১১ মে ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ১১:২০

এক লাফে ১৬ টাকা বাড়লো চিনির কেজি

আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রমবর্ধমান মূল্যের পরিপ্রেক্ষিতে দেশের বাজারে প্রতি কেজি চিনির দাম ১৬ টাকা বাড়ানোর অনুমতি দিয়েছে সরকার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, পরিশোধিত খোলা চিনির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি কেজি ১২০ টাকা, যা আগে ছিল ১০৪ টাকা। আর প্যাকেটজাত পরিশোধিত চিনির দাম কেজি প্রতি ১০৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২৫ টাকা করা হয়েছে। চিনি পরিশোধনকারীরা নতুন এই দামে চিনি বিক্রি করার অনুমতি পেলো।

গতকাল বুধবার সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে একটি কর্মশালা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেশি হওয়া, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া ও দেশে বাড়তি পরিবহন খরচের জন্য চিনির দাম বাড়ছে। তাছাড়া চিনির একটু ঘাটতি আছে বলে খবর পেয়েছি। সচিব বলেন, চিনির জন্য শুল্ক কমানো হয়েছে। কমানোর পরও দাম অতটা কমানো যাচ্ছে না। কারণ, আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম বেড়েছে, পাশাপাশি বেড়েছে ডলারের দামও। এ ছাড়া দেশের মধ্যে পরিবহন খরচও কিছু বেড়ে গেছে। এর কারণেই দামে প্রভাব পড়ছে। তবে এ বিষয়টি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) দেখছে।

চিনির জন্য যে ট্যারিফ হার কমানো হয়েছে, সেটি ৩১শে মে পর্যন্ত বহাল আছে জানিয়ে সচিব আরও বলেন, ‘ট্যারিফ হার আরও কমানোর জন্য এনবি আরকে চিঠি দেয়া হবে। কারণ, গত বছরের তুলনায় চিনির দাম অনেক বেড়ে গেছে। তবে এনবিআর স্বাভাবিকভাবেই চিন্তা করে দেখবে যে রাজস্ব ঘাটতি কতটা। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা থাকে। রাজস্ব আদায় না হলে দেশের উন্নয়ন কর্মকা- বাধাগ্রস্ত হতে পারে। সার্বিক বিষয় বিবেচনা করেই তারা সিদ্ধান্ত নেবে। সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ট্যারিফ নির্ধারণের বিষয়টি এনবি আর দেখে থাকে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেশি বেড়ে গেলে এনবি আরকে শুল্ক কমানোর জন্য অনুরোধ করা হয়। এনবি আর পর্যবেক্ষণ করে বিভিন্ন সময় শুল্ক কমিয়ে থাকে।

এদিকে বাজারে রমজানের আগে থেকেই আমদানির ক্ষেত্রে চিনির কিছুটা ঘাটতি ছিল উল্লেখ করে সচিব বলেন, ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে হবে। তবে চিনিবাহী কত জাহাজ দেশে এসেছে, সে বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স এসোসিয়েশনের চিনির দাম বাড়ানোর দাবি বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন সুপারিশ করেছে বলে জানান তপন কান্তি। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম অনেক বেড়েছে। সে জন্য এসোসিয়েশন দাম বাড়ানোর দাবি করেছে। তিনি আরও বলেন, মন্ত্রণালয়ের অভিন্ন নির্ধারণ পদ্ধতি অনুযায়ী ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন হিসাব করে দেখেছে, এসোসিয়েশনের দাবি অনুযায়ী দাম সমন্বয় করা সম্ভব নয়। তবে খোলা চিনি ১০৪ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনি ১০৯ টাকার জায়গায় সর্বোচ্চ ১২০ টাকা ও ১২৫ টাকা নির্ধারণ করে বিপণন করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

নতুন এ দাম কার্যকরে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলেও জানান সচিব। তিনি বলেন, গত সোমবার (৮ই মে) এসোসিয়েশনকে নতুন দাম সুপারিশ করা হয়েছে। এখন এসোসিয়েশন নতুন দাম বাস্তবায়ন করবে কিনা, সে বিষয়ে যোগাযোগ চলছে। এ দাম বাস্তবায়নে মাঠপর্যায়ে কাজ করবে ভোক্তা অধিকার।

এদিকে রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়। পাড়া-মহল্লার দোকানে কোথাও কোথাও এর চেয়ে কিছুটা বেশি দামেও চিনি বিক্রি হচ্ছে। বাজারে এখন প্যাকেটজাত চিনি একেবারেই পাওয়া যাচ্ছে না। সুপারশপে কিছু প্যাকেটজাত চিনি পাওয়া গেলেও তা সীমিত। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের বাজারদরের হিসাবে, ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায়।

ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে যে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, এক কেজি পরিশোধিত খোলা চিনির প্রস্তাবিত মিলগেট মূল্য ১১৫ টাকা এবং পরিবেশক মূল্য হবে ১১৭ টাকা। পরিশোধিত প্যাকেটজাত চিনির মিলগেট মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি কেজি ১১৯ টাকা আর পরিবেশক পর্যায়ে যার দাম হবে কেজিতে ১২১ টাকা। কমিশন এ দাম প্রস্তাব করেছে ডলারের বিনিময়মূল্য ১১১ টাকা হিসেব করে। আন্তর্জাতিক বাজারদরের বিষয় উল্লেখ করে ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন বলছে, ২০২২ সালের মে মাসের শুরুতে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন অপরিশোধিত চিনি বেচাকেনা হয়েছে ৪২০ ডলারে। চলতি মাসের শুরুতে অপরিশোধিত সেই চিনির দাম হয়েছে ৫৮০ ডলার, যা গত বছরের চেয়ে টনপ্রতি ১৬০ ডলারের মতো বেশি। গত বছর ডলারের বিনিময়মূল্য ছিল ৯০ টাকা। এবার সেটা ১১০ থেকে ১১১ টাকা। তবে এই সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে পরিবহন ব্যয় বাড়েনি বলে জানিয়েছে কমিশন। ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন সূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম বেড়েছে এবং দেশে ডলারের বিনিময়মূল্য ১১৫ টাকা উল্লেখ করে চিনির দাম বাড়ানোর জন্য গত ১৭ এপ্রিল কমিশনে চিঠি দেয় বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন। সেখানে প্রতি কেজি পরিশোধিত খোলা চিনির দাম ১২৫ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনির দাম ১৩৫ টাকা প্রস্তাব করে মিলমালিকদের এই সংগঠন।

https://dailysangram.info/post/523945