২৫ মে ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ১২:৫৯

ঢাবির হলে আবরার কায়দায় ছাত্রলীগের নির্যাতন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মাস্টার দ্য সূর্যসেন হলের ৪ জন শিক্ষার্থীকে বুয়েটের আবরার কায়দায় নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিয়াম রহমানের বিরুদ্ধে। গত মঙ্গলবার বিকেল ৩টার দিকে নিজের রুমে (৪৫০) ডেকে এ নির্যাতন করেন সিয়াম। এসময় তার সহযোগী ছিলেন- হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হামিদ কারজাই, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ জামান অভি, আব্দুল আহাদ, আপ্যায়ন সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম নীরব ও উপ-আইন সম্পাদক মুহাম্মদ তালহা। নির্যাতন শেষে ‘মুচলেকা’ নিয়ে ওই শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করে দেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা হলেন- ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী আলম বাদশা, একই বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী লুৎফুর রহমান, মনোবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের আল আমীন ও একই সেশনের আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান।

জানা যায়, ছাত্রত্ব শেষ হওয়া এক শিক্ষার্থীকে রুমে বহাল রাখতে হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিয়াম রহমানের নেতৃত্বে ভুক্তভোগীদের নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে গতকাল বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে একটি সংবাদ সম্মেলন করেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা।

আলম বাদশা নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, হলের ২০১৩-১৪ সেশনের অবৈধ ছাত্র সুমন আহমেদের মিথ্যা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সূর্য সেন হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিয়াম রহমান আমাদের গত মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় তার রুমে ডেকে নেন। এরপর অকথ্য ভাষায় আমাদের গালিগালাজ করেন তিনি। এসময় সিয়াম ও তার সহযোগী আহাদ, হামিদ কারজাই মিলে আমাদের ফোন চেক করাসহ ফেসবুকে ডিটেইলস দেখেন। তবে তারা আমাদের কাছে কোনো ধরনের অনৈতিক তথ্য পায়নি। তারা আমাদের সবাইকে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা ধরে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন। এছাড়া আমাদের এসময় তারা স্ট্যাম্প দিয়ে পিঠে এবং পায়ে প্রচ- আঘাত করেন। ফলে আমরা সবাই অসুস্থ হয়ে পড়ি।

সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, সিয়াম রহমান আমাদের কাছ থেকে জোরপূর্বক সরকার বিরোধী কর্মকা-ে জড়িত থাকার বিষয়ে মুচলেকা নেন এই বলে যে, আমরা বর্তমানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত নই। আমরা নাকি রুমের বড় ভাইকে অন্যায়ভাবে বের করে দিয়েছি এবং সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের সঙ্গে একমত নই। আমাদের এরকম পোস্ট হলের বড় ভাইরা জানার পর হল থেকে বের করে দেন। এছাড়া আমরা নাকি স্বজ্ঞানে হল থেকে বের হয়ে যাচ্ছি। মুচলেকা নেওয়া শেষে রাত ৮টার পর তারা আমাদের ছেড়ে দেন। এরপর থেকে আমরা হলের বাইরেই অবস্থান করছি।

তারা বলেন, আমাদেরকে মুচলেকা লিখতে বলা হলে আমরা আমাদের উপর নির্যাতনের ঘটনা উল্লেখ করে তাদের হাতে দিলাম। কিন্তু সেগুলো ছিড়ে ফেলে সিয়াম ভাই নিজে একটা লিখে দেন এবং সেটার অনুরূপ একটা মুচলেকা লিখতে বাধ্য করেন।

এ বিষয়ে হল প্রভোস্ট বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। অভিযোগ আমলে নিয়ে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটির গঠনের কথা জানিয়েছেন হল প্রভোস্ট মো. জাকির হোসেন ভূঁইয়া। তিনি বলেন, তাদের সব অভিযোগের প্রেক্ষিতে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে একটি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা সিয়াম রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ছাত্রলীগের নাম করে জোরপূর্বক একজনকে বের করে দিতে চাইলে আমি তাদের রুমে ডেকে কথা বলি। কেন ছাত্রলীগের নাম ব্যাবহার করে তারা একজনকে বের করে দিচ্ছেন এবং বিভিন্ন সময় হলে মেহমান নিয়ে আসার বিষয়ে জানতে চাই। পরে তাদের ফেসবুকে পদ্মা সেতু নিয়ে ব্যঙ্গ করা একটি পোস্ট দেখা যায়। এ কারণে তাদের ভয় দেখানোর জন্য শুধুমাত্র একটি চড় মেরেছি তার গালে। এর বাইরে আর কেউ হাত তুলেনি।

জোরপূর্বক মুচলেকার বিষয়ে তিনি বলেন, তাদেরকে রুমে ডেকে আনার পর তাদের ফেসবুক ঘেটে সরকার বিরোধী বিভিন্ন ষড়যন্ত্রমূলক পোস্ট দেখার পর তাদেরকে হল প্রশাসন কিংবা শাহবাগ থানায় দিয়ে দেয়ার কথা জানালে তারা স্বপ্রণোদিত হয়ে মুচলেকা দেন এবং হল থেকে বের হয়ে যাওয়ার কথা বলেন। যাতে পুলিশী ঝামেলা বা কোন ধরনের হয়রানির শিকার না হতে হয়। এ বিষয়ে জানতে অন্যান্য অভিযুক্তদের ফোনে পাওয়া যায়নি।

https://dailyinqilab.com/national/article/576451