৫ মে ২০২৩, শুক্রবার, ১২:৩৩

সবার অংশগ্রহণে অবাধ-সুষ্ঠু এবং দেশ-বিদেশে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র

গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে দাবি-পাল্টা দাবি এবং যৌথ বিবৃতির বিষয়ে ঐকমত্য না হওয়ায় পৃথক পৃথক বিবৃতি
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আবারো সব দলের অংশগ্রহণে বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং দেশ-বিদেশে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আকাঙ্কা পুনর্ব্যক্ত করেছে। অনুষ্ঠেয় ওই নির্বাচনে বাংলাদেশের জনমতের সত্যিকারের প্রতিফলন ঘটবে বলে আশা করে ওয়াশিংটনের জো বাইডেন প্রশাসন। বিচারবহির্ভ‚ত হত্যা, গুমসহ মানবাধিকার লংঘনের ঘটনাগুলো বন্ধে সরকারের চলমান পদক্ষেপগুলোর সফলতা কামনা করে বাংলাদেশের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে তাগিদ দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। অন্যদিকে বাংলাদেশের তরেফ র‌্যাবের ওপর থেকে বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং রাশেদ চৌধুরীকে দ্রæত হস্তান্তরের দাবি পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। গত বুধবার ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র নবম পার্টনারশিপ ডায়ালগে উপরুল্লিখিত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনা এবং দাবি পাল্টা-দাবি জানানো হয়। তবে নবম পার্টনারশিপ এি ডায়ালগের যৌথ বিবৃতির বিষয়ে ঐকমত্য না হওয়ায় পৃথক পৃথক বিবৃতি দেয়া হয়।
সংলাপের পর প্রচারিত এক টুইট বার্তায় মার্কিন প্রতিনিধি দলের প্রধান ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড বলেন, যখন আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ক গভীর করছি, সেই সময়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক হলো। আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনসহ মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রচারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রæতি পুনর্ব্যক্ত করেছি। সেই সঙ্গে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার জন্য আমরা বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানিয়েছি।

নবম পার্টনারশিপ ডায়ালগের পর মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের রিডআউট স্টেটমেন্টে বলা হয়েছে, ৩ মে তারিখে ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার নবম অংশীদারিত্ব সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। এতে যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডার সেক্রেটারি অব স্টেট ফর পলিটিক্যাল অ্যাফেয়ার্স ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন নিজ নিজ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। উভয় পক্ষই রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, পরিবেশগত এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে ক্রমবর্ধমান অংশীদারিত্বের প্রতি তাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। আন্ডার সেক্রেটারি নুল্যান্ড রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আতিথেয়তার জন্য বাংলাদেশকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান এবং দুই দেশের জনগণের মধ্যকার শক্তিশালী সম্পর্কের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেন। তিনি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের গুরুত্ব এবং বাংলাদেশে মানবাধিকার, শ্রম অধিকার এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রচারে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। সেই সঙ্গে দুই দেশের জনগণের সুদৃঢ় বন্ধনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

বৈঠকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে ছিলেন ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরান এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। আর যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডার সেক্রেটারি অব স্টেট ফর পলিটিক্যাল অ্যাফেয়ার্স ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ডের সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস, স্টেট ডিপার্টমেন্টের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ডোনাল্ড লু এবং মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর, হোয়াইট হাউস, ইউএসএআইডির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

ওদিকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে জানানো হয়, বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে অংশীদারিত্বের ৫০ বছর উদযাপনে প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্র সফর এবং তারও আগে সরকার প্রধানের জাপান সফরের বিষয়ে মার্কিন প্রতিনিধি দলকে অবহিত করেন। তিনি স¤প্রতি প্রকাশিত বাংলাদেশের স্বতন্ত্র ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক বিষয়ে ব্রিফ করেন।

মার্কিন প্রতিনিধি দলের নেতা ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড নিজ নিজ ইন্দো-প্যাসিফিক নথিতে দুই দেশের অভিন্নতার বিষয়ে পয়েন্ট আউট করেন। পররাষ্ট্র সচিব মোমেন তার মার্কিন কাউন্টারপার্টকে বাংলাদেশের স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ প্রশস্তকরণে নির্বাচন কমিশন গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ সম্পর্কে অবহিত করেন। যুক্তরাষ্ট্রের তরফে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্পষ্ট অঙ্গীকারের পাশাপাশি আসন্ন নির্বাচনে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের পর্যবেক্ষেণের পথ উন্মুক্ত করার প্রশংসা করা হয়।

পররাষ্ট্র সচিব বাংলাদেশের সা¤প্রতিক মানবাধিকার কর্মকাÐের কিছু ইতিবাচক অগ্রগতি শেয়ার করেন। তিনি র‌্যাবের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং রাশেদ চৌধুরীকে হস্তান্তরের আহŸান পুনর্ব্যক্ত করেন। নুল্যান্ড বাংলাদেশ সরকারের এই বছরের মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পর্যালোচনার ঘোষণাকে স্বাগত জানান। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বর্ধিত বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য শ্রম খাতের সংস্কারের সাথে অব্যাহত অগ্রগতির গুরুত্বের উপর জোর দেন। উভয়পক্ষ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে ক্রমবর্ধমান এবং প্রাণবন্ত ব্যবসায়িক সহযোগিতায় সন্তোষ প্রকাশ করেন। তারা বাংলাদেশে মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্টদের ব্যবসায়িক ব্যস্ততা বাড়াতে সাইবার নিরাপত্তা এবং ডেটা সুরক্ষায় আরো ঘনিষ্ঠভাবে কাজ চালিয়ে যেতে সম্মত হন। নুল্যান্ড মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অসাধারণ উদারতার প্রশংসা করেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত মানবিক সহায়তার আশ্বাস দেন। পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন রোহিঙ্গাদের জন্য তহবিলের সর্বশেষ পরিস্থিতি এবং সীমিত সংখ্যক রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে গৃহীত নতুন পাইলট প্রকল্প সম্পর্কে অবহিত করেন। উভয়পক্ষই সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কিছু রোহিঙ্গার পুনর্বাসন কার্যক্রমকে আরো বাড়াতে সম্মত হন। উভয়পক্ষ জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত বিষয়ে তাদের মতামত বিনিময় এবং এ বিষয়ে সহযোগিতার ক্ষেত্র স¤প্রসারণ বিষয়ে বিস্তৃত আলোচনা করেন।

https://dailyinqilab.com/national/article/572328