১২ মে ২০২৩, শুক্রবার, ১২:০২

গরমে রোগী বেড়ে দ্বিগুণ, শিশু হাসপাতালে শয্যা ফাঁকা নেই

দুই বছরের শিশু রাইসার হঠাৎ প্রস্রাব কমে গেছে। চিকিৎসক বলছেন পানিশূন্যতা থেকে এ অবস্থা। তাকে স্যালাইন দেওয়া জরুরি। কিন্তু হাসপাতালে শয্যা ফাঁকা নেই। তাই জরুরি বিভাগ থেকে শিশুটিকে অন্য কোনো হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হলো অভিভাবকদের।

বৃহস্পতিবার (১১ মে) দুপুরে রাজধানীর শিশু হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, রাইসার মতো আরো অনেক শিশুর মা-বাবা শয্যা না পেয়ে সন্তান নিয়ে অন্য হাসপাতালের দিকে ছুটছেন। হাসপাতালে আসা বেশির ভাগ শিশু তীব্র গরমে পানিশূন্যতাসহ নানা সমস্যায় আক্রান্ত।
রাইসার মা ফুলমেহের কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সেই সকাল ৮টা থেকে সিরিয়াল দিয়েছি। তখনো ৪০ থেকে ৫০ জনের পেছনে। ডাক্তার দেখে ভর্তি লিখে দিয়েছেন। কিন্তু বিছানা খালি নাই।’

নরসিংদী থেকে আসা ফুলমেহের জানান, গত দু্ই দিন আগে রাইসার খুব ঘাম হয়। এরপর শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যায় এবং বুকের দুধ খাওয়া বন্ধ করে দেয়। মুখে খাবার দিলেও বমি করেছে। শুরুতে নরসিংদীতে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নেন। পরে অবস্থার অবনতি হলে রাইসাকে ঢাকায় নিয়ে আসেন।

শিশু হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ঈদ-পরবর্তী সপ্তাহ ২৩ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেওয়া রোগীর সংখ্যা দুই থেকে আড়াই হাজার। গত সপ্তাহে রোগীর সংখ্যা বেড়ে পাঁচ হাজার ছাড়িয়েছে। প্রতিদিন গড়ে নয় শর বেশি রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। স্বাভাবিক সময়ে এ সংখ্যা চার থেকে পাঁচ শ।

পেটের ব্যথায় কাতর সাত বছরের শিশুসন্তান সামিরকে নিয়ে কুমিল্লা থেকে আসা বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘গ্রামের ডাক্তার বলেছেন ছেলের জন্ডিস। গত দুই দিন ধরে নতুন করে পেটব্যথা, বারবার বমি করছে। এ জন্য নিয়া আসছিলাম, কিন্তু ভতি নেয় না। কয় বিছানা নাই। এখন ঢাকা মেডিক্যালে যাচ্ছি।’

চিকিৎসকরা জানান, তীব্র গরমে পানিশূন্যতা নিয়ে রোগী বেশি আসছে। বেশির ভাগের পেটব্যথা, বমি, ডায়রিয়া, কাশি ও গলাব্যথা। এ ছাড়া মামস, চিকেন পক্সও (জলবসন্ত) আছে। পানিশূন্যতা নিয়ে আসা রোগীদের জরুরি স্যালাইন দিলে ছয় ঘণ্টার মধ্যে ভালো হয়ে যায়। বমি আর গ্যাসের ইনজেকশন দিলে খেতে পারে। আর মুখে খাবার খেলে শিশুর পানিশূন্যতা কমে আসে।

হাসপাতালটির নবজাতক বিভাগের অধ্যাপক ডা. মাকছুদুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, বেশির ভাগ মা-বাবা সন্তানের প্রস্রাব কমে যাওয়ার সমস্যার কথা বলছেন। এর অন্যতম কারণ প্রচণ্ড গরমে শরীরে ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা। যেসব শিশুর ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, কিডনির সমস্যা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে এ সমস্যা বেশি হচ্ছে।
পানিশূন্যতার লক্ষণ

অধ্যাপক ডা. মাকছুদুর রহমান বলেন, অতিরিক্ত ঘেমে শিশুর পানিশূন্যতা দেখা দেয়। এতে শিশু দুর্বল হয়ে পড়ে এবং প্রস্রাব কমে যায়। এ ছাড়া এমন গরম আবহাওয়ায় শিশু জ্বর, বমি বা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে। এতে শিশুর শরীর আরো দ্রুত পানিশূন্য হয়।

তিনি বলেন, বেশির ভাগ মানুষ ডিহাইড্রেশনের লক্ষণগুলো প্রাথমিক অবস্থায় বুঝতে পারে না। অবস্থার অবনতি হলে নড়েচড়ে বসে। শরীরে পানির ঘাটতি হলে বারবার তেষ্টা পায়, শিশুর ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়, মাথা ঘুরায়, হার্টবিট বেড়ে যায়, খিঁচুনি হয় বা অজ্ঞান হয়ে পড়ে।

পানিশূন্যতায় অতিরিক্ত ক্লান্ত লাগে, ঠোঁট শুকিয়ে যায়, বিরক্ত হয়ে শিশু বারবার কান্নাকাটি করে। আরেকটা হলো কোষ্ঠকাঠিন্য। শরীরে পানির পরিমাণ কমে গেলে এর প্রভাব পেটের ওপরও পড়ে। বয়স্করা পানি কম খেলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগে।
গরমে শিশুর সুস্থতায় করণীয়

অধ্যাপক ডা. মাকছুদুর রহমান বলেন, তীব তাপপ্রবাহের সময় শিশুকে ছায়া বা ঠাণ্ডা জায়গায় রাখা দরকার। ঘরে বাতাস চলাচল নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া ঘরের ভেতর পর্দা, ভেজা তোয়ালে বা গামছা ঝুলিয়ে রাখলেও ঘর ঠাণ্ডা থাকে। শিশুকে প্রতিদিন গোসল করাতে হবে। অন্তত দুইবার মাথাসহ পুরো শরীর নরম সুতি কাপড় বা ভেজা গামছা দিয়ে ভালোভাবে মুছে দিতে হবে।

তিনি বলেন, শিশুর পানির ঘাটতি মেটাতে তাজা ফলের শরবত ও বিশুদ্ধ পানি এবং তরল জাতীয় খাবার দিতে হবে। যেসব শিশু বুকের দুধ পান করে, তাদের ঘন ঘন দুধ দিতে হবে। তবে জোর করে খাওয়ানো যাবে না। এতে বমি হয়ে শিশুর শরীরে পানিস্বল্পতা দেখা দিতে পারে। গরমে শিশুকে ঢিলেঢালা ও পাতলা সুতির কাপড় পরাতে হবে। ঘেমে গেলে দ্রুত শরীর মুছে দিতে হবে।

https://www.kalerkantho.com/online/national/2023/05/12/1279211