১৩ মে ২০২৩, শনিবার, ১২:০৫

সবজির দাম আকাশচুম্বী

হাফ কেজি-আড়াই শ’ গ্রামের ক্রেতা বাড়ছে

ভোগ্যপণ্যের অন্যতম প্রধান উপাদান সবজির বাজার এখন আকাশচুম্বী। বাজারে বিভিন্ন সবজির দাম বাড়তে বাড়তে এখন ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। যে সব ক্রেতা আগে কেজি পরিমাণ সবজি কিনতেন তারা এখন হাফ কেজি-আড়াইশ’ গ্রাম করে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি পটোল বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, বেগুন ৮০, ঝিঙ্গা ৮০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, কাঁকরোল ১০০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা, পেঁপে ৮০ টাকা, করলা ১০০ টাকা, টমেটো প্রতি কেজি ৪০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা এবং শসা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা দরে। অন্য দিকে চাল কুমড়া পিস ৬০ টাকা, গাজর প্রতি কেজি ১০০ টাকা, কচুর লতি ১০০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৮০ টাকা, কাঁচামরিচ প্রতি কেজি ২৫০ টাকা এবং কাঁচাকলা প্রতি হালি ৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর খিলগাঁও বাজারে আসা আমিনুল ইসলাম বলেন, পরিবারের চার সদস্যের জন্য সপ্তাহে ১ দিন সবজির বাজার করতাম। সবজিগুলো ১ কেজি বা অধিক পরিমাণে নেয়া হতো। কিন্তু বর্তমানে সবজির দাম অনেক বেশি। আগের এক কেজি সবজির দামে এখন হাফ কেজি সবজি পাওয়া যাচ্ছে। এ জন্য কেনাও কমিয়ে দিয়েছি। হাফ কেজি-আড়াইশ’ গ্রাম করে সবজি কিনতে হচ্ছে।

এমন বাড়তি দামে ক্ষুব্ধ ক্রেতারা বলছেন, বাজারে ৭০-৮০ টাকা কেজির নিচে কোনো সবজি নেই। বাজারে পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি, আর করলা ১০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। সব ধরনের সবজিই যদি এত বাড়তি দামে বিক্রি হয়, তাহলে আমরা কিভাবে কিনব?
সবজির দাম বৃদ্ধির বিষয়ে ব্যবসায়ীরা বলছেন, অতিরিক্ত গরমে সবজির সরবরাহ কম। ঢাকায় পাইকারি বাজারে সবজি কম আসছে আগের তুলনায়। এ ছাড়া অনেক ধরনের সবজির মৌসুম এখন শেষের দিকে ফলে সেসব সবজির দাম বাড়তি। বৃষ্টি নেই, অতিরিক্ত গরম যে কারণে সবজি কম ফলছে। চাহিদার তুলনায় ঢাকায় কম আসায় কাওরান বাজারসহ পাইকারি বাজারগুলোতেই সবজির দাম বাড়তি। যে কারণে খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। পেঁপের বাজার হঠাৎ করেই বেড়েছে। কারণ পেঁপের মৌসুম শেষের দিকে, গাছে এখন পেঁপে নেই। তাই প্রতি কেজি খুচরা বাজারে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া করলা চাহিদার তুলনায় বাজারে সরবরাহ কম থাকায় এর দাম বেড়ে ১০০ টাকা হয়েছে।

বাসাবো বাজারের সবজি বিক্রেতা আলম বলেন, সবজির দাম কিছ ুদিন ধরে বাড়তি যাচ্ছে। দাম বাড়তির কারণে আগের চেয়ে সবজি বিক্রিও কমে গেছে আমাদের। আগে যেখানে একজন ক্রেতা এক আইটেম এক কেজি নিতো এখন সেখানে আধা কেজি নিচ্ছে। যে কারণে সব বাজারে সব দোকানেই সবজি বিক্রি অনেক কমেছে। দাম বৃদ্ধির কারণে মানুষও তুলনামূলক কম সবজি কিনছে।

