৩ মে ২০২৩, বুধবার, ৮:৫৩

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে হবে -সম্পাদক পরিষদ

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানিয়েছে সম্পাদক পরিষদ। এ ছাড়া স্বাধীন ও মুক্ত সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে যেসব আইন প্রক্রিয়াধীন আছে, সেই প্রক্রিয়া এখনই স্থগিত করার দাবি জানিয়েছে সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সংগঠনটি।

বিশ্বমুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সকল প্রকার মানবাধিকারের চালিকাশক্তি’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এ দাবি জানান তারা। সভাপতির বক্তব্যে সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, ২০১৮ সালে আইন প্রণয়নের সময় বলা হয়েছিল এগুলো সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবহার হবে না। কিন্তু পাঁচ বছর পর আমরা দেখতে পাচ্ছি, এ আইন প্রয়োগ হচ্ছে স্বাধীন সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে। এ সময় তিনি চারটি দাবি জানান। দাবিগুলো হচ্ছে- ১. স্বাধীন ও মুক্ত সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে যেসব আইন প্রক্রিয়াধীন আছে, সেই প্রক্রিয়া এখনই স্থগিত করা। আইনগুলোর মধ্যে যেসব ধারা স্বাধীন সাংবাদিকতাকে ব্যাহত করতে পারে, সেগুলো আইন থেকে বাদ দেয়া। ২. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে হবে। আর যদি তা বাতিলে সরকারের কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকে, তাহলে এমন একটি ধারা যুক্ত করতে হবে, যেখানে বলা থাকবে, এই আইন গণমাধ্যম, স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য প্রযোজ্য নয়। সাংবাদিকতার কারণে আজ পর্যন্ত যেসব মামলা করা হয়েছে, সেগুলো প্রত্যাহার ও গ্রেফতার সাংবাদিকদের মুক্তি দিতে হবে। ৩. যে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে, সেটি সরকার উদ্যোগী হয়ে যেন একেবারেই মুছে ফেলে। ৪. সাংবাদিকতার সুরক্ষার জন্য আইন হতে পারে, যা সংবিধানের চেতনার মধ্যে রয়েছে।

সভায় অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পর্যালোচনা ও সংশোধন দরকার। অবিলম্বে কোন কোন জায়গায় সংশোধন লাগবে সেগুলো করে ফেলা দরকার। এটা ঝুলিয়ে রাখা ঠিক না। নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নুরুল কবীর বলেন, যারা মুক্তভাবে মতপ্রকাশ করতে চায় ও স্বচ্ছভাবে দেশের অসঙ্গতিগুলো পত্রিকায় তুলে ধরতে চায় তারাই এর (ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন) ভিকটিম। একদলীয় শাসনব্যবস্থার মধ্যে ভিন্ন মত পোষণ করা যায় না। অনুনয়-বিনয় করে কোনো লাভ নেই। আমরা সরকারের সাথে বহুবার কথা বলেছি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে, কিন্তু কিছুই বদলায়নি। এ আইন হয়েছে।

ইত্তেফাকের সম্পাদক তাসমিমা হোসেন বলেন, আমার এখন কথা বলতে ভয় লাগে। কারণ মিস ইন্টারপ্রেট (ভুল ব্যাখ্যা) হতে পারে। তিনি বলেন, সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ আজ নতুন কিছু না। যুগে যুগে সব শাসকই সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ করে এসেছেন। বিভিন্ন সময় ইত্তেফাক পত্রিকাও বন্ধ করা হয়েছিল। সবসময় যারা রাষ্ট্র চালায় বা যাদের দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালিত হয় তাদের দ্বারাই কণ্ঠরোধ করা হয়। আমরা বাঙালিরা সবসময়ই সংগ্রাম করেছি, করে যাচ্ছি।

বিএফইউজের সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, বড় বড় দেশে যখন কোনো আইন হয় তখন ছোট দেশগুলোতে সেটার কপি হয়। কতিপয়ের কাছে অধিকাংশ গণমাধ্যমের নিয়ন্ত্রণ। তেমনি নানা ধরনের আইন ও বিধিনিষেধ মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্ত করছে। সত্যের পক্ষে যখন সাংবাদিকরা দাঁড়াবে তখন পৃথিবীও সাংবাদিকদের পক্ষে দাঁড়াবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৮৩ শতাংশ ভুক্তভোগী হচ্ছে নারীরা। আর ২৭ শতাংশ ভুক্তভোগী হচ্ছে সাংবাদিকরা। তিনি আরো বলেন, শুধু আইনের দোহাই দিলেই হবে না। এখন পেশাদার সম্পাদক আর মালিক সম্পাদকের মধ্যে বিভেদ তৈরি হয়েছে। কে পেশাগত কাজ করছে আর কে মালিকের স্বার্থের জন্য কাজ করছে সেটাও বুঝতে হবে।

সমকালের সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জু বলেন, আমরা যারা সাংবাদিকতায় কাজ করছি আমরা জানি কী অবস্থায় কাজ করছি। সাংবাদিকতা পেশাই আজ বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। পেশাটাকে রক্ষা করার জন্য একত্রিত হয়ে কাজ করতে হবে। পাকিস্তান আমলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য আমাদের লড়াই করতে হয়েছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও আমাদের সেই লড়াই করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, সরকার অনেক সময় বলে এ সময়ে সবচেয়ে বেশি স্বাধীনতা আছে। শহর ও গ্রাম থেকে হাজার হাজার পত্রিকা বের হচ্ছে। সংখ্যা যদি সংবাদপত্রের স্বাধীনতার মানদণ্ড হতো তাহলে পঙ্গপাল হতো সবচেয়ে শক্তিশালী প্রাণী। সংখ্যা দিয়ে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নির্ধারণ করা ভুল।

ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ বলেন, এখন সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। সরকারের মধ্যেও এই আইন নিয়ে অস্বস্তি আছে। তারা বলছে এটি সংশোধন করবে, কিন্তু করছে না।

সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ সঞ্চালনায় সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক, দেশ রূপান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোস্তফা মামুন প্রমুখ।


https://www.dailynayadiganta.com/first-page/745051