্মেলনে তাঁদের পরিবারকে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন কায়সারুল হক। অকারণে হেয় করে বক্তব্য দিচ্ছেন। সে জন্য তাঁকে উদ্দেশ্য করে রাজনৈতিকভাবে এসব কথা বলেছেন। ইভিএমে ওই ধরনের ভোট কারসাজির সুযোগ নেই।

কায়সারুল হক চৌধুরী ওরফে জুয়েল কক্সবাজার জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর ভাই মাসেদুল হকের পক্ষে গিয়ে দল থেকে পদত্যাগ করেছেন তিনি।

জানতে চাইলে কায়সারুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০১৯ সালে সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে আমি নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। এখন ইমরুল যেগুলো বলছে, সেটা সরকার ও আওয়ামী লীগকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য পাগলের প্রলাপ বকছে। এ বিষয়ে আমরা রিটার্নিং কর্মকর্তাকে অভিযোগ দিয়েছি।’

এ বিষয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও পৌরসভার নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা এস এম শাহাদাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডে নৌকার প্রার্থীর পক্ষের প্রচারণায় এই বক্তব্য দেন ইমরুল। বিষয়টি নির্বাচন কমিশনে অবহিত করা হয়েছে। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত এলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কক্সবাজারের এক নির্বাচন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, তিনি (ইমরুল কায়েস) পুরোনো নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছেন। বর্তমান পৌর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থক বা অনুসারীদের নিয়ে মানহানিকর বক্তব্যের জন্য জরিমানাসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা রয়েছে। তবে তিনি পুরো নির্বাচনব্যবস্থা এবং আওয়ামী লীগকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন।

https://www.prothomalo.com/bangladesh/4eyxohs58h