৫ মে ২০২৩, শুক্রবার, ১২:৩৬

সরবরাহে ঘাটতি তেল ১৯৯, চিনি ১৪০ টাকা

ভোজ্য তেল ও চিনির বাজারে সরবরাহ ঘাটতি তৈরি হয়েছে। প্যাকেট চিনি বলতে গেলে উধাও। সরকারের নির্ধারিত দর প্রতি কেজি ১০৪ টাকা হলেও ৩৬ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে খোলা চিনি। এরই মধ্যে ভোজ্য তেল পরিশোধন কারখানাগুলোর সমিতি বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন গতকাল বৃহস্পতিবার প্রতি লিটার তেলের দাম ১২ টাকা বাড়িয়েছে।

গতকাল রাজধানীর কয়েকটি বাজারে গিয়ে প্যাকেটজাত চিনি খুব একটা পাওয়া যায়নি। খোলা চিনি পেলেও সরকারের নির্ধারিত দর ১০৪ টাকায় তা মেলেনি। প্রতি কেজি চিনি ভোক্তাকে কিনতে হচ্ছে ৩৬ টাকা বেশি দিয়ে। দোকানিরা জানান, সব শেষ ঈদের আগে মোকাম থেকে ১৩০ টাকায় চিনি কিনতে হয়েছে।

এ ছাড়া নতুন মোড়কের তেল না এলেও কেউ কেউ প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১৯৯ টাকা এবং পাঁচ লিটার ৯৬০ টাকায় বিক্রি করছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শান্তিনগর বাজারের মতলব স্টোরের মালিক মো. খোরশেদ আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বেশির ভাগ দোকানেই প্যাকেট চিনি নেই। খোলা চিনি বিক্রি করছি। এ ছাড়া কম্পানিগুলো এখনো নতুন তেল সরবরাহ করেনি। সংশ্লিষ্ট কম্পানিগুলো জানিয়েছে, তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। তাই বাড়তি দামেই বিক্রি করছি।’

সরকারের বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান টিসিবির গত বুধবারের তথ্যানুসারে চিনি প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায়। গত এক মাসে দাম বেড়েছে ১৯ শতাংশ। আর ভোজ্য তেল বিক্রি হয়েছে খোলা প্রতি লিটার ১৬৮ থেকে ১৭৫ টাকা, এক লিটার ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকা পাঁচ লিটার ৮৭০ থেকে ৮৯০ টাকা।

ভোজ্য তেল পরিশোধন কারখানাগুলোর সমিতি বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মোস্তফা হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘ভোজ্য তেল আমদানিতে সরকার ভ্যাট মওকুফ করেছিল। গত ৩০ এপ্রিল সেই মেয়াদ পার হয়েছে। ফলে এখন বাড়তি ভ্যাট দিয়ে ভোজ্য তেল আমদানি ও বন্দর থেকে ছাড় করতে হচ্ছে বিধায় নতুন করে মূল্য সমন্বয়ের দরকার পড়েছে। তার আলোকেই এই দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত।’

ব্যবসায়ীরা জানান, ৬৭৫ ডলার দরে প্রতি মেট্রিক টন চিনি আমদানি করলে আমদানি মূল্য পড়ে প্রতি কেজি ১৩১ টাকা; যার মধ্যে সরকারের শুল্ক, ভ্যাট ও অন্যান্য কর বাবদ রয়েছে কেজিতে ৩৫ টাকা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সুগার রিফাইনারস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ও দেশবন্ধু গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম রহমান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করায় বিষয়টি সরকারের নজরে আনার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। এই দামে চিনি আমদানি করলে বাজারে খুচরা মূল্য অনেক বেড়ে যাবে।’

গোলাম রহমান আরো বলেন, ‘উচ্চমূল্যে চিনি আমদানির পর যদি আন্তর্জাতিক বাজারে দাম পড়ে যায়, তখন ব্যবসায়ীদের বড় ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার শঙ্কা থাকে। সরকারের হাতে নানা পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ আছে, সেগুলো বিবেচনায় নিয়ে সরকারের পরামর্শ ও সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।’

অর্থনৈতিক বিশ্লেষক ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দায় এমনিতেই মধ্য ও নিম্ন আয়ের ভোক্তারা নাকাল প্রায়। এই সময় ব্যবসায়ীদের ব্যবসায় নৈতিক চর্চার অভাবে অধিকতর ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাদের। এই পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্য দেশগুলোর মতো সংকটকালে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য রেশনিং বা অন্য কোনো উপায়ে নায্যমূল্য নিশ্চিত করা দরকার। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়ানো জরুরি।’

তেলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গত বছরের ১৬ মার্চ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভোজ্য তেলের আমদানি পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করার যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল, তার মেয়াদ ৩০ এপ্রিল শেষ হয়েছে। সে হিসাবে ১ মে থেকে ভোজ্য তেলের কাঁচামালের ওপর আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিয়ে পণ্য খালাস করার কথা। এ ছাড়া উৎপাদন পর্যায়েও ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিয়ে বাজারে ভোজ্য তেল সরবরাহ করতে হবে। তাই মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে গত বুধবার ব্যবসায়ীরা ট্যারিফ কমিশনে বৈঠক করেন।

এ প্রসঙ্গে কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এ এস এম নাজের হোসাইন বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম যখন কমে; তখন দেশের বাজারে কমে না। সরকার শুল্ক কমানোর সুবিধা দিলেও তখন সেই সুবিধা পায়নি ভোক্তারা। অথচ বিশ্ববাজারে যখন চিনির দাম কিছুটা বাড়ল এ সময় বাজার থেকে চিনি গায়েব। অন্যদিকে ভোজ্য তেলের দর বিশ্ববাজারে কমলেও অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রতি লিটারে বাড়িয়েছে ১২ টাকা। ব্যবসায় নৈতিকতার চর্চা এবং সরকারের তদারকি ব্যবস্থার দুর্বলাতার সুযোগ নিয়েছেন তাঁরা। তিনি বলেন, ‘আমদানি পর্যায়ে তদারকি এবং সংকটকালে অপরিশোধিত চিনির পরিবর্তে পরিশোধিত চিনি আনা হলে সুফল পাবে ভোক্তারা।’

এদিকে নিম্ন আয়ের মানুষকে সুবিধা দিতে তুরস্ক থেকে ৮২.৮৯ টাকা কেজি দরে সাড়ে ১২ হাজার মেট্রিক টন চিনি কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আগের তুলনায় প্রতি কেজি চিনি কিনতে প্রায় ছয় টাকা কম খরচ হচ্ছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) জন্য এই চিনি কেনা হবে।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2023/05/05/1276960