৪ জুন ২০২৩, রবিবার, ১১:১৪

মোখার পর সেন্টমার্টিন নিয়ে নয়া তথ্য

মোখার পর সেন্টমার্টিন নিয়ে নয়া তথ্য দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত হবার পর এ নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিলেও তা সাগরে বিলীন বা ডুবে যাওয়ার কোনো শঙ্কা নেই বলেও জানিয়েছেন তারা। জানা গেছে ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে প্রবাল দ্বীপটির কয়েকটি এলাকার সাগর পাড়ের কিছু অংশ ভেঙে সাগরে মিশে গেছে। যদিও সাময়িকভাবে দ্বীপের স্থলভাগের কী পরিমাণ ক্ষয় হয়েছে বা সাগরে মিশে গেছে তা চিহ্নিত করার কাজ চলছে বলে স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে সেন্টমার্টিনের ‘লাইন ইরোশন’ হয়নি। ভূতাত্ত্বিক গঠন ও অবস্থানের কারণেই দীর্ঘদিন ধরে দ্বীপের উত্তর ও মাঝের অংশে ক্ষয় হচ্ছে। স্বল্প গভীরে গড়ে ৩-৫ মিটারের মধ্যে পাথর পাওয়া যাওয়ায় এ ‘রক আইল্যান্ডের’ সাগরে একেবারে বিলীন হওয়ার বা ডুবে যাওয়ার কোনো শঙ্কা নেই।

বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সিনিয়র সাইন্টিফিক অফিসার আবু শরীফ মো: মাহবুব-ই-কিবরিয়া সাংবাদিকদের জানান, ঘূর্ণিঝড় মোখায় সেন্টমার্টিনের অনেক গাছপালা ও বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। তবে স্থানীয়রা বলছেন, ঝড়ের সময় জলোচ্ছ্বাস বেশি না হওয়ায় খুব বেশি ভাঙেনি। দ্বীপের উত্তর পাড়া, মাঝের পাড়া ও গলাচিপা পাড়া ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে ঢেউয়ের তোড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে একটি পাড়ার জেটি এলাকার কিছু অংশ ভাঙতে ভাঙতে হোটেল স্থাপনার কাছাকাছি চলে এসেছে। তিনি জানান, দ্বীপের কতটুকু অংশ বিলীন হয়েছে তা নির্ধারণের পরিকল্পনা করেছে ইনস্টিটিউটের একটি দল।

ইনস্টিটিউটের এনভায়রনমেন্টাল ওশানোগ্রাফি ও ক্লাইমেট বিভাগের প্রধান বলছেন, সেন্টমার্টিনের উত্তর দিকে উপকূলের কিছু অংশ ১০ থেকে ১৫ ফুট ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে সাগরে মিশে গেছে। এ ছাড়া গলাচিপার কিছু অংশও ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে। সার্বিকভাবে পুরো দ্বীপের উপকূলে যেসব অংশে সেডিমেন্টেশন বেশি, সেগুলো অল্প করে হলেও ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে। দ্বীপের ‘সয়েল প্রোফাইলিংয়ের’ অভিজ্ঞতা তুলে ধরে আবু শরীফ জানান, স্বল্প গভীরে গড়ে ৩-৫ মিটারের মধ্যে পাথর পাওয়া যাওয়ায় এ ‘রক আইল্যান্ডের’ সাগরে একেবারে বিলীন হওয়ার বা ডুবে যাওয়ার কোনো শঙ্কা নেই। ঘূর্ণিঝড় মোখার আগে-পরে সেন্টমার্টিনের সার্বিক পরিস্থিতি তদারকি করেছেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: কামরুজ্জামান। তিনি জানান, ক্ষয়ে যাওয়া অংশ সাগরপাড়ের ভরাট বালুময় এলাকা। কী পরিমাণ ক্ষয়ে গেছে, তা পরিমাপ ছাড়া বলা যাবে না।

তবে উত্তর-পূর্ব অংশের ৫ ফুটের মতো হতে পারে। এটা নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করছে, সহসাই আপনারা একটা সংবাদ পাবেন। সেখানে পরিবেশ ও প্রতিবেশের বিষয়টি মাথায় রেখে পরবর্তী কার্যক্রম নেয়া হবে।

সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ তার দীর্ঘ ৩০ বছরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সাংবাদিকদের বলেন, দ্বীপের কিছু জমি ও উত্তর-মাঝের পাড়ার কিছু অংশ অমাবস্যা-পূর্ণিমায় সাগরের পানির উচ্চতা বাড়ার কারণে ঢেউয়ের সময় ভেঙে গেছে। তবে মোখা ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাস না হওয়ায় তেমন ভাঙেনি। গত ১৫ বছরে মিনিমাম ১৫০ একর জমি সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির ওশানোগ্রাফি অ্যান্ড হাইড্রোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. আফতাব আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে সেন্টমার্টিনের ‘লাইন ইরোশন’ হয়নি। ভূতাত্ত্বিক গঠন ও অবস্থানের কারণে দীর্ঘদিন ধরে উত্তর ও মাঝের অংশে ক্ষয় হচ্ছে।

তার ভাষ্য, ঘূর্ণিঝড়টি সেন্টমার্টিনের ওপর দিয়ে যায়নি, এর প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসও হয়নি, ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথ যেভাবে অতিক্রম করেছে তাতে দ্বীপের কোথাও ভেঙে যাওয়ার মতো প্রভাব পড়েনি। তিনি বলেন, দ্বীপের উত্তরে মহীসোপানের শেষ প্রান্তে সাগরের অভ্যন্তরে এক ধরনের ওয়াল রয়েছে। এখানকার বিশেষত্বের কারণে মোখার ঘূর্ণিবায়ু থাকলেও জোয়ার না থাকায় জলোচ্ছ্বাসের প্রভাবও তেমন পড়েনি।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/752894