১৯ মে ২০২৩, শুক্রবার, ৩:১০

চার পণ্যে মার খাচ্ছে ক্রেতারা

রাজধানীর খুচরা বাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজ, আদা ও কাঁচা মরিচের দাম আরো বেড়েছে। পেঁয়াজ কেজিতে ১০ থেকে ১৫, আদা ৩০ থেকে ৪০ ও কাঁচা মরিচ ২০ থেকে ৪০ টাকা বেড়েছে। ফার্মের মুরগির ডিম ডজনে পাঁচ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। সব ধরনের সবজির দাম কেজিতে পাঁচ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। কমেছে ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হল, রামপুরা ও বাড্ডা কাঁচা বাজার ঘুরে এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারতের পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকায় দেশি পেঁয়াজের ওপর চাপ বাড়ছে। এর প্রভাবে দাম বাড়ছে। আমদানিকারকরা বলছেন, বাজার স্বাভাবিক রাখতে আমদানির বিকল্প নেই। পেঁয়াজ আমদানি না করা গেলে বাজার আরো ঊর্ধ্বমুখী হবে। কারণ বাজারে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কমে গেছে। ঋণপত্র খোলায় (এলসি) জটিলতার কারণে চাহিদামতো আদা ও রসুন আমদানি করতে পারছেন না তাঁরা।

দেশে কৃষকের উৎপাদিত পেঁয়াজের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে গত ১৬ মার্চ থেকে হিলিসহ দেশের সব বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ আছে। পাবনা, ফরিদপুর, কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার পেঁয়াজ দিয়ে চাহিদা মেটানো হচ্ছে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরায় পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। এক মাস আগেও রাজধানীর বাজারগুলোতে পেঁয়াজের কেজি ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে রসুনের দাম তেমন পরিবর্তন না হলেও আদার দাম আরো বেড়েছে। রসুনের (আমদানি ও দেশি) কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৮০ টাকায়। আদা কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেড়েছে। আমদানি আদা দেশি বলে বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায়। চায়না আদা (বড় আকারের) কেজি ৩৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পেঁয়াজ-আদার দাম বাড়ার বিষয়ে মোহাম্মদপুর টাউন হল কাঁচাবাজারের পেঁয়াজ-রসুন ব্যবসায়ী মো. স্বপন বলেন, ‘পাইকারি বাজার থেকে বেশি দামে কিনে আনতে হচ্ছে, তাই আমরা বেশি দামে বিক্রি করছি।’

উত্তর বাড্ডার মেসার্স ভ্যারাইটিস স্টোরের ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমদানি বন্ধ থাকায় দেশি পেঁয়াজের ওপর চাপ বাড়ছে। এ কারণে দাম বেড়ে গেছে। ভারতের পেঁয়াজ না ঢোকা পর্যন্ত এই দাম
কমার সুযোগ নেই বরং বাড়তে পারে।’

খাতুনগঞ্জে আদা-রসুনের দাম বাড়তি : খাতুনগঞ্জে আমদানি করা আদা পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ২২০ টাকা কেজিতে। আর রসুন বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১৫০ টাকায়।

জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জ কাঁচাপণ্য আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, ‘বাজারে মিয়ানমারের আদা পাইকারিতে ১৭০ থেকে ২০০ টাকায় এবং ভিয়েতনামের আদা ২১০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঈদুল ফিতরের আগেও এই আদা বিক্রি হয়েছিল ১২০ থেকে ১৪০ টাকায়। এই মাসের শুরুতে দাম বেড়ে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। এখন আরো বাড়ল।’

জানতে চাইলে অ্যাগ্রো কমোডিটি ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট রেজাউল করিম আজাদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘চীন থেকে সবচেয়ে বেশি আসে আদা ও রসুন।

চীনে এখন আদার বুকিং দর অনেক চড়া। দুই হাজার ৫০০ ডলারের আদা কিনে দেশের বাজারে পৌঁছতে কেজি ৩০০ টাকার ওপরে পড়বে। এই দামে তো আদা বিক্রি হবে না। রসুনের অবস্থাও তাই। এ জন্য ব্যবসায়ীরা চীনের বিকল্প খুঁজে আমদানির চেষ্টা করছেন।’

টিসিবির বাজারদর : টিসিবির গতকালের বাজারদরের তালিকায় পেঁয়াজ, আদা, ডিম ও কাঁচা মরিচের দাম বাড়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, রাজধানীর বাজারগুলোতে গত সপ্তাহের তুলনায় দেশি পেঁয়াজ কেজিতে ১৫ টাকা বেড়ে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত এক মাসে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১২১ শতাংশ বেড়েছে বলে সরকারি এই সংস্থাটির তথ্যে দেখা গেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি ও আমদানি রসুনের দাম পরিবর্তন হয়নি, কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায়। দেশি আদা কেজি ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এবং আমদানি আদা কেজি ২৫০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা মরিচের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ২০০ টাকায়।
হিলির বাজার : সরবরাহ কমে যাওয়ার অজুহাতে দিনাজপুরের হিলিতে চার দিনের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে পাঁচ টাকা ও কাঁচা মরিচ ১০ টাকা বেড়ছে। গতকাল আদা ৩০০ টাকা কেজি বিক্রি হয়।

