২১ এপ্রিল ২০২৩, শুক্রবার, ৩:০৯

দুশ্চিন্তা নিয়েই ঈদ করতে যাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা

দুয়ারে কড়া নাড়ছে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। খুশির এ উৎসবের আগেও দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের। অনেক বিনিয়োগকারী দিনের পর দিন তাদের শেয়ার বিক্রি করতে পারছেন না। সন্তানের জন্য কষ্টে পোশাক কিনতে পারলেও ঈদের সার্বিক খরচ জোগাড় করা নিয়েই শঙ্কায় তারা। ঈদের আগে গতকালই ছিল শেয়ারবাজারের শেষ কার্যদিবস। তাই দুশ্চিন্তা নিয়েই ঈদ করতে যেতে হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের।
শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের শেয়ার মাসের পর মাস বিক্রির চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। এমন একটি কোম্পানি বে-লিজিং। এক বছরের বেশি সময় ধরে কোম্পানিটির শেয়ার কিনে টাকা আটকে গেছে বিনিয়োগকারীদের। বিনিয়োগকারীরা বলছেন, গত বছরের জুনে বে-লিজিংয়ের শেয়ার কিনি। এরপর আর বিক্রি করতে পারিনি। লোকসানে ছয় মাস ধরে প্রতিদিন শেয়ার বিক্রির চেষ্টা করছি। কিন্তু ক্রেতা পাচ্ছি না। একই অবস্থা ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর। সব টাকা শেয়ারবাজারে আটকে গেছে। এ অবস্থায় ঈদের আনন্দ করবো কীভাবে? তারা বলেন, অনেক কষ্ট করে ছেলে-মেয়ের জন্য ঈদের পোশাক কিনেছি। কিন্তু সামনে ঈদের অনেক খরচ বাকি। এসব খরচের টাকা কোথা থেকে জোগাড় করবো সব সময় সেই চিন্তা করি। প্রতিদিন শেয়ার বিক্রির চেষ্টা করছি। কিন্তু বিক্রি করতে পারছি না।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ১০ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত বে-লিজিংয়ের একটি শেয়ারও লেনদেন হয়নি। ৬ এপ্রিল মাত্র ৩০টি শেয়ার লেনদেন হয়। এরপর ৯ এপ্রিল একটি, ১১ এপ্রিল ৬১টি এবং ১৬ এপ্রিল ৩০০টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। অথচ প্রতিদিন লেনদেন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দিনের সর্বনি¤œ দামে কোম্পানিটির কয়েক লাখ শেয়ারের বিক্রির আদেশ আসছে। বে-লিজিংয়ের মতো অবস্থা ভালো মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো। প্রায় এক বছর ধরে কোম্পানিটির শেয়ার বিক্রি করতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা। প্রতিদিন লেনদেনের শুরুতেই দিনের সর্বনি¤œ দামে কোম্পানিটির বিপুল শেয়ার বিক্রির আদেশ আসছে। বিপরীতে বিক্রি হচ্ছে খুবই কম সংখ্যক শেয়ার। শুধু ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বা বে-লিজিং নয়, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের বর্তমানে এমন অবস্থা বিরাজ করছে। এখন লেনদেন হচ্ছে হাতেগোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার। বাকিগুলো দিনের পর দিন বিক্রির চেষ্টা করে ব্যর্থ হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।

আশাদুল ইসলাম নামে এক বিনিয়োগকারী জানান, পরপর দুই বছর লভ্যাংশ দেওয়ায় ট্রাস্ট ব্যাংক ফাস্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড কিনি। কিন্তু এক বছর হতে চলছে এই মিউচ্যুয়াল ফান্ড বিক্রি করতে পারছি না। প্রতিদিন লেনদেনের শুরুতেই দিনের সর্বনি¤œ দামে ফান্ডটির কয়েক লাখ ইউনিট বিক্রির আদেশ আসছে, কিন্তু দুই হাজার ইউনিটও বিক্রি হচ্ছে না। আমার পোর্টফোলিতেও ছয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটিই ফ্লোর প্রাইসে আটকে রয়েছে। ঈদের খরচ জোগাড় করার জন্য প্রায় এক মাস ধরে লেনদেনের শুরুতেই এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বিক্রির চেষ্টা করছি। কিন্তু ক্রেতা মিলছে না। শেয়ারবাজার নিয়ে চিন্তা করতে করতে দিন দিন মানসিক রোগী হয়ে যাচ্ছি।

