২৮ এপ্রিল ২০২৩, শুক্রবার, ৮:১৭

পাইপলাইনে বড় লিকেজ রূপগঞ্জে গ্যাস বন্ধ

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। সিটি গ্রুপের কারখানার সামনে গ্যাসের পাইপলাইনে বড় ধরনের লিকেজের ঘটনায় তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানি লিমিটেড এই ব্যবস্থা নিয়েছে। এতে গ্যাসসংকটে এসব এলাকার সব শিল্প-কারখানা বন্ধ রয়েছে। দুর্ভোগ পোহাচ্ছে উপজেলার আবাসিক গ্রাহকরাও।

তিতাস সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার রাতে এই লিকেজ দেখা দেয়। গতকাল সকালে পাইপলাইনে লিকেজটি শনাক্ত করে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করা হয়। মেরামতের জন্য সকাল থেকে তিতাসের কর্মীরা কাজ করছেন। রূপগঞ্জে বিপুলসংখ্যক শিল্প-কারখানা থাকায় রাতের মধ্যে পাইপলাইন মেরামতের কাজ শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছে।

রূপগঞ্জে গ্যাস বিতরণের দায়িত্বে রয়েছে তিতাসের সোনারগাঁ আঞ্চলিক অফিস। এই অফিসে কর্মরত তিতাসের মেকানিক খইয়াম ব্যাপারী লিকেজ বন্ধে কাজ করছেন। গতকাল সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘বড় ধরনের লিকেজ হওয়ায় সকাল থেকে চেষ্টা চালিয়েও এখনো লিকেজ বন্ধ করা যায়নি। দুর্ঘটনা এড়াতে রূপগঞ্জে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। যতক্ষণ মেরামতকাজ শেষ না হবে, ততক্ষণ গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে।’

তিনি বলেন, ‘১২ ফুট নিচে পাইপলাইনে লিকেজ হওয়ায় ভেকু মেশিনের মাধ্যমে মাটি খনন করা হচ্ছে। বৃষ্টির কারণে খনন করা জায়গায় পানি জমে কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। তবে এই এলাকায় শিল্প-কারখানা থাকায় আমরা রাতের মধ্যেই পাইপলাইন মেরামতকাজ শেষ করার সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।’

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, তিতাস গ্যাসের আট ইঞ্চি ব্যাসের পাইপলাইন লিকেজ হয়ে বিকট শব্দে গ্যাস বেরোচ্ছিল। এতে আশপাশের এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে তিতাসের কর্মীরা পার্শ্ববর্তী গ্যাসের ডিআরএস (গ্যাসের নিয়ন্ত্রণ স্টেশন) থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেন।

তিতাস গ্যাসের আবাসিক গ্রাহক আতাউর রহমান সানি বলেন, হঠাৎ করে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ায় আবাসিকের গ্রাহকরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত গ্যাস না থাকায় রান্না বন্ধ ছিল। অনেকে বিকল্প জ্বালানি দিয়ে রান্নার কাজ করেছেন, আবার অনেকে শুকনা খাবার খাচ্ছেন।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রাজধানী ঢাকা ও আশপাশে জালের মতো ছড়িয়ে থাকা গ্যাস পাইপলাইনের ৬০ শতাংশেরই মেয়াদ পেরিয়ে গেছে। চার-পাঁচ দশক আগে অর্থাৎ প্রতিষ্ঠার পর থেকে যেসব পাইপলাইন দিয়ে গ্যাস বিতরণ শুরু হয়েছে, সেই পাইপলাইনেই এখনো বিতরণ চলছে। এ জন্য তিতাসের বিভিন্ন বিতরণ এলাকার মাটির নিচ থেকে প্রায়ই গ্যাস বের হতে দেখা যাচ্ছে। এ ধরনের গ্যাস থেকে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। এর আগেও গ্যাসলাইন লিকেজ থেকে একাধিক বড় ধরনের বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।

বিস্ফোরক অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গেল পাঁচ বছরে তিতাসের আওতাধীন এলাকায় গ্যাস পাইপলাইনজনিত ১৪ দুর্ঘটনায় ৫৮ জনের জীবন গেছে। আহত শতাধিক মানুষ।

গত সোমবার রাতে চাহিদার চেয়ে বেশি গ্যাস সরবরাহ কারার কারণে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় লিকেজ থেকে গ্যাসের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। এতে বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। রাতেই তিতাস কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলেও এখনো ভয় কাটেনি রাজধানীবাসীর।

 

https://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2023/04/28/1274936