৮ জুন ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ৯:২৬

পুলিশের খাতায় পলাতক আসামির রাজনৈতিক মাঠে সরব উপস্থিতি!

রাজধানীর শাহজাহানপুরে আওয়ামী লীগ নেতা টিপুসহ জোড়া খুনের মামলার চার্জশিটে পুলিশ যাদেরকে পলাতক বলে উল্লেখ করেছে তাদের অনেকেই প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এরা ক্ষমতাসীন দলের সাথেই সম্পৃক্ত। এদের মধ্যে মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আশরাফ তালুকদার ও মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সদস্য মারুফ আহমেদ মনসুরকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু ও কলেজছাত্রী সামিয়া আফরান জামাল প্রীতি হত্যার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় পুলিশ সম্প্রতি চার্জশিট প্রদান করেছে। চার্জশিটে ৩৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। চাঁদাবাজি ও আধিপত্যবিস্তারসহ বেশকিছু কারণে টিপুকে হত্যা করা হয় বলে চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে। চার্জশিটে আসামিদের তালিকায় এক নম্বরে রয়েছে রাজধানীর তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহাম্মেদ ওরফে মন্টু ওরফে এমদাদুল হকের (৫০) নাম। ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে যে জিসান হিসেবেই পরিচিত। পুলিশ এই জিসানকে পলাতক দেখিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জিসান দীর্ঘদিন থেকেই পলাতক। সে বিদেশে বসেই ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। ঢাকায় তার বেশকিছু সহযোগী রয়েছে। যারা তার নির্দেশে এখানে নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে আসছে। জিসান দুবাইয়ে অবস্থান করে আসছে বলে জানা যায়।

চার্জশিটে ২ নম্বর আসামি মানিক ওরফে জাফর আহম্মেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিককেও পলাতক দেখানো হয়েছে। মানিকও রাজধানীর তালিকাভুক্ত এক শীর্ষ সন্ত্রাসী। যার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি হত্যা মামলাসহ অনেক মামলা রয়েছে। রাজধানীতে তার একটি সহযোগী বাহিনী রয়েছে। যারা তার নির্দেশেই এখানে নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড করে আসছে। অনেকে তার অবস্থান কানাডায় বললেও আসলে মানিক মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছে বলে জানা যায়। অভিযোগপত্রের ২৭ নম্বর নামটি হচ্ছে মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সদ্য সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আশরাফ তালুকদার (৬৮)। গতকাল শৃঙ্খলা ভঙের দায়ে দল থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। চার্জশিটে এই আশরাফকে পলাতক বলে উল্লেখ করা হলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছেন, আশরাফ প্রকাশ্যে রয়েছেন। দলীয় কর্মকাণ্ডেও তিনি সরব ছিলেন। দলের প্রোগ্রামগুলোতেও তার উপস্থিতি দেখা গেছে। অথচ পুলিশ চার্জশিটে উল্লেখ করেছে তিনি পলাতক। গতকাল দল থেকে তাকে বহিষ্কারের পর তিনি আর প্রকাশ্যে সরব থাকবেন কিনা তা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন করেছেন।

চার্জশিটের ২৮ নম্বর নামটি হলো মারুফ আহমেদ মনসুরের (৫৭)। পুলিশ তাকেও পলাতক দেখিয়েছে। তিনি মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের একজন সদস্য এবং ঢাকার একজন কাউন্সিলর। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছেন, চার্জশিটে তাকে পলাতক দেখানো হলেও তিনি প্রকাশ্যে রয়েছেন। দলের কর্মকাণ্ডেও তিনি সরব ছিলেন। দল থেকে বহিষ্কারের পর এখন কী করবেন সে বিষয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। এ ছাড়াও চার্জশিটের ২৯ নম্বর আসামি রিফাত হোসেন, ৩০ নম্বর আসামি মো: সোহেল ওরফে রানা সোহেল ওরফে লেংড়া রানা, ৩১ নম্বর আসামি আমিনুল ইসলাম ওরফে হাবিব, ৩২ নম্বর আসামি শামসুল হায়দার ওরফে উচ্ছল ওরফে উজ্জল এবং ৩৩ নম্বর আসামি কামরুজ্জামান ওরফে বাবুল ওরফে বাবুল তালুকদারকেও পলাতক দেখানো হয়েছে। পুলিশ পলাতক এই আসামিদের ব্যাপারে গ্রেফতারি পরোয়ানা ইস্যুর প্রার্থণা করেছে আদালতের কাছে।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ২৪ মার্চ রাত ১০টা ২০ মিনিটে শাহজাহানপুরের আমতলা এলাকায় মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো: জাহিদুল ইসলাম টিপুকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ সময় পাশে থাকা রিকশা আরোহী সামিয়া আফরান জামাল প্রীতি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এই ঘটনায় শাহজাহানপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন টিপুর স্ত্রী ফারহানা ইসলাম ডলি।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/753865