আরেক বিনিয়োগকারী আরিফুর রহমান বলেন, ঈদের আগে শেয়ারবাজার ভালো হবে এ প্রত্যাশায় ছিলাম। কিন্তু দিন যত গেছে বাজারের পরিস্থিতি যেন ততই খারাপ হয়েছে। বিনিয়োগ করে যেসব টাকা আটকে গেছে, সেই টাকা কবে ফ্রি করতে পারবো তা আল্লাহ ভালো জানেন।

শেয়ারবাজারের বর্তমান চিত্র সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক মো. শাকিল রিজভী জানান, রোজার ভিতরে শেয়ার বিক্রির একটা চাপ থাকে। কিছু বিনিয়োগকারী আছেন শেয়ার বিক্রি করে ঈদের খরচ মেটান। এ কারণে সম্প্রতি শেয়ারবাজারে বিক্রির একটা চাপ ছিল। এতে বাজারে নেতিবাচক প্রবণতা দেখা যায়। আমাদের ধারণা সামনে শেয়ারবাজারের পরিস্থিতি ভালো হবে।

এদিকে মার্জিন ঋণের শর্তে পরিবর্তন এনেছে শেয়ারবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। শর্তসাপেক্ষে ৫০ মূল্য-আয় অনুপাত (পাই) পর্যন্ত শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে মার্জিন ঋণ নিতে পারবেন বিনিয়োগকারীরা। গতকাল মঙ্গলবার বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম সই করা এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এ নির্দেশনা অনুসারে, টানা তিন বছর ধরে ‘এ’ গ্রুপে অবস্থান করা যেসব কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৫০ কোটি টাকা বা তার বেশি, সেসব কোম্পানির শেয়ারে মার্জিন ঋণ দেওয়া যাবে। এ ধরনের শেয়ারকে মার্জিনেবল শেয়ার হিসেবে বিবেচনা করতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জকে (সিএসই) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এসব কোম্পানি ছাড়া অন্য সব কোম্পানির শেয়ার আগের মতোই ৪০ পিই পর্যন্ত মার্জিন ঋণ পাওয়ার যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবে।

এদিকে গতকাল ঈদের আগে শেষ কার্যদিবসে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সবকটি মূল্যসূচক বেড়েছে। সেইসঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। পাশাপাশি দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠান। এর মাধ্যমে ঈদের আগে টানা পাঁচ কার্যদিবস মূল্যসূচক বাড়লো। তবে ঈদের আগে শেষ কার্যদিবসে নতুন করে ফ্লোর প্রাইসে এসেছে ৪টি প্রতিষ্ঠান। এতে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৯২ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকে। এমন বিপুল পরিমাণ প্রতিষ্ঠান ক্রেতা সংকটে পড়ার দিনে ডিএসইতে ৭২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখাতে পেরেছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৪৪টির এবং ১৯৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখানো ৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম দিনের সর্বোচ্চ পরিমাণ বেড়েছে। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৫ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ২২৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে। এর মাধ্যমে টানা পাঁচ কার্যদিবস ডিএসইর প্রধান সূচক বাড়লো। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় দশমিক ৮১ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৩৪৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় দশমিক ৭৮ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ২০২ পয়েন্টে অবস্থান করছে। অন্যদিকে, দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৫৫৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৪৪৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন বেড়েছে ১১৪ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। অপর শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ১২ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন অংশ নেওয়া ১১৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৬টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৬টির এবং ৫৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৫ কোটি ৭১ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।

https://dailysangram.com/post/522714