বাজারে পাট শাক জোড়া আঁটি ৩০ টাকা, কলমি শাক জোড়া আঁটি ২০ টাকা, কচু দুই আঁটি ২০ টাকা, লাল শাকের জোড়া আঁটি ৩০ টাকা, পুঁই শাক ৩০ টাকা, শাপলা ডাঁটা ১০ টাকা, ডাঁটা শাক ১০ টাকা, সবুজ ডাঁটা ২০ টাকা আঁটিতে বিক্রি হচ্ছে। আর ধনে পাতা ১০০ গ্রাম ৩০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

গত বৃহস্পতিবার খোলা চিনির দাম কেজিপ্রতি ১৬ টাকা বাড়িয়ে ১২০ টাকা নির্ধারণ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আর প্যাকেটজাত চিনির কেজি ১২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে আগে থেকে অস্থির চিনির বাজার আরো অস্থিতিশীল হয়েছে। ১৪০ টাকার কম কোথাও খোলা চিনি মিলছে না। আর বাজারে প্যাকেটজাত চিনিতো কয়েক সপ্তাহ ধরেই উধাও। এক সপ্তাহ আগেই বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ১২ টাকা বাড়িয়ে ১৯৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়। যা আগে ছিল ১৮৭ টাকা। তবে নতুন দামের তেল এখনো আসেনি সবখানে। কিন্তু পুরনো দাম লেখা মোড়কের বোতলও বাজারে বিক্রি হচ্ছে নতুন দামে।

মুদি দোকানে লিটারে ১২ টাকা বাড়ানোর খবরের সঙ্গে সঙ্গে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারাও সয়াবিন তেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। যদিও পুরনো তেল লিটারে ১২ টাকা বেশিতে বিক্রি হচ্ছে না, লিটারপ্রতি ৩-৮ টাকা পর্যন্ত বেশি নিতে দেখা গেছে।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের মোড়কে দাম ১৮৭ টাকা লেখা, অথচ সেই তেল বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকায়। ৩৭৪ টাকার দুই লিটার তেল বিক্রি হচ্ছে ৩৮০-৩৯০ টাকায় এবং ৯০৬ টাকার ৫ লিটার তেল বিক্রি হচ্ছে ৯১৫-৯২০ টাকায়। এ ছাড়া আটা, ময়দা ও ডালের দাম নতুন করে না বাড়লেও সেগুলো বেশ আগেই বেড়ে বছরের অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

ঈদের পর থেকে প্রতি কেজি পেঁয়াজে ৩০-৩৫ টাকা বেড়ে এখন ৭০ টাকায় ঠেকেছে। যা দু’দিন আগেও ৬০-৬৫ টাকা ছিল। এ ছাড়া প্রতি কেজি আদা কিনতে গুনতে হচ্ছে ৩০০ টাকার কিছু কম বা বেশি। যা গত বছর একই সময় ছিল ৯০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে। অর্থাৎ, বছরের ব্যবধানে এখন আদার দাম তিনগুণেরও বেশি বেড়েছে। আর শেষ ঈদের পর থেকে বেড়েছে কেজিতে মানভেদে ১০০ থেকে ১৪০ টাকা। অন্য দিকে আমদানি করা চীনা রসুনের কেজিপ্রতি দাম ২০ টাকা ৩০ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা।

এ দিকে বাজারে ঈদের মধ্যে বেড়ে যাওয়া ব্রয়লার মুরগির দাম কমেনি। বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা কেজি দরে। সোনালি মুরগির কেজি ৩১০ থেকে ৩২০ টাকা। মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি পাঙ্গাশ ১৭০-২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তেলাপিয়া মাছের কেজি হয়েছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা। প্রতি কেজি চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ১০০০ টাকায়। তাজা রুই, কাতলা, মৃগেল বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৩৬০ টাকা কেজি দরে। দেশি প্রজাতির টেংরা, শিং, গচি ও বোয়াল মাছের কেজি ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/747520