১৮ মে ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ৭:১৪

জবির হলে ছাত্রলীগের হাতে ছাত্রী নির্যাতন

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) বেগম ফজিলাতুননেছা মুজিব ছাত্রীহলে এক আবাসিক শিক্ষার্থীকে তিন ঘণ্টা আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।

একই হলের একাধিক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ করেন চারুকলা বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের হাফসা বিনতে নূর। নির্যাতনের একপর্যায়ে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান বলেও জানান।

এ ঘটনায় বুধবার জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে হল প্রভোস্টের মাধ্যমে উপাচার্য বরাবর অভিযোগপত্র দেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।
অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা হলেন-তন্বী, ইশিতা, ফাল্গুনী আক্তার, নিনজা শিকদার, ইরা ও নাজমুন নাহার স্বর্ণা। জানা যায়, এসব শিক্ষার্থী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হাফসা বিনতে নূরের সঙ্গে জুনিয়র রুমমেট রেবেকা খাতুনের কথা কাটাকাটি হয়। পরে রেবেকা হলের অন্য রুমের মেয়েদের নিয়ে এসে রুমে আটকে হাফসাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন ও হেনস্তা করেন।

প্রায় তিন ঘণ্টা হেনস্তার পর হাফসা অজ্ঞান হয়ে যান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি এসে হাফসাকে রুম থেকে বের করে নিয়ে আসতে চেয়েছি।

কিন্তু রেবেকা, নিনজা, ফাল্গুনীসহ সবাই তাকে ঘেরাও করে রাখে, যেন সে আসতে না পারে। সে মোবাইল ফোন নিতে গেলেও তাকে গালিগালাজ করে। এরা রাজনৈতিক দাপট দেখিয়ে প্রায় সময় হলে অনেক সাধারণ শিক্ষার্থীকে হেনস্তা করে। এগুলোর প্রতিবাদ করার কেউ নেই। শিক্ষার্থীরা এদের কাছে জিম্মি।’

এ বিষয়ে অভিযোগকারী হাফসা বলেন, ‘এটা আমাদের রুমের অভ্যন্তরীণ ঘটনা। কিন্তু আমাদের দুই ব্যাচ জুনিয়র উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের রেবেকা খাতুন হলের অন্য রুমের ৭-৮ জন মেয়েকে ডেকে এনে আমাকে লাঞ্ছিত ও মারধর করে। হল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেয়।

তারা সবাই রাত সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত নিপীড়ন চালায়। নিনজা শিকদার পুরো ঘটনা মোবাইলে ভিডিও ধারণ করেছে। এক পর্যায়ে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। রেবেকার কর্মকাণ্ডে আমাদের অন্য রুমমেটরাও হেনস্তার আশঙ্কায় থাকে।’

বিষয়টি সম্পর্কে নাজমুন নাহার স্বর্ণার কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর আমি গিয়ে ওদের শান্ত করার চেষ্টা করি। কিন্তু হাফসা আপুকে মারধরের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। একপর্যায়ে আমি ওদের রুমে ম্যামকে রেখে নিচে চলে আসি। তারপর নাকি হাফসা আপু আমাদের ছাত্রলীগের মেয়েদের গায়ে হাত দেয়।’

ঘটনার সময় উপস্থিত হলের আবাসিক শিক্ষক মানসুরা বেগম বলেন, ‘ঘটনাটি জেনে আমি সেখানে উপস্থিত হই। আমি যাওয়ার পরও তারা আক্রমণাত্মক আচরণ করছিল।

হাফসাকে তারা রুমের বাইরে যেতে ও ফোনটাও ধরতে দিচ্ছিল না। আমি সবাইকে বোঝানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হই। তারা আমার সামনেই আরও উত্তেজিত হয়ে যায়।’ এ ঘটনার বিষয়ে হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. দীপিকা রানী সরকার বলেন, হলে বেশ কিছুদিন ধরে এ ধরনের ঘটনা ঘটেই চলেছে।

এ ধরনের নানান ঘটনায় আমি শঙ্কিত। অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা আলোচনায় বসেছি। দুপক্ষকে ডেকে বিষয়টি সমাধান করে দিয়েছি। পরে কেউ এ ধরনের কাজের সঙ্গে জড়িত হলে তার সিট বাতিল হবে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/675781