হিলি আমদানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুনুর রশিদ বলেন, দেশি আদা চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম। কৃষকের আদা নষ্ট হওয়ায় বাজারে সরবরাহ কম হচ্ছে।

ভারত থেকে এক-দুই ট্রাক করে আদা আমদানি হচ্ছে, কিন্তু চাহিদার তুলনায় তা খুব অল্প। তবে প্রচুর পরিমাণে এলসি খোলা হচ্ছে।
আমদানি বাড়লেই আদার দাম ঈদের আগেই কমে আসবে। এদিকে সরকার আমদানির অনুমতি (আইপি) না দেওয়ায় ভারত থেকে কাঁচা মরিচও আসছে না।

মুরগির বাজার : রাজধানীর বাজারগুলোতে সপ্তাহের ব্যবধানে মুরগির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত কমে ব্রয়লার মুরগি কেজি ২০০ টাকা ও সোনালি মুরগি কেজি ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মোহাম্মদপুর টাউন হল কাঁচাবাজারের মদিনা ব্রয়লার হাউসের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ নূর নবী বলেন, ‘বাজারে এখন মুরগির দাম কমতির দিকে। ব্রয়লার বিক্রি করছি ২০০ টাকায় এবং সোনালি মুরগি বিক্রি করছি ৩৩০ টাকায়।’

সবজির বাজার : বগুড়ার পাইকারি বাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধানে কমেছে কিছু সবজির দাম, আবার বেশ কয়েকটি সবজির দাম বেড়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে করলার দাম অর্ধেকেরও নিচে নেমেছে। পটোল মণপ্রতি এক হাজার টাকা দাম কমেছে।

একইভাবে দাম কমেছে বেগুন, ঢেঁড়স ও পেঁপের। এ ছাড়া দাম বেড়েছে মিষ্টি কুমড়া, টমেটো, কচুর লতি ও মুলার দাম। বাজারে কাঁচা মরিচ, আলু ও শজনের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। বগুড়ায় সবজির সবচেয়ে বড় বাজারখ্যাত মহাস্থান হাটে কৃষকরা যে দামে সবজি বিক্রি করেছেন তার চেয়ে মণে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেশিতে বিক্রি হয়েছে শহরের আড়াতগুলোতে।

গতকাল মহাস্থান হাট ঘুরে দেখা যায়, মিষ্টি কুমড়া বিক্রি হয়েছে ৯২০ থেকে ৯৬০ টাকা মণ; গত সপ্তাহে ছিল ৮০০ টাকা মণ। টমেটো বিক্রি করতে দেখা যায় এক হাজার ৪০০ থেকে এক হাজার ৬০০ টাকা মণ, গত হাটে টমেটো বিক্রি হয়েছে ৮০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা মণ। বেগুন গতকাল প্রকারভেদে বিক্রি হয় এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৬০০ টাকা মণ, গত সপ্তাহে ছিল এক হাজার ৬০০ থেকে দুই হাজার ৪০০ টাকা মণ। কাঁচা মরিচ প্রতি মণ বিক্রি হয়েছে চার হাজার ৮০০ টাকায়, গত হাটেও তা একই দামে বিক্রি হয়। পেঁপে এক হাজার থেকে এক হাজার ১০০ টাকা মণ বিক্রি হয়, গত সপ্তাহে হাটে পেঁপে বিক্রি হয়েছে এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৪০০ টাকা মণ। কচুর লতির দাম ছিল দুই হাজার ৪০০ থেকে দুই হাজার ৬০০ টাকা মণ, গত সপ্তাহে তা এক হাজার ৫০০ থেকে এক হাজার ৬০০ টাকা মণ বিক্রি হয়েছে। আলুর দাম অপরিবর্তিত আছে।

এদিকে বাজারে সবজির সরবরাহ কিছুটা কমে যাওয়ায় রাজধানীর বাজারগুলোতে দাম বাড়ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে কাঁচা মরিচ মানভেদে কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে ১৬০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেশির ভাগ সবজি কেজিতে পাঁচ থেকে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে। বেগুন কেজিতে ৭০ থেকে ৮০ টাকা, পটোল ৭০ থেকে ৮০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, টমেটো ৫০ থেকে ৬০ টাকা, পেঁপে ৭০ টাকা, শসা (দেশি) ৬০ থেকে ৭০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, করলা ৮০ থেকে ৯০ টাকা, ঝিঙ্গা ও চিচিঙ্গা ৮০ টাকা এবং চাল কুমড়া প্রতিটি ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2023/05/19/1281348