৬ জুন ২০২৩, মঙ্গলবার, ৩:৪৫

ডেঙ্গু বাড়ছে, এক দিনেই আক্রান্ত ১০১ জন

গতকাল ১ জনের মৃত্যু

বেড়েছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। সামনের দিনগুলোতে আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ঢাকায় সবচেয়ে বেশি বেড়েছে এবং এই শহরেই কয়েকদিনের মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বর্তমানের চেয়ে কয়েক গুণ বেড়ে যেতে পারে। ঢাকা শহরের সর্বত্রই রয়েছে ডেঙ্গু জীবাণুবাহী এডিস মশা বেড়ে উঠার উত্তম পরিবেশ। এ শহরে প্রতিদিন ফগিং করা হলেও তা নির্দিষ্ট কিছু এলাকায়, সর্বত্র তা করা হয় না। লার্ভিসাইডিং করা হলেও সর্বত্র যায় না সিটি করপোরেশনের লোকজন। এমন অনেক এলাকা রয়েছে যেখানে সন্ধ্যার পর মশার জন্য স্বাভাবিকভাবে বসে থাকা দুষ্কর।

গতকাল সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশে ১০১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে এবং ডেঙ্গুতে মারা গেছে একজন। সারা দেশে চলতি জুন মাসের ৫ দিনে যত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে তা গত মে মাসের অর্ধেকের চেয়ে কিছুটা কম কিন্তু ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিল এই তিন মাসের সম্মিলিত ডেঙ্গু আক্রান্তের চেয়ে বেশি। এই তিন মাসে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসেবে সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিল ৪১০ জন, আবার গত মে মাসে আক্রান্ত হয়েছে ১০৩৬ জন। চলতি মাসের গত ৫ দিনে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে চারজন। এর মধ্যে গত রোববারের সকাল ৮টার আগ পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে তিনজন মারা গেছে ডেঙ্গুতে। এ ছাড়া গত রোববারের একই সময়ে সারা দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ৯৭ জন। গতকাল সোমবার আগের দিনের চেয়ে চারজন বেশি আক্রান্ত হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের এ তথ্যের বাইরেও আরো ডেঙ্গু আক্রান্ত থাকতে পারে। কারণ স্বাস্থ্য অধিদফতর দেশের সব হাসপাতাল থেকে ডেঙ্গু আক্রান্তের তথ্য পায় না। আবার ডাক্তারের প্রাইভেট চেম্বারে যারা চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে যায় তাদের তথ্যগুলোও স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যে থাকে না।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিনের ডা: মাহমুদুল হাসান জানান, তার চেম্বারে তিনি ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী পাচ্ছেন। প্রতিদিনই না পেলেও তিনি আগের চেয়ে বেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত পাচ্ছেন। তিনি জানান, ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতর বলেছে, এ বছর দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়বে। এ লক্ষণ দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। তিনি বলেন, ডেঙ্গু জীবাণুবাহী এডিস মশা বেড়ে যাওয়ার যথেষ্ট পরিবেশ ঢাকা শহরে রয়েছে।

তিনি বলেন, গত কয়েক দিন আগে বেশ ভালো বৃষ্টি হয়েছে ঢাকা শহরে তথা সারা দেশেই। কিন্তু মৌসুমি বায়ুর আগমনের আগে হঠাৎ বৃষ্টি কমে গেছে। জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা চলতি বছর বৃষ্টি কম হওয়ার পূর্বাভাস দিয়ে আসছেন। ফলে মনে হচ্ছে, বৃষ্টি কম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে থেমে থেমে বৃষ্টি হতে থাকলেও এডিস মশাও বৃদ্ধি পেতে পারে আগের বছরের চেয়ে বেশি হারে।

এ দিকে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বাংলাদেশে মৌসুমি বায়ু প্রবেশ করতে বেশ কিছুটা দেরি হতে পারে। কারণ এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের টেকনাফ অঞ্চল থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমের মৌসুমি বায়ু অনেকটা দূরে রয়েছে। গতকাল সোমবারও আবহাওয়া অফিস বলেছে, টেকনাফ অঞ্চল স্পর্শ করতে মৌসুমি বায়ু আরো ৫ দিন সময় লাগবে। অবশ্য আবহাওয়া দফতর জুন মাস আসার পর থেকে বলে আসছে, আগামী ৫ দিনের মধ্যে মৌসুমি বায়ু টেকনাফ উপকূল পর্যন্ত অগ্রসর হতে পারে। মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে এবার মৌসুমি বায়ু আগমনের পরিবেশ তৈরিতে সময় নিচ্ছে বলে আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন।

ডা: মাহমুদুল হাসান বলেন, সামনের কয়েক দিন বৃষ্টি না হলে ডেঙ্গু আরো বেড়ে যাবে সে কথা মাথায় রেখেই সিটি করপোরেশনের উচিত ডেঙ্গু মোকাবেলায় ব্যবস্থা নেয়া।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, চলতি বছর দেশে মোট ১৭ জন মানুষ ডেঙ্গুতে ভোগে মারা গেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের আলোচনায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেছেন, দ্বিতীয় ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে বিপদের শঙ্কা রয়েছে। ফলে সবার উচিত ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানো। এমনকি দিনের বেলাও ঘুমানোর সময় মশারি টানিয়ে ঘুমাতে হবে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